নতুন কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে জোরেসোরে। রিচার্ড পাইবাস ইন্টারভিউ দিয়ে গেছেন চার দিন আগেই। আজ বোর্ড কর্তাদের সামনে সাক্ষাতকার দিয়ে গেলেন ফিল সিমন্সও। ইংলিশ পাইবাস আর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান সিমন্স- দু’জনার কে হবেন মাশরাফি, মুশফিক, তামিম, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহদের কোচ? নাকি এ দু’জনার বাইরে অন্য কেউ হবেন নতুন প্রশিক্ষক? তা নিয়ে কৌতুহলের অন্ত নেই।
Advertisement
বিসিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তিন জনের শর্টলিস্ট করা আছে। সেখান থেকেই একজনকে বেছে নেয়া হবে। এই শর্টলিস্টের আরেক জন কে? তা নিয়েই আছে সংশয়। একবার শোনা যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার জিওফ মার্শের নাম। আবার কেউ কেউ বলছেন তিনি নন, অন্য কেউ।
আজ বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের সভায় কোচ নিয়ে কথা হওয়ার কথা। সেখানেই যে নতুন কোচ মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে, তা নয়। তবে খোলামেলা আলোচনা হবে। ক’জন পরিচালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শ্রীলঙ্কার সাথে হোম সিরিজ ও তিন জাতি টুর্নামেন্টের জন্য অন্তর্বতীকালীন কোচ নিয়োগের ঘোষণাও আজ আসতে পারে।
সেটা আসলেও তাতে কোনই চমক থাকবে না। কারণ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কালই জানিয়ে দিয়েছেন, অন্তর্বতীকালীন কোচ হিসেবে রিচার্ড হ্যালসল ও খালেদ মাহমুদ সুজনের নাম। তাদের মনের দিক থেকে প্রস্তুত থাকার কথাও বলে দিয়েছেন বিসিবি বিগ বস।
Advertisement
প্রশ্নটা অন্তর্বর্তীকালীন কোচ নিয়ে নয়। যত কথা হেড কোচ নিয়ে। সবার কৌতূহল, বিসিবি কেমন কোচ চায়? এবার কোচ নিয়োগের আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তিন ফরম্যাটে জাতীয় দলের অধিনায়ক, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহীম ও সাকিব আল হাসানের সাথে কথা বলেছেন। তাদের মতামত নিয়েছেন।
এই তিন অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও খোলামেলা আলোচনায় তারা কে কেমন কেমন কোচ চান, তা জানিয়েছেন। জানা গেছে, তিন ফরম্যাটের অধিনায়কই রিচার্ড পাইবাসকে হেড কোচ করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন। শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাই নন, বেশিরভাগ দেশের ক্রিকেটাররাই পাইবাসকে কোচ হিসেবে পছন্দ করেন না।
যদিও তার মেধা-প্রজ্ঞা নিয়ে তেমন নেতিবাচক কথা হয় না। সবাই তাকে থিওরিটিক্যালি একজন দক্ষ কোচ বলেই জানেন, মানেনও; কিন্তু অতিমাত্রায় কড়া মানসিকতাই তার মাইনাস পয়েন্ট। এ কারণে কোনো দেশের কোচ হিসেবে বেশিদিন কাজও করা সম্ভব হয়নি তার।
কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত একাধিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিচালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্রিকেটারদের পছন্দ নয় এবং একটু বেশি কড়াকড়ি করেন বলে পাইবাসকে তারা হেড কোচ নিয়োগে খানিক দ্বিধায় ভুগছেন। একদিকে রিচার্ড পাইবাস, অন্যদিকে ফিল সিমন্স। একাধিক বোর্ড পরিচালকের সাথে কথা বলে বোঝা গেলো, আসলে বিসিবি এ দু’জনার কারো বিষয়েই পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়।
