রাজধানীর দক্ষিণ এলাকায় অবস্থিত ৩৫ মন্ত্রণালয় থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স বা গৃহকর বাবদ ৬০ কোটি টাকা আদায়ে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। অনেক বছর ধরেই এসব মন্ত্রণালয় থেকে গৃহকর আদায়ে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) পুরাতন ট্যাক্স রেটে এসব মন্ত্রণালয়ের খেলাপি করের পরিমাণ ৬০ কোটি ৩১ লাখ ৮৬ হাজার ৯৭১ টাকা। এ ছাড়া হোল্ডিং ট্যাক্সে সমতা এনেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন, যার ফলে এর পরিমাণ আরও বাড়বে। সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় খাত হোল্ডিং ট্যাক্স বা গৃহকর। ফলে সঠিকভাবে তা আদায় করতে না পারায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ডিএসসিসি। সেই সঙ্গে নাগরিকদের সেবাদানে নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগের বকেয়ার তালিকা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৪৩৪টি হোল্ডিংয়ে ট্যাক্স বকেয়া ৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৭ হাজার ১২৫ টাকা। একইভাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের (বিদ্যুৎ বিভাগ) ৩২টি হোল্ডিংয়ে ৮২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯০ টাকা, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৪৬টি হোল্ডিংয়ে ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৫৬ টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২৮২টি হোল্ডিংয়ে ৬ কোটি ৫৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৩ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪৯টি হোল্ডিংয়ে ৫১ লাখ ৫ হাজার ৭৫৮ টাকা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ৩টি হোল্ডিংয়ে ৩৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮৮০ টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ৭টি হোল্ডিংয়ে ১২ লাখ ৭ হাজার ৪৪৪ টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৩০টি হোল্ডিংয়ে ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৩৭৭ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ৪৮টি হোল্ডিংয়ে ১১ কোটি ৭২ লাখ ১৮ হাজার ৬২৯ টাকা, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১০টি হোল্ডিংয়ে ১৮ লাখ ৪২ হাজার ৯১৪ টাকা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩টি হোল্ডিংয়ে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৩০ টাকা, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৫৫টি হোল্ডিংয়ে ১ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৭৮৩ টাকা, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৪টি হোল্ডিংয়ে ৪২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫৯ টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১১ হোল্ডিংয়ে ৯৯ লাখ ৩১ হাজার ৯১৫ টাকা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৫টি হোল্ডিংয়ে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৩ টাকা, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ২৪টি হোল্ডিংয়ে ৫৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭০ টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৬৯ হোল্ডিংয়ে ১ কোটি ৫ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৫ টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪টি হোল্ডিংয়ে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৮৬ টাকা বাকি রয়েছে।
Advertisement
এ ছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৫টি হোল্ডিংয়ে ৩০ লাখ ১৫ হাজার ৭৭৩ টাকা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২টি হোল্ডিংয়ে ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৬৪ টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ২টি হোল্ডিংয়ে ২ কেটি ৯১ হাজার ২০৭ টাকা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২টি হোল্ডিংয়ে ৩ লাখ ২২ হাজার ৭১৮ টাকা, তথ্য মন্ত্রণালয়ের ৪টি হোল্ডিংয়ে ৭৪ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬৬ টাকা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২টি হোল্ডিংয়ে ২ কোটি ৫ লাখ ৯৫ হাজার ১৯ টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ২টি হোল্ডিংয়ে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৯৮৩ টাকা, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের একটি হোল্ডিংয়ে ৪১ হাজর ৫৮৭ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ৩টি হোল্ডিংয়ে ২ কোটি ৭২ লাখ ৯৭ হাজার ৭৩১ টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২টি হোল্ডিংয়ে ২৯ লাখ ৯ হাজার ২৯৪ টাকা।
বস্ত্র ও মন্ত্রণালয়ের ২৪টি হোল্ডিংয়ে ৩ কোটি ৬০ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮৫ টাকা, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ২টি হোল্ডিংয়ে ১২ লাখ ৯২ হাজার ২৮০ টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ১১টি হোল্ডিংয়ে ৬ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৭২ টাকা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২টি হোল্ডিংয়ে ৫১ লাখ ৯৮ হাজার ৪২ টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের (পানি ও সেচ) ৪টি হোল্ডিংয়ে ৫০ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৯ টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ১ কোটি ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৩০ টাকা এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ১ হোল্ডিংয়ে ১ কোটি ৩ লাখ ১ হাজার ৪৫০ টাকা বকেয়া রয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলাল জাগো নিউজকে বলেন, গৃহকরের বকেয়া আদায়ের জন্য মন্ত্রণালয়গুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আমরা অফিসিয়ালি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। মন্ত্রণালয়েরে পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বাজেট পেলে সিটি কর্পোরেশনের গৃহকর পরিশোধ করে দেবেন। কিন্তু এর আগেও ডিএসসিসির পক্ষ থেকে বার বার চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমাদের ফিল্ড অফিসগুলো থেকেও তাদের যোগযোগ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা জানান, বছরব্যাপী অফিসিয়ালি অনেকবার মন্ত্রণালয়গুলোতে যোগাযোগ করা হয়েছে কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিবারই মন্ত্রণালয়গুলোতে যোগাযোগ করা হলে নানা ধরনের অযুহাত দেখানো হয়।
Advertisement
এএস/আরএস/এমএস