জাতীয়

‘জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণা গ্রহণযোগ্য নয়’

জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Advertisement

তিনদিনের কম্বোডিয়া সফর শেষে ঢাকায় ফিরে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিকেল ৪টায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি সুয়োমোটো (স্বতঃপ্রণোদিত) যে ঘোষণা দিয়েছেন, আমার কাছে মনে হয় এটা ইসলামিক ওয়ার্ল্ডের কারও কাছে গ্রহণযোগ্য না। কারণ এখানে জাতিসংঘের রেজুলেশন রয়েছে। রেজুলেশন অনুযায়ী কিন্তু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের রেজুলেশনকে এভাবে অগ্রাহ্য করা কেউ বোধ হয় মেনে নেবে না। এটা ফিলিস্তিনের বিষয়ে আমার বক্তব্য।

Advertisement

আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনের একটা অধিকার রয়েছে। তাদের একটা নিজস্ব রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অবশ্যই দিতে হবে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পরে তাদের যে ভূখণ্ডটা এবং যে সীমানাটা তাদের ছিল, যেটা তাদের রাজধানী হওয়ার কথা, সেটাই থাকা উচিত।

শেখ হাসিনা বলেন, এখানে একতরফাভাবে করা মানে, অশান্তি সৃষ্টি করা। যে শান্তিপ্রক্রিয়া, যেটা আমেরিকাই শুরু করেছিল, সেটার জন্য নোবেল প্রাইজও দেয়া হলো। একবার তারা নিজেরাই শুরু করল, এ ঘোষণা এখন অশান্তির পথে ঠেলে দেয়া, সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। দেশের জনগণের জন্য কাজ করেছি। দেশের উন্নয়নে কাজ করেছি। এরপরও জনগণ যদি ভোট না দেয় তাহলে আমরা নেই। যারা ভোট পাবে তারা ক্ষমতায় যাবে। এতে আমার কোনো আফসোস নেই।

‘ভোটের মৃদুমন্দা হাওয়া বইছে। পত্রিকায় অসংখ্য প্রার্থীর নাম আসছে। নাম ছাপলে আপনার নজরে আসবে। আওয়ামী লীগ যেহেতু বড় দল।’ এসব কথা উল্লেখ করে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন ও প্রার্থী দেয়া না দেয়ার ব্যাপারে জানতে চান দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার।

Advertisement

এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উত্তর একটাই সব ফুল ফুটতে দিন। অনেকে প্রার্থী হতে চান, ভালো কথা। এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। কেন সবাই প্রার্থী হতে পারবেন না? শত ফুল ফুটবে। হোক না। শত ফুলের মধ্যে যেটা ভালো সব থেকে সুন্দর ফুল সেটা আমরা বেছে নেবো। সময় এলে আপনারা দেখতে পারবেন। আর কীভাবে নেবো সেটা সময়ই বলে দেবে।

আগাম নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সিইসি। এমতাবস্থায় আগাম নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলের করা প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্লামেন্টারি সিস্টেমে যে কোনো সময় নির্বাচন দেয়া যায়। তবে এমন কোনো দৈন্যদশায় পড়িনি, বা সমস্যায় পড়িনি যে, এখনই নির্বাচন দিতে হবে। তবে আমাদের উন্নয়নের ধারা আমরা অব্যাহত রেখেছি। উন্নয়নের কাজগুলো আমরা দ্রুত এগিয়ে নিতে চাই।

আমরা না থাকলে উন্নয়নের যে কী দশা হয় তা আপনারা দেখেছেন। ৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যেগুলো আমরা করেছিলাম, যেগুলো বাকি ছিল সেগুলো আর সচল থাকেনি। উন্নয়নের সে ধারা অব্যাহত রাখেনি। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে আমরা যে উন্নয়ন করেছি তা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি অন্য কোনো সরকার করতে পারে নাই। বিশ্বব্যাংকের যে দুর্নীতির যে অভিযোগ তা চ্যালেঞ্জ করার মতো সৎসাহস আমরাই দেখিয়েছি- বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করেছি বলেই জিডিপি সাত শতাংশে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউই জিডিপি সাত ভাগের ওপরে তুলতে পারেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৬ বছরের মধ্যে ৩০ বছরই এ দেশের জনগণ অবহেলিত ছিল। এ সময় কার্ফু, হত্যা, খুন, ভোট কারচুপি হয়েছে। দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জনগণকে নিয়ে কাজ করি। দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে সে লক্ষ্য মাথায় রেখে কাজ করছি। তারা চায় না বাংলাদেশের উন্নয়ন হোক। বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। এক সময় বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের দেশে পরিণত করেছিল। বিদেশিরা বাংলাদেশ মানেই ভিক্ষুকের দেশ হিসেবে চিনতা। কিন্তু এখন সে পরিস্থিতি নেই। বিদেশিরা এখন বাংলাদেশকে সমীহ করে।

‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশা আল্লাহ’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এইউএ/জেডএ/জেআইএম