বিশেষ প্রতিবেদন

ফেসবুকে আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে নগ্ন ভিডিও-ছবি

রাজধানীর কলাবাগানের বাসিন্দা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ইফতেখার আহমেদ অফিস শেষে বাসায় ফিরে জামাকাপড় বদলে ফ্রেশ হয়ে রিলাক্সমুডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক খুলে বসলেন। সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় দেশে-বিদেশে অবস্থানরত ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের খোঁজ নিতে পারেন না। তাই অফিস থেকে ফিরে নিয়মিত ফেসবুকিং করেন। ফেসবুকিংয়ের সময় তার পাশে এসে বসলো তার আট বছরের স্কুলপড়ুয়া মেয়ে।

Advertisement

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ইফতেখার আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে নগ্ন ভিডিও ও ছবি স্ক্রিনে ভেসে উঠলো। মেয়ের সামনে এহেন দৃশ্যে দেখে দ্রুত বন্ধ করতে গেলাম। কিন্তু বন্ধ না হয়ে বরং তা চালু হয়ে যায়। কী যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলাম তা ভাষায় বর্ণনা করতে পারবো না। একেবারে শরীর দিয়ে ঘাম উঠছিল।

তিনি জানতে চাইলেন, সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমে নগ্ন ভিডিও ও ছবি নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা আছে কি-না? এমন প্রশ্ন শুধু ইফতেখার আহমেদের একারই নয়, দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারী হাজার হাজার মানুষের। তাদের সবারই অভিযোগ- ফেসবুকে নগ্ন ভিডিও ও ছবি আপলোডের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। বিভিন্ন অনলাইন এজেন্সির নামে কুরুচিপূর্ণ এসব ভিডিও ও ছবি আপলোড করা হচ্ছে। অনলাইন সাইট হিট বাড়ানোর জন্য এসব অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। আর এসব নগ্ন ভিডিও ও ছবির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তরুণ-তরুণীরা উচ্ছনে যাচ্ছে। যখন-তখন ফেসবুকে নগ্ন ভিডিও এসে পড়ায় অনেকেই ছোট শিশুদের সামনে বিব্রত হতে হয়।

বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় আট কোটি। তাদের মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিষিদ্ধ এসব ভিডিও ও ছবির প্রতি তরুণ-তরুণীরাই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

Advertisement

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক বলেন, ইদানীং আবার ফেসবুকে সমকামীদের নানা অশ্লীল অঙ্গ-ভঙ্গির ছবি দেদারসে পোস্ট করা হচ্ছে। সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এহেন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। অবিলম্বে নগ্ন ভিডিও ও ছবি পোস্টকারীদের শাস্তির আওতায় না আনা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চরম হুমকির কবলে পড়বে বলে ওই অভিভাবক আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

এসব আপত্তিকর পোস্ট নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাজাহান মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, শিশুদের সাইবার সিকিউরিটি দিতে বিটিআরসি সবসময় সোচ্চার। শিশুদের জন্যে ক্ষতিকর কোনো পর্নোসাইট সম্পর্কে আমাদের কাছে অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেটি বন্ধ করে দেই। ফেসবুকে এমনটি ঘটলে একটু সময় লাগে। এক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা সময় চায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। কোনো আপত্তিকর অ্যাকাউন্ট বন্ধে বিটিআরসির অনুরোধ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেটি বন্ধ করে দেয়। এমন অভিযোগে আমরা অনেক অ্যাকাউন্ট বন্ধের ব্যবস্থা করেছি।

পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ফেসবুকে এ ধরনের আপত্তিকর পোস্ট সাধারণত স্পন্সরড আকারে আসে। অর্থাৎ যারা এসব আপত্তিকর ভিডিও এবং ছবি ছাড়ে তারা এর প্রসারের জন্য ফেসবুককে ডলারে পেমেন্ট করে। ফেসবুক তাদের জন্য বিজ্ঞাপনের কাজ করে। এ ধরনের স্পন্সর অ্যাড পুলিশের পক্ষে কন্ট্রোল করার সুযোগ নেই। তবে আমাদের কাছে যদি আপত্তিকর এসব পোস্টের প্রভাব-সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আসে আমরা সেসব পোস্ট ও ওয়েবসাইটের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ফেসবুককে জানাতে পারবো।

বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, রাজধানীর স্কুলগামী শিশুদের প্রায় ৭৭ শতাংশ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। এসব শিশুর পর্নোগ্রাফি এবং ফেসবুকের আপত্তিকর পোস্ট থেকে দূরে রাখার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নেহাল করিম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সন্তান থেকে এসব জিনিস যতই দূরে রাখবো সেগুলোর প্রতি তাদের আকর্ষণ বাড়বেই। তারা বাবা-মা থেকে লুকিয়ে এগুলো দেখবেই। ভালো হয় যদি আমরা এগুলো সম্পর্কে সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করি। তাদের ভালোমন্দ শিখিয়ে দেই। এ ধরনের কনটেন্ট ফেসবুকে সবসময়ই আসবেই। যদি সন্তানকে ভালোমন্দ শিখিয়ে দেই তবে এ ধরনের কনটেন্ট সন্তানের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।

Advertisement

এমইউ/আরএম/এআর/বিএ/আইআই