সেরা চার দলের লড়াই; কিন্তু সেমিফাইনাল নয়। শুধু ক্রিকেটে নয়, যে কোন খেলায় সেমির যুদ্ধ মানেই কারো মতে নক আউট, নিশ্চিত বিদায়। আবার কারো মতে ‘সাডেন ডেথ’ বা নিশ্চিত মৃত্যু।
Advertisement
কিন্তু বিপিএলে তেমনটা হবে না। আগামীকাল শুক্রবার শেরে বাংলায় যে চার দলের লড়াই হবে, সেটাকে তাই সেমিফাইনাল বলা হচ্ছে না। বলার সুযোগও নেই। সাধারনতঃ সেমিফাইনালের বিজয়ী দল সরাসরি ফাইনালে চলে যায়। আর পরাজিত দল ছিটকে পড়ে।
কিন্তু বিপিএলে তা হবে না। এখানে সেরা চার দলের মধ্যে হবে তিনটি ম্যাচ। মানে একটি ম্যাচ বেশি হবে। তাই নামকরণ পাল্টে সেমিফাইনালের বদলে রাখা হয়েছে ‘কোয়ালিফায়ার’ ও ‘ইলিমিনেটর’। এর কোনটাই অঘোষিত সেমিফাইনাল নয়।
তবে এর মধ্যে কোয়ালিফায়ার-১ ‘এ’ যারা খেলবে তাদের জন্য থাকছে ডাবল সুযোগ। জয়ী দল সোজা চলে যাবে ফাইনালে। আর পরাজিত দলের বিপিএল শেষ হয়ে যাবে না। তারা আরও একটি সুযোগ পাবে। সেই দল ১০ ডিসেম্বর খেলবে কাল ইলিমিনেটরে বিজয়ী দলের সাথে।
Advertisement
শুক্রবার দুপুরে ইলিমিনেটর রাউন্ডের ম্যাচে মুখোমুখি হবে তৃতীয় স্থান পাওয়া খুলনা টাইটান্স এবং চার নম্বর দল হিসেবে সেরা চারে জায়গা করে নেয়া রংপুর রাইডার্স। এই খেলার বিজয়ী দল টিকে থাকবে। যদিও কোয়ালিফায়ার-১ বিজয়ীর মত সরাসরি ফাইনাল নিশ্চিত হবে না দলটির। তাদের খেলতে হবে কোয়ালিফায়ার-২। কোয়ালিফায়ার-১ এ পরাজিত দলের বিপক্ষে। আর ইলিমিনেটরে পরাজিত দল বিদায় নেবে।
কাজেই আগামীকাল কোয়ালিফায়ার পর্বে মুখোমুখি হচ্ছে দুই বন্ধু সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল। সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটস আর তামিমের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আর ইলিমিনেটর পর্বের প্রথম ম্যাচে লড়বে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খুলনা টাইটান্স ও মাশরাফি বিন মর্তুজার রংপুর রাইডার্স। সাত দলের আসরে চিটাগং ভাইকিংস, রাজশাহী কিংস এবং সিলেট সিক্সার্স আগেই বিদায় নিয়েছে। এবার ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে চার দলের লড়াই।
অনেক আসর বা টুর্নামেন্টেই কাগজে-কলমের হিসেবের সাথে মাঠের হিসাব-নিকাশ মেলে না। তবে এবারের বিপিএলে কাগজে কলমের সাথে মাঠের চালচিত্রর অনেকটাই মিলে গেছে। মাঠের লড়াই শেষে সেরা চার দলই সেরা চারে জায়গা করে নিয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা দেশের চার সেরা ও শীর্ষ তারকা মাশরাফি, তামিম, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর দলই শেষ চারে। এছাড়া দেশের যে দুই সময়ের সেরা কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন ও মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের দলও সেরা চারে। আর যে দুই বিদেশি প্রশিক্ষক মাহেলা জয়বর্ধনে আর টম মুডি- তাদের দলও সেরা চারে।
Advertisement
