খেলাধুলা

‘নেতৃত্ব উপভোগের চেয়ে বেশি দায়িত্বের’

তিনি এর আগেও ছিলেন। ২০০৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে শুরু করে ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ে সফর পর্যন্ত টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। ৬ বছর পর আবারও টেস্ট অধিনায়কত্ব ফিরে পেলেন।

Advertisement

রোববার বিসিবি পরিচালক পর্ষদের সভায় মুশফিকুর রহীমকে বদলে আবার নেতৃত্ব ফিরিয়ে দেয়া হলো সাকিবকে। ছয় বছর আগে সাকিবের কাছ থেকে নিয়েই মুশফিককে অধিনায়ক করা হয়েছিল।

সব ফরম্যাটে তিনি সন্দেহাতীতভাবেই বাংলাদেশের সেরা পারফরমার। দীর্ঘদিন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের তকমা তার গায়ে। মাশরাফি, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজকে ক্রিকেট বিশ্ব এক নামে চিনলেও সাকিব আল হাসানের পরিচয় অন্যরকম।

ক্রিকেট বিশ্বে সাকিব এখন রীতিমত এক ব্র্যান্ড। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের এক নম্বর ক্রিকেট দূতও এ বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার। তার কাঁধেই এখন বাংলাদেশের টেস্টে অধিনায়কের ব্যাজ। আবার অধিনায়কত্ব ফিরে পেয়ে অনুভুতি কেমন সাকিবের?

Advertisement

৬ বছর পর আবার ক্যাপ্টেন হয়ে কী ভাবছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার? গতকাল সন্ধ্যায় বিসিবি পরিচালক পর্ষদের সভা শেষে অধিনায়ক হিসেবে তার নাম প্রস্তাবের পর থেকেই সাকিবকে টেলিফোনে ধরার চেষ্টা মিডিয়ার; কিন্তু রোববার সাকিব কোন সাংবাদিকেরই ফোন ধরেননি।

অবশেষে আজ বিকেলে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে লাগোয়া বিসিবি একাডেমি মাঠে ঢাকা ডায়নামাইটসের প্র্যাকটিসে দেখা মিললো সাকিবের। সেখানেই উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বললেন। তবে সেটা বাংলাদেশের নতুন টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নয়।

আসলে সাকিবের আজকের কথোপকোথনটা মূলতঃ ঢাকা ডায়নামাইটস অধিনায়ক হিসেবে। কারণ রাত পোহালেই যে বিপিএলের ফাইনাল! সাকিবের দল আগেভাগেই ফাইনাল নিশ্চিত করে বসে আছে।

তবুও কথা এসে গেলো নতুন টেস্ট নেতৃত্ব পাওয়া সম্পর্কে। আসুন শোনা যাক সাকিব আল হাসানের সে কথোপকোথন...

Advertisement

প্রশ্ন : নতুন করে নেতৃত্ব ফিরে পাবার অনুভুতি কি?

সাকিব : নতুন দায়িত্ব। টেস্টে গত কিছুদিন আমরা ভালোই করেছি। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জিতলাম, অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের সঙ্গে জিতলাম এখানে (ঘরের মাটিতে)। এই জায়গা থেকে কতটা ভালো করা যায়, সেই চেষ্টাই থাকবে।

প্রশ্ন : প্রথমবারের নেতৃত্ব থেকে এবারের অধিনায়কত্ব কতটা বদলাবে?

সাকিব : বলা মুশকিল, কতটা পরিবর্তন আসবে। তবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন : আগেরবারের অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতার কথা কিছু বলুন?

সাকিব : আমার তো ওটা মনেই নাই, কি হয়েছিল?

প্রশ্ন : আপনাকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সে সম্পর্কে কোন মন্তব্য?

সাকিব : সবই তো ঠিক আছে। জীবনে কত কিছুই হয়!

প্রশ্ন : এবারের চ্যালেঞ্জ কি?

