চারিদিকে গাছপালা। তার মধ্যেই একফালি রাস্তা। সেখানে এক যুবকের গলা টিপে শ্বাস রোধের চেষ্টা চলছে। পরে ডান হাতের ধারালো অস্ত্র দিয়ে একের পর এক কোপ। এরপর পেট্রোল ঢেলে গায়ে অাগুন ধরিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়।
Advertisement
হত্যাকারীর পরনে লাল জামা, সাদা প্যান্ট আর গলায় জড়ানো ছিল সাদা মাফলার। গাল জুড়ে হাল্কা দাড়িও রয়েছে তার। যুবককে জখম করে ফেলে রেখে ক্যামেরার সামনে এসে নির্মমভাবে খুনের ব্যাপারে কিছু কথাও বলেন তিনি।
হত্যাকারীর দাবি, এ ঘটনা ‘লাভ জিহাদে’র ফল। জানা গেছে, কাজের খোঁজে রাজস্থান গিয়েছিলেন নিহত যুবক। সেটাও বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তার বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের মালদহের সৈয়দপুরে। লাভ জেহাদের জেরে খুন হতে হয়েছে তাকে। গোটা ঘটনার ভিডিও রয়েছে। ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে রাজস্থান প্রশাসন।
Advertisement
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে রাজস্থানের রাজসমন্দে জঙ্গলের ভিতরের রাস্তায় একটি অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই দেহটি আফরাজুল (৪৫) নামে নিহত ওই শ্রমিকের।
মালদহ থেকে আফরাজুল রাজস্থানে দিনমজুরির জন্য গিয়েছিলেন। কয়েক দিন ধরেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ওই ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই পুলিশ গ্রেফতার করে লাল জামা পরা সেই যুবককে। তার নাম শম্ভুলাল।
পুলিশের দাবি, আফরাজুল, শম্ভুলাল ছাড়াও অন্য কেউ সেখানে ছিল। সে-ই গোটা ঘটনাটা ক্যামেরাবন্দি করেছে। ওই ভিডিওতে শম্ভুলালকে বলতে শোনা গেছে, ‘আমাকে যদি মরতে হয়, তা হলে আমি অন্য কাউকে মারব।’
কিন্তু, আফরাজুলকে কেন এ ভাবে মারা হলো? কেন তার সঙ্গে জুড়ে গেল ‘লাভ জিহাদ’? প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, রাজস্থানে আফরাজুলের সঙ্গে এক হিন্দু তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা বিয়েও করেছেন। ওই যুবতী নিজের ধর্ম পাল্টে ফেলেছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। সেই কারণেই এ খুন কি-না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Advertisement
ভিডিওটি আর যাতে না ছড়ায়, সে জন্য রাজসমন্দ জেলা জুড়ে সাময়িকভাবে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজস্থানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলাবচন্দ কাটারিয়া বলেন, এক জনকে খুন করে তার ভিডিও বানানো হচ্ছে! অবিশ্বাস্য!
তিনি আরও জানান, ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশেষ তদন্তকারী (সিট) দলও গঠন করা হয়েছে। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে টুইট করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
রাজসমন্দের পুলিশ সুপার রাজেন্দ্র সিংহ জানিয়েছেন, সম্ভবত কাজের টোপ দিয়েই আফরাজুলকে ওই জঙ্গল এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনায় জড়িত তৃতীয় ব্যক্তির খোঁজ চলছে।
সূত্র : আল জাজিরা, এএনআই
কেএ/জেআইএম