Advertisement
কারণ দু’জনার দু’রকম পরিচয়। পাইবাসকে ধরা হয় ‘ইস্পাত মানব।’ আর ফিল সিমন্সের পরিচয় ‘তিনি ক্রিকেটারদের পক্ষের লোক।’ পাইবাস খুবই কঠিন মানসিকতার মানুষ। কোনরকম নমনীয়তা নেই। ক্রিকেটারদের কঠোর অনুশাসনে রাখাই তার প্রধান লক্ষ্য। এতটুকু ছাড় দেয়ার মানসিকতা নেই পাইবাসের। তিনি চান তার ছাত্ররা তাকে সেই রকম মান্য করবে। রীতিমত স্কুল ছাত্রদের মত সমীহ করবে।
কিন্তু দিন পাল্টেছে। এখন আর তেমন শক্ত কঠিন হৃদয়ের মানুষকে প্রশিক্ষক হিসেবে পছন্দ নয় ক্রিকেটারদের। জীবনের অনেক শাখা প্রশাখার মত এখন ক্রিকেট কোচিংয়েরও ধারা পাল্টেছে। এখন আর সেই ছেলে বেলার পাঠশালার পন্ডিত মশাই কিংবা স্কুল-কলেজের কঠোর টিচারের মত কোচ কেউ খোঁজেন না। সেটা ৬০, ৭০, ৮০ কিংবা ৯০-এর দশকে চলতো।
তখন কোচই ছিলেন সব। দিন পাল্টেছে। এখন ক্রিকেটে অধিনায়কই শেষ কথা। কোচের ভূমিকা এখন সামান্যই। জাতীয় দলে ঢোকার আগে ক্রিকেটাররা নানা বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলে খেলে পরিণত হয়ে ওঠেন। তাদের মৌলিক ও ব্যাকরণ শেখানোর কিছু নেই।
কোচের কাজ হচ্ছে দলকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলা। দলের ভিতরে একটা সুস্থ পরিবেশ তৈরি করা। সবাইকে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ রাখা এবং নানাভাবে ক্রিকেটারদের সেরাটা বের করে আনা। এখনকার প্রজন্মের ক্রিকেটারদের তাই কঠিন আর কঠোর অনুশাসনে রেখে বশ করা যায় না। তারা অনেক বেশি উদার মানসিকতার কোচকে পছন্দ করেন।
সেই ক্যাটাগরিতে ফিল সিমন্সই আদর্শ। যিনি নিজে দীর্ঘদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন। ক্রিকেটারদের শিরা-উপশিরা আর অস্থি-মজ্জার খবর তার নখোদর্পনে। ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দেয়ার ক্ষেত্রে তার জুড়ি মেলা ভার। বর্তমান কোচিংয়ের ধারাটাও তার ভালই জানা।
কিন্তু তারও একটা মাইনাস পয়েন্ট আছে। তিনিও ক্রিকেটারদের বেশি প্রাধান্য দেন। শোনা যায়, ফিল সিমন্সের অভিধানে নাকি ক্রিকেটাররাই শেষ কথা। তিনি সংশ্লিষ্ট বোর্ড, নীতি নির্ধারকদের চেয়ে নাকি ক্রিকেটারদেরকেই বড় করে দেখেন। কার প্রকৃতি কেমন? কাকে কিভাবে বশে আনতে হবে, কার সাথে হাস্য-কৌতুক করে আবার কাকে একটু কঠিন ভাষায় কথা বলে তার কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনা যায়- সে বিদ্যা সিমন্সের নাকি খুব ভাল জানা।
এমন কোচের অধীনে তাই ক্রিকেটাররা বেশি স্বাচ্ছন্দে খেলতে পারেন। তাই জানা গেছে বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেটারদের অধিক পছন্দ সিমন্স; কিন্তু ভিতরের খবর, বিসিবি কর্তাদের ঠিক এমন কোচও পছন্দ নয়। তারা চান মাঝামাঝি মানসিকতার কাউকে কোচ করতে। যিনি শুধুই ক্রিকেটারদের কথা বলবেন না। তাহলে ক্রিকেটারদের ওপর আর বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
বোর্ড চায় এমন একজনের ওপর দায়িত্ব দিতে, যিনি বোর্ডের মনোভাব বুঝে দল চালাবেন। তাতে দু’কুলই রক্ষা হবে। ক্রিকেটাররাও পাবেন তাদের পছন্দমত একজনকে। আর বিসিবিও চিরায়ত ধারার অনুসরণে এমন একজনকে চায় যার জীয়ন কাঠি থাকবে বোর্ডের হাতে।
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম