ধর্ম

মুসলিম জাতির জন্য হজরত ইবরাহিমের দোয়ার ভাণ্ডার

দোয়া হচ্ছে আল্লাহর জিকির বা স্মরণ। আল্লাহ তাআলা মানুষকে লক্ষ্য করেন বলেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।’ (সুরা বাকারা : আয়াত)

Advertisement

আর আল্লাহকে স্মরণ করা ও স্মরণ না করার পার্থক্য নির্ণয় করে পিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি তাঁর প্রভুকে স্মরণ করে আর যে তাঁকে স্মরণ করে না এদের পার্থক্য হলো জীবিত এবং মৃতের ন্যায়। (বুখারি-মুসলিম)

মৃত ব্যক্তি যেমন আল্লাহকে ডাকতে পারে না; তাঁর কাছে কোনো কিছু চাইতে পারে না; তেমনি কোনো ব্যক্তি জীবিত থেকে তাঁকে স্মরণ না করে বা না ডাকে কিংবা কোনো কিছু না চায়; এ সব জীবিত ব্যক্তি মৃতের ন্যায়।

হাদিসে পাকে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কোনো কিছু না চায়; আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির ওপর রাগান্বিত হন।’ (নাউজুবিল্লাহ)

Advertisement

আল্লাহ তাআলা তাঁর স্মরণকারীদের জন্য ঘোষণা দেন, ‘এবং অধিক মাত্রায় আল্লাহকে স্মরণকারী (নারী-পুরুষ); আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা এবং অনেক বড় পুরস্কার নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। (সুরা আহযাব : আয়াত)

সুতরাং আল্লাহকে স্মরণ করলে বান্দার অনেক উপকার রয়েছে। এ কারণেই মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে নিজের জন্য, মিল্লাতের জন্য সুখ লাভে, দুঃখ লাঘবে, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-নিরাপত্তা-সন্তান-সন্তুতি ইত্যাদির অসংখ্য প্রার্থনা করেছেন।

তাঁর সে স্মরণীয় কথাগুলো আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দনীয় ছিল। যা আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া হিসেবে কুরআনে উল্লেখ করেছেন। আর তা হলো-

>> আনুগত্য ও বংশধারা সম্প্রসারণের পিতা-পুত্রের দোয়া

Advertisement

উচ্চারণ : রাব্বানা তাক্বাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আংতাস সামিউল আ’লিম। রাব্বানা ওয়াঝ্‌আ’লনা মুসলিমাইনে লাকা ওয়া মিং জুর্‌রিই্‌য়্যাতিনা উম্মাতাম মুলিমাতাল্লাকা ওয়া আরিনা মানাসিকানা ওয়া তুব্‌ আলাইনিা ইন্নাকা আংতাত তাউয়্যাবুর রাহিম।’

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে তোমার একান্ত অনুগত কর এবং আমাদের বংশধর হতে তোমার এক অনুগত উম্মত কর। আমাদের ইবাদতের নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দাও এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হও। তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’(সুরা বাকারা : আয়াত ১২৭-২৮)

২. আবাসস্থল ও রিজিকের জন্য দোয়া

উচ্চারণ : ‘রাব্বিঝআল হাজাল বালাদান আমিনাও ওয়ারযুক্ব্‌ আহলাহু মিনাছ-ছামারাতি মান আমানা মিনহুম বিল্লাহি ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি।’

অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! একে নিরাপদ শহর কর, আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ্‌ ও আখিরাতে ঈমান আনে তাদেরকে ফলমূল হতে জীবিকা প্রদান কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৬)

৩. নিজের নগরী ও সন্তানদের দ্বীনের ওপর অবিচল থাকার এবং উত্তম রিজিকের ফয়সালার দোয়া-

উচ্চারণ : রাব্বিঝআল হাজাল বালাদা আমিনাও ওয়াঝ্‌নুব্‌নি ওয়া বানিয়্যা আন না’বুদাল আসনামা। রাব্বি ইন্নাহুন্না আদ্‌লালনা কাছিরাম মিনান্নাসি; ফামাং তাবিআ’নি ফাইন্নাহু মিন্নি ওয়া মান আ’চানি ফাইন্নাকা গাফুরুর রাহিম।

