ইংলিশ রিক্রুট রবি বোপারা এখনো টপ স্কোরার। ১২ খেলায় দুটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৬৫ রান করে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবার উপরে রংপুর রাইডার্সের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। এছাড়া উইকেটকিপার কাম মিডল অর্ডার মিঠুন আলী ( ১২ খেলায় ২৯৯) রান করায় সেরা পাঁচে আছেন।
Advertisement
কিন্তু তারপরও পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাটিং সমস্যায় ভুগছে রংপুর। কারণ এক ও অভিন্ন। যাদের ওপর নির্ভর করে সাজানো ব্যাটিং অর্ডার সেই ক্রিস গেইল ও ব্রন্ডন ম্যাককালামের ব্যাটে রান নেই। এ দুই হাই প্রোফাইল ও সুপার স্টার ভুগছেন রান খরায়।
সীমিত ওভারের ফরম্যাটের দুই ভয়ঙ্কর গেইল-ম্যাককালাম। প্রতিপক্ষ বোলিং দুমরে মুচে দেবার ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে যাদের। তাদের উত্তাল উইলোবাজি আর ‘বিগি হিটিংয়ে’ প্রতিপক্ষের বোলারদের নাভিশ্বাস উঠে যায়, বোলিং-ফিল্ডিং তছনচ হয়ে যায়। কিন্তু এবার বিপিএলে সেই গেইল ও ম্যাককালামের রান করতে কি কষ্টই না হচ্ছে। চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটানো বহুদূরে, কেউ নিজেকে খুঁজেই পাননি এখানো।
যে ব্যাটসম্যানের বিপিএলে আছে তিন তিনটি সেঞ্চুরি। সেই গেইল ৮ খেলায় করেছেন মোটে ২১০ রান। তাও ২৬.২৫ গড়ে। ১৪৪.৮২ স্ট্রাইকরেট। সর্বোচ্চ ৫১। ম্যাককালামের অবস্থা আরও খারাপ। এ নিউজিল্যান্ড তারকার ৯ খেলায় সংগ্রহ ১৫২ রান। গড় ১৬.৮৮। স্ট্রাইকরেট ৯৮.৭০। সর্বোচ্চ ৪৩।
Advertisement
অনেক মূল্যে দলে ভেড়ানো গেইল ও ম্যাককালাম ওপেনিং জুটি প্রতিপক্ষ শিবিরে ভয় ধরাতে পারেননি একটুও। দলকে শক্ত ভীতের উপর দাঁড় করানোও সম্ভব হয়নি। তাইতো ওপেনিং জুটি পাল্টে মাঝে জিয়াউর রহমানকে দিয়ে ওপেন করানো হয়েছে। কিন্তু জিয়াও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। ৭ খেলায় ১২০.৩১ স্ট্রাইকরেটে মোটে ৭৭ রানে করেছেন। সর্বোচ্চ ৩৬।
শুরুতে নিয়মিত সুযোগ পাওয়া আরেক টপ অর্ডার শাহরিয়ার নাফীসও ব্যর্থতার ঘানি টেনে শেষ পর্যন্ত অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। প্রথম দিকে দুই-তিন ম্যাচে গড়ে ২৫-৩০ রান করার পর হঠাৎ ছন্দপতন। তারপরও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন এ বাঁহাতি। এখন পর্যন্ত ৮ খেলায় তার ব্যাট থেকে এসেছে মোটে ১০৮। গড় ১৩.৫০। স্ট্রাইকরেট খুবই খারাপ; ৯১.৫২। সর্বোচ্চ ৩৫। মোদ্দা কথা অধিনায়ক মাশরাফির অলরাউন্ডিং পারফরমেন্স (১৩ উইকেট আর ব্যাট হাতে ১১ খেলায় আটবার ব্যাট করে দুবার নট আউটসহ ১৩১) রংপুরকে সেরা চারে নিয়ে এসেছে।
অধিনায়ক মাশরাফি ছয় নম্বরে থাকলেও বোলারদেরও মধ্যে আর কেউ উইকেট শিকারে সেরা দশেও নেই। তারপরও রুবেল হোসেন (আট খেলায় ১০ উইকেট) আর সোহাগ গাজী ( নয় খেলায় ৭ উইকেট) মোটামুটি কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন। মোটা দাগে বলতে গেলে, প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে রান নেই, এটাই মূল সমস্যা রংপুর রাইডার্সের।
আজ (শনিবার) এলিমিনেটর বা বাঁচা মরার লড়াইয়েও তাই ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে অধিনায়ক মাশরাফি। তার বোধ, উপলব্ধি এবং বিশ্বাস, ব্যাটসম্যানরা রান করতে পারলে অবশ্যই সুযোগ থাকবে রংপুরের। জাগো নিউজের সঙ্গে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে আজকের ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শুরুতেই ব্যাটিংয়ের কথা বলেন মাশরাফি। কথা বার্তা ও শরীরি অভিব্যক্তি বার বার বলে দিচ্ছিল ব্যাটিংটাই যত চিন্তার জায়গা তার। তার কথা, খুলনা অবশ্যই ভালো দল। আমরা অনেকটা স্ট্রাগল করে করে এ পর্যন্ত এসেছি।’
Advertisement
তাহলে আজকের ম্যাচে আপনার দলের সম্ভাবনা কতটা? মাশরাফির জবাব, ‘পুরো টুর্নামেন্টে আমরা দুটি ম্যাচে দেড়শো রান চেজ করতে পারিনি। বেশির ভাগ খেলাতেই গড় পড়তা ১৪০ থেকে ১৫০ করেছি। এতেই পরিষ্কার আমরা পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাটিং নিয়ে ধুকেছি। যদি এভাবে ব্যাটিং করি তাহলে কঠিন হবে। আর যদি ব্যাটিং ভালো করি তাহলে অবশ্যই চান্স থাকবে। মোদ্দা কথা ব্যাটিং অনেক ভালো করতে হবে। অন্য দলগুলো যেমন ব্যাটিং করেছে, আমরা তার ধার কাছ দিয়েও যেতে পারিনি। আমাদের ব্যাটিংয়ের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে।’
শুধু গেইল-ম্যাককালাম নিজেদের মত করে জ্বলে উঠতে পারেননি। কেন পারেননি? তা নিয়ে কোন রকম মন্তব্য করতে চাননি মাশরাফি। শুধু বলেছেন, যেমন উইকেটে খেলা হচ্ছে, তাতে তাদের মত ফ্রি স্ট্রোক প্লেয়ারদের স্বচ্ছন্দে বিগ হিট নেয়া হাত খুলে বোলারদের শাসন করা কঠিন। তাই স্থানীয় উইলোবাজদের কাছ থেকে রান চান মাশরাফি। তাই মুখে একথা, ‘টিমের লোকাল প্লেয়ারদেরও স্টেপ আপ করতে হবে। তাদেরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।
দেখতে দেখতে পুরো টুর্নামেন্ট চলে গেল। আমার এখন আর নতুন করে বলার কিছু নেই। শুধু এটুকু বলবো তারা খেলুক, খেলাটা উপভোগ করুক।
বিপিএলের একদম শেষ দিকে এসে তার নিজের ইনজুরিতে পড়ে যাওয়া দলের জন্য কতটা চিন্তার ও এলিমিনেটর পর্বের মত অস্বস্তির, লড়াইয়ে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে? এমন প্রশ্নে চির চেনা মাশরাফির মতই আত্ববিশ্বাসী জবাব, ‘আমার জায়গা থেকে ইনজুরিটা চিন্তার অবশ্যই। তবে তা নিয়ে বেশি ভাবতে চাই না। মাঠে আমি যতটুকু পারি প্রাণপণ চেষ্টা করবো।
এছাড়া থিসারার চলে যাওয়াকেও একটা অন্তরায় ভাবছেন, থিসারা চলে যাওয়ায় একটু ব্যাকফুটে চলে গেছি।’ তারপরও মাশরাফির বিশ্বাস, ব্যাটসম্যানরা জ্বলে উঠতে পারলে অবশ্যই তার দলের ভালো সুযোগ আছে এলিমিনেটরের প্রথম ধাপ অতিক্রমের। মুখে কিছু বলছেন না, তবে বোঝাই যায়, গেইল-ম্যাককালামের কাছ থেকে বড় ও বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের আশায় প্রহর গুণছেন রংপুর অধিনায়ক। তা কি হবে? আসরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জ্বলে উঠবে গেইল ও ম্যাককালামের ব্যাট? মনে মনে মাশরাফি যে সেটাই চাচ্ছেন, তার সে আশা কি পূর্ণ হবে আজ?
এআরবি/এমআর/আইআই