১৬৭ রানের পিছু ধেয়ে মাত্র ২ উইকেট খুইয়ে ২৮ বল আগেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া। এলিমিনেটর ওয়ানে এর চেয়ে বড় আর অনায়াস জয় আর কি হতে পারতো?
Advertisement
নিজ দলের এমন সাফল্যে উদ্বেলিত হয়ে পড়াই যে স্বাভাবিক। চোখ-মুখ আর শরীরী অভিব্যক্তিতে আনন্দ-উল্লাসের ফলগুধারা বয়ে যাবার কথা। কিন্তু মাশরাফি বিন মুর্তজার মাঝে কোনো আবেগ-উচ্ছাস নেই। রংপুর অধিনায়ক তবুও নির্বিকার। ভাবলেশহীন।
দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই কয়েক মিনিট আগে তার দল এলিমিনেটরে দারুণ জয় তুলে ফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেছে। শেরে বাংলার প্রেস কনফারেন্স হলে আজ সন্ধ্যায় খেলা শেষে রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি আর খুলনা টাইটান্স অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পাশাপাশি বসে এমন ভাবে কথা বললেন যে, খেলা না দেখা কিংবা এ ম্যাচের ফল না জানা কেউ হয়ত বুঝবেনই না কে জয়ী অধিনায়ক-মাশরাফি, না মাহমুদউল্লাহ?
আসলে এটাই মাশরাফির সত্যিকার রূপ। পরাজয়, ব্যর্থতা, না পারার হতাশা, দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রনা যেমন তাকে সেভাবে পোড়ায় না, আবার আকাশছোঁয়া সাফল্যও তার ভিতরে কোনোরকম বাড়তি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না। মাশরাফি তখনো নির্বিকার থাকেন।
Advertisement
আজ রংপুরের বিপক্ষে ক্রিস গেইলের ‘গেইলময়’ ম্যাচে অনায়াসে জিতেও তাই মাশরাফি তার মতই। তারপরও ভিতরে একটা স্বস্তির পরশ তো ছিলই। কারণ এ ম্যাচের আগে নিজ দলের ব্যাটিং নিয়ে খানিক অতৃপ্তি ছিল তার।
খুলনা টাইটান্সের সাথে ম্যাচে নিজ দলের ব্যাটসম্যানদের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন মাশরাফি। খেলার আগে জাগো নিউজের সাথে আলাপে বলেছিলেন, ‘আমরা রবিন লিগে যেমন খাপছাড়া ব্যাটিং করেছি, তা করলে চলবে না। ভাল ব্যাটিং করতে হবে।’
দলে ক্রিস গেইল আর ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মত ব্যাটসম্যান থাকার পরও অধিনায়ক যখন এমন কথা বলেন, তখন বুঝতে বাকি থাকেনা-তার ইঙ্গিতের তীর গেইল, ম্যাককালামের দিকেই ছিল। আজ শেরে বাংলায় গেইলের উত্তাল ব্যাটিংয়ে পাওয়া অনায়াস জয়ে নিশ্চয়ই সে অতৃপ্তি অনেকটাই ঘুচেছে।
আর তাই খেলা শেষে মাশরাফির মুখে এমন কথা ,‘আমি মনে করি আজকে খুব ভাগ্যবান আমরা। কাউকে ছোট না করেই বলছি গেইল আউট হয়ে গেলে এই ম্যাচ খুব কঠিন হয়ে যেত। ২১ রানে ২ উইকেট পড়েছিল। গেইল যদি ৫০ রানের মধ্যেও আউট হত, তাহলে খুব কঠিন হয়ে যেত। ২০ ওভার পর্যন্ত ম্যাচ গেলে কি হত, বলা যায় না।'
Advertisement
গেইলের প্রশংসা করে মাশরাফি বলেন, 'আমরা ভাগ্যবান গেইল এগিয়ে এসেছে আজকে। অন্য দিক থেকে আমরা আরও ভাগ্যবান যে ও রকম বড় ইনিংস আগে খেলতে হয়নি ওকে। এর আগে দুইটা পঞ্চাশ রানের ইনিংস খেলেছিল। ওই দুইটাও কিন্তু সে কঠিন পরিস্থিতিতে, কঠিন উইকেট খেলেছিল। শেষ ম্যাচেও ও খুলনার সঙ্গে ৩৮ রান করেছিল, যে ম্যাচটা আমরা জিতেছিলাম। বড় বড় ইনিংস না খেললেও এমন কিছু ইনিংস খেলেছে যেটা আমাদের দলের জন্য সহায়ক ছিল।’
ক্রিস গেইলের উত্তাল উইলোবাজি দর্শক বিনোদনের খোরাক। ভক্ত - সমর্থকরা প্রাণ ভরে উপভোগ করেন। কিন্তু ড্রেসিং রুমের প্রতিক্রিয়া মিশ্র।
অধিনায়ক মাশরাফির ভাষায় , 'গেইল যখন মারতে শুরু করে, তখন উদ্বিগ্নও হতে হয় খানিক। বিশেষ করে দ্রুত উইকেট হারানোর পর। ’
গেইলের ঝড়ো ইনিংসে জয় ধরা দিয়েছে বলেই নয়, আজকের ম্যাচে খুলনার বিপক্ষে রংপুর রাইডার্সকে অনেক সাজানো গোছানো দল মনে হয়েছে। তাহলে কি আগের কম্বিনেশন ঠিক ছিল না ? আজকের একাদশ ও দল সাজানোই ভাল হয়েছে? এটাই কি সেরা কম্বিনেশন?
এমন প্রশ্ন উঠলো প্রেস মিটে। মাশরাফি অবশ্য তা মনে করেন না। তার ব্যাখ্যা, 'কম্বিনেশনের কথা বললে এখনও আমাদের মানিয়ে নিতে খুব কঠিন হচ্ছে। আজকেও গাজীকে ওপেন করাতে হয়েছে, যেন শেষ পর্যন্ত একজন ব্যাটসম্যান থাকতে পারে। যখন আমরা একজন বাঁহাতি স্পিনার, পেসার বা অফ স্পিনার বাড়াতে চাচ্ছি তখন একজন ব্যাটসম্যানের ঘাটতি হয়ে যাচ্ছে। আবার ব্যাটসম্যান বাড়াতে গেলে একজন বোলারের ঘাটতি হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় বোলাররা টুর্নামেন্ট জুড়ে ভালো করছে, এই জন্য আমরা মোটামুটি টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। অন্যথায় আরও কঠিন হত।’
এআরবি/এমএমআর/এমএস