রাব্বানা ইন্নি আসকাংতু মিংজুর্‌রিই্‌য়্যাতি বিওয়াদিন গাইরি জি যারই’ন ইংদা বাইতিকাল মুহার্‌রামি রাব্বাানা লিইয়ুক্বিমুস সালাতা ফাঝআ’ল আফইদাতাম মিনান্নাসি তাহওয়ি ইলাইহিম ওয়ারঝুক্বহুম মিনাছ-ছামারাতি লাআ’ল্লাহু ইয়াশকুরুন।

রাব্বানা ইন্নাকা তা’লামু মা নুখফি ওয়া মা নু’লিনু ওয়া মা ইয়াখফা আ’লাল্লাহি মিং শাইয়িং ফিল আরদি ওয়া লা ফিস-সামায়ি।’

অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! এ নগরীকে নিরাপদ কর এবং আমাকে ও আমার পুত্রদেরকে প্রতিমা পূজা থেকে দূরে রাখ। হে আমার প্রতিপালক! এ সব প্রতিমা তো বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সেই আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার পবিত্র গৃহের নিকট। হে আমাদের প্রতিপালক! এজন্য যে, তারা যেন নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। অতএব, তুমি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও এবং ফল-ফলাদি দ্বারা তাদের রিজিকের ব্যবস্থা কর, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা যা গোপনে করি এবং যা প্রকাশ করি তা নিশ্চয় তুমি জান। আর পৃথিবী ও আকাশের কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে গোপন থাকে না।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৫-৩৮)

৪. নিজেদের নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী, পিতামাতা-বংশধরদের কল্যাণ ও মুমিনদের জন্য দোয়া-

উচ্চারণ : ‘রাব্বিঝআলনি মুক্বিমাস সালাতি ওয়া মিং জুররিই্‌য়্যাতি রাব্বানা ওয়া তাক্বাব্বাল দুআয়ি। রাব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালেদাইয়্যা ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হিসাবু।’

অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক!আমাকে ও আমার বংশধরদের নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী বানাও; হে আমাদের প্রতিপালক! আমার দোয়া কবুল কর। হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪০-৪১)

৫. আল্লাহর ওপর ভরসা এবং অত্যাচার নির্যাতন থেকে ইসলামের অনুসারীদের কল্যাণে দোয়া-

উচ্চারণ : রাব্বানা আলাইকা তাওয়াক্কালনা ওয়া ইলাইকা আনাবনা ওয়া ইলাইকাল মাছির। রাব্বানা লা তাঝআলনা ফিতনাতাল লিল্লাজিনা কাফারু ওয়াগফিরলানা; ইন্নাকা আংতাল আযিযুল হাকিম।’

অর্থ : ‘হে! আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমারই ওপর নির্ভর করছি, তোমারই অভিমুখী হয়েছি এবং প্রত্যাবর্তন তো তোমারই কাছে। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে কাফেরদের নিপীড়নের পাত্র কর না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের ক্ষমা কর; তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।; (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ৪-৫)

আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের করা দোয়াগুলোর মাধ্যমে তাঁর দরবারে ধরণা দেয়ার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।আরও পুড়ন-

>> হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে মুসলিম হওয়ার নির্দেশ>> হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের প্রবর্তিত করণীয় সুন্নাত>> হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে অমান্যকারীরাই নির্বোধ>> পুত্রসন্তান লাভে হজরত ইবরাহিমের দোয়া>> ঐতিহাসিক নিদর্শন ‘মাকামে ইবরাহিম’>> জান্নাতের নেয়ামত লাভে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের শেখানো তাসবিহ>> স্ত্রী ও সন্তানের জন্য ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দোয়া>> কা’বা নির্মাণকালে হজরত ইবরাহিমের মিনতি>> বিশ্বনবিকে প্রেরণে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দোয়া>> যে ঐশী আজানে অনুষ্ঠিত হয় হজ>> কাবাঘর নির্মাণকালে আল্লাহর নিকট পিতা-পুত্রের আকুতি

এমএমএস/পিআর