বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বেতারে অনুষ্ঠান নির্মাণ, বাজেট বরাদ্দ, প্রচার, উপস্থাপনা ও সম্মানী দেয়ার ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন শিল্পীরা।
Advertisement
রোববার সচিবালয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন-বেতার শিল্পী সংস্থা’র নেতারা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে বৈঠকে এ অভিযোগ করেন। বৈঠকে শিল্পী সংস্থার সভাপতি নাট্যকার ও অভিনেতা ইনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আজম বাশার উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে সাইফুল আজম বাশার বলেন, স্বেচ্ছাচারী মনোভাব, স্বজনপ্রীতি ও খামখেয়ালীপনার কারণে শিল্পীরা ন্যায্যপাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবস্থা খুবই শোচনীয়।
‘নীতিমালা না মেনে একই ধরন ও সময়কালের অনুষ্ঠানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দেয়া হয়।’
Advertisement
কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত পছন্দে বিটিভির তালিকাভুক্ত নয় এমন শিল্পীদের অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ্ঞাবহ অনভিজ্ঞ উপস্থাপক দিয়ে বিটিভিতে হর-হামেশাই অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ বেতারের বিশেষ শ্রেণিভুক্ত নাট্য শিল্পীদের অবমূল্যায়ন করে সবাইকে ‘ক’-শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেড নামিয়ে দিয়ে অসম্মান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠান পুনঃপ্রচারের ক্ষেত্রে মান নয় পছন্দের লোকদের প্রাধান্য দেয়া হয় অভিযোগ করে সাধারণ সম্পাদক বলেন, সম্মানী বাড়ানো হলেও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে সে সুফল পাচ্ছেন না শিল্পীরা। আগে পুরো অনুষ্ঠানের সময়ের ওপর ভিত্তি করে সম্মানী নির্ধারণ করা হলেও এখন শুধু পর্দায় উপস্থিতির সময়টুকুর জন্য সম্মানী নির্ধারণ করা হয়।
যাচাই-বাছাই না করে পছন্দমতো নাট্যকারদের স্ক্রিপ্ট নিয়ে নাটক তৈরি করা হচ্ছে। প্রিভিউ কমিটি অকার্যকর। আগে একজন নাট্যকারের নাটক সর্বোচ্চ ১৩ পর্ব পর্যন্ত প্রচারিত হত, বিশেষ ক্ষেত্রে ২৬ পর্ব পর্যন্ত অনুমোদনের ব্যবস্থা ছিল। এখন এসব নীতিমালা মানা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
Advertisement
বিটিভি ও বেতারে শুধু গীতিকারদের রয়্যালটির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সুরকারও সমভাবে রয়্যালটি পাওয়ার যোগ্য। পুনঃপ্রচারের ক্ষেত্রে কোনো দিন রয়্যালটি দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ শিল্পীদের।
বাংলাদেশ বেতারের একজন বিশেষ শ্রেণির সঙ্গীত শিল্পী আশির দশকে শুরুতে ৩০০ টাকার মতো সম্মানী পেতেন। সেটি এখন হয়েছে দুই হাজার টাকা। ওই সময়ে একজন সচিবের বেতন বিভিন্ন ভাতাসহ ছিল দুই হাজার টাকা। যেটি বৃদ্ধি পেয়ে এখন সোয়া লাখ টাকা হয়েছে বলে জানান এক শিল্পী।
ভারতের মতো বাংলাদেশে শিল্পীদের বিশেষভাবে নির্বাচন করে গৃহায়ণের ব্যবস্থা ও আর্থিক প্রণোদনা দেয়ারও প্রস্তাব দেন শিল্পীরা।
স্পন্সরশিপের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ যাতে রবীন্দ্র ও নজরুল সঙ্গীত, বেসিক বাংলা, লোকগান, যাত্রা-পালা, নাটক, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, ঐতিহ্যবাহী নাচ, উচ্চাঙ্গ নৃত্যসহ সব দেশিয় সংস্কৃতি বিষয়গুলো জন্য ব্যয় হয় এ বিষয়ে সব চ্যানেল ও স্পন্সরদের নির্দেশনা দেয়ারও প্রস্তাব দেয় শিল্পী সংস্থা। শিল্পী সংস্থার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একটি কমিটি গঠন করে সমস্যাগুলো সমাধানের প্রস্তাব দেন।
সমস্যাগুলোর বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অভিযোগের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করে সমাধান বের করা কঠিন কাজ নয়। এটা একটা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাস্তবায়নের ত্রুটি-বিচ্যুতি বা ক্ষমতার অপব্যবহার যেভাবেই বলেন আরকি।’
মন্ত্রী আরও বলেন, সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কমিটি গঠনের প্রস্তাব ইতিবাচক। কিভাবে কমিটি গঠন হবে, সেটা সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করব। এটাকে আমরা ঝুলিয়ে রাখব না।’
হাসানুল হক ইনু বলেন, গীতিকার ও সুরকারের রয়্যালটি নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা হচ্ছে, এটা আমাদের ব্যর্থতা। রয়্যালটির আইনটি ঠিক করা দরকার।
‘প্রধানমন্ত্রী সংবেদনশীলভাবে সম্মানী বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় এটা চূড়ান্ত করতে তিন বছর সময় নিয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক, এটা আমাদের আভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক ব্যর্থতা।’
শিল্পীদের সম্মানী অপ্রতুল উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সম্মানী বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে উত্থাপন করব। যে হারে বেড়েছে তা যথেষ্ট নয়।
বৈঠকে শিল্পী সংস্থার এস এম মহসিন, হাসান মতিউর রহমান, সুজিত মুস্তফা, এসডি রুবেল, শুভ্র দেবসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/এএইচ/আইআই