সাকিব : জানি না তো! এখন আপাতত বিপিএল চ্যালেঞ্জ নিয়ে আছি। বিপিএল শেষ হোক, জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হলে দেখা যাবে। কী কী চ্যালেঞ্জ আছে। যখন পরিকল্পনা করা হবে, তখন বোঝা যাবে।

প্রশ্ন : সামনে বাইরে সিরিজ বেশি, সে সব নিয়ে কোন মন্তব্য?

সাকিব : প্রতিটি টুর্নামেন্ট বা সিরিজই কঠিন। সেটা দেশে হোক, কিংবা বাইরে। হয়ত দেশে একটু স্বস্তিবোধ করি আমরা। বিদেশে যেহেতু সাফল্য নেই, সেহেতু আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। একই সঙ্গে এটাও সুযোগ, ভালো কিছু করার। কোনো না কোনো কিছু তো, কেউ না কেউ শুরু করবে। যদি শুরু হয়, তাহলে খারাপ কী! যদিও কাজটা কঠিন; কিন্তু আমাদের যে দল আছে, আমরা যেভাবে খেলছি, তা দিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব।

প্রশ্ন : ২০১১ আর ২০১৭ পার্থক্য কি?

সাকিব : সেটা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন।

প্রশ্ন : ছয় মাসের ছুটি নেয়ার বিষয়ে কিছু বলবেন?

সাকিব : দেখা যাক, কি হয়!

প্রশ্ন : হাথুরুসিহে অনেক কথা বলে গেছেন, তা নিয়ে আপনি কিছু বলতে চান?

সাকিব : না। একেকজনের ব্যক্তিগত কথা। এটা নিয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে না।

প্রশ্ন : আপনার নতুন ডেপুটি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সম্পর্কে কিছু বলুন?

সাকিব : আমরা বেশ কয়েকজনই আছি, যারা দলের নেতা। এবং যে কোনো সিদ্ধান্তই আমরা একসঙ্গে মিলেই নিই। কেউ অধিনায়ক থাক বা না থাক, সেটা ব্যাপার নয়। যখন আমরা মাঠে খেলতে নামি, সবার সাহায্যই দরকার হবে। আর রিয়াদ ভাই তো কয়েক বছর ধরেই বিপিএলে ভালো অধিনায়কত্ব করছেন। নেতৃত্বগুণ তার ভেতর অনেক আগে থেকেই আছে। আমার কাছে মনে হয়, আমার জন্য কাজটি সহজ হবে।

প্রশ্ন : আগেরবারের নেতৃত্বের সময় ছিল ওয়ান ম্যান শো। এখন দলে অনেক পারফরমার...।

সাকিব : অবশ্যই কাজটা সহজ হবে। এখন বেশির ভাগ ক্রিকেটাররাই প্রায় সবসময় পারফর্ম করছে। ক্রিকেটাররা যখন পারফর্ম করে, অধিনায়কের ও রকম কোনো কাজই থাকবে না। আশা করি, সবাই মিলে ভালো করবে। সবাই মিলে ভালো করলেই দল ভালো করবে।

প্রশ্ন : হাথুরু বলেছিলেন, আপনার ছুটি মানতে পারেননি। আর আপনি দুটির বেশি লিগ খেলতে পারবেন না- এসব নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

সাকিব : কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।

প্রশ্ন : টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে কিছু বলুন?

সাকিব : ভবিষ্যত আমার জন্য অনুমান করা কষ্ট। যেটা সামনে আছে সেটা নিয়েই চিন্তা করতে পারি। কী করলে কী হবে, অত বেশি চিন্তা করার সময় নেই।

প্রশ্ন : অধিনায়কত্ব ফিরে পাওয়াটা প্রত্যাশিত ছিল কি না?

সাকিব : আমি কোনো কিছু প্রত্যাশা করি না। কিছু ছেড়েও দেই না। আসলে ভালো, না আসলে ঠিক আছে।

প্রশ্ন : জাতীয় দলের নেতৃত্ব কতটা উপভোগ করেন?

সাকিব : উপভোগের চেয়ে বেশি আমার কাছে মনে হয় এটা দায়িত্ব। দায়িত্বটি অবশ্যই চেষ্টা থাকবে সেরাভাবে যেন পালন করতে পারি।

এআরবি/আইএইচএস