বলার অপেক্ষা রাখে না, কোচ সালাউদ্দীনের প্রশিক্ষণে তামিম ইকবালের নেতৃত্বে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ধারাবাহিকভাবে সবচেয়ে ভাল খেলেছে। এবং সর্বাধিক ৯ ম্যাচেও জয়ী হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিদেশি ক্রিকেটার দলে থাকা যেমন প্লাস পয়েন্ট, আবার বেশি বিদেশি তারকা দলে থাকার অসুবিধাটাও ভোগ করেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। তারপরও খালেদ মাহমুদ সুজনের প্রশিক্ষণে সাকিব আল হাসানেনর দল ঢাকা ডায়নামাইটস বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে।
টি-টোয়েন্টির দুই বিশ্ব সেরা ব্যাটিং পারফরমার ক্রিস গেইল এবং ব্রেন্ডন ম্যাককালামের দল রংপুর তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নৈপুন্য পায়নি; কিন্তু মধ্য তিরিশে পা রাখা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার গতিশীল ও উজ্জিবীত নেতৃত্বে রংপুর উঠল সেরা চারে।
অন্যদিকে তেমন নামী ও দামি বিদেশি তারকা দলে না থাকলেও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর তরুণ আরিফুলের ব্যাটিং এবং পেসার শফিউলের কার্যকর নৈপুন্যে খুলনাও ফাইনালের সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছে।
চার দলের শক্তির ফারাক খুব বেশি নয়। ঢাকা-কুমিল্লা আর খুলনা-রংপুর কাছাকাছি শক্তির দল। কাজেই সবার ধারণা, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে কোয়ালিফায়ার আর ইলিমিনেটর রাউন্ডে; কিন্তু তারপরও উইকেটের কারণে মাঠে যত ভাল ও আকর্ষণীয় ক্রিকেট হবার কথা ছিল তা কিন্তু হচ্ছে না
এখন শেষ পর্বে খেলা জমবে কি না, বিগ স্কোরিং গেম হবে কি না- সেটা একটা বড় প্রশ্ন। এসই নির্ভর করছে উইকেটের ওপর। উইকেট নিয়ে নানা কথা। রাজ্যের সমালোচনা। বাংলাদেশের মাশরাফি-তামিম থেকে শুরু করে বিদেশি তারকা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও সুনিল নারিনও উইকেটের সমালোচনা করেছেন। উইকেট সত্যি ভাল নয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট উপযোগি নয়। সবাই বলছেন- শেরে বাংলায় যে সব পিচে বিপিএল হচ্ছে সেগুলো ঠিক টি-টোয়েন্টির জন্য আদর্শ নয়।
উইকেটের গতি ও বাউন্স ঠিক নয়। বল কখনো থেমে আসে। আবার কোন সময় ঠিক গতিতে ব্যাটে যাচ্ছে। তার চেয়েও বড় কথা, বেশিরভাগ সময় বল নিচে থাকছে। আবার কিছু কিছু ডেলিভারি লাফিয়ে উঠছে। এমনকি স্পিন ও স্লো মিডিয়াম পেসারদের বলও ব্যাটসম্যানের মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে। যে কারণে ব্যাটসম্যানদের স্বচ্ছন্দে খেলা কঠিন হচ্ছে। ব্যাটসম্যানরা হাত খুলতে খেলতে গিয়ে উল্টো বিপদে পড়ছেন।
হয় প্রত্যাশার চেয়ে দেরিতে বল এসে মিসটাইমড হচ্ছে। না হয় স্বাভাবিকের চেয়ে নিচু কিংবা লাফিয়ে উঠে বিপদেও কারণ ঘটাচ্ছে। সে কারণেই ফ্রি স্ট্রোক প্লে বা চার ও ছক্কার ফুলঝুরিও ছিল তুলনামুলক কম। দর্শক বিনোদনের খোরাক গেছে কমে। বিগ স্কোরিং গেমও হচ্ছে না। দর্শক, সমর্থক ও ভক্ত সবার প্রত্যাশা- কোয়ালিফায়ার, ইলিমিনেটর ও ফাইনালে শেরে বাংলার উইকেটের চেহারা ও চরিত্র পাল্টাবে। না হয় মূল আয়োজনটাই ফিকে হয়ে যাবে।
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম