ইগতেগফার এবং তাওবা আল্লাহর দরবারে এক অফুরন্ত রহস্যের নাম। যে রহস্য শুধুমাত্র তাওবাগ্রহণকারী এবং ক্ষমার অধিকারী আল্লাহই ভাল জানেন। আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি খুশী হন তখনই যখন বান্দা ভুল করে গোনাহ করে, অতঃপর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ফিরে যায়। আর ফরিয়াদ করে, হে আল্লাহ! ক্ষমা করে দিন।
Advertisement
আল্লাহ তাআলার অফুরন্ত রহস্যের গোপন ভাণ্ডার থেকে তাওবা ও ইসতেগফারের গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এবং দু’টি দোয়া শিখে নিই-
হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- আল্লাহ বলেন-
‘হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং আমার কাছে প্রত্যাশা করবে ততক্ষণ আমি তোমার গোনাহ ক্ষমা করতে থাকব; তোমার গোনাহের পরিমাণ যত বেশি এবং যত বড়ই হোক না কেন।
Advertisement
এ গোনাহের পরিমাণ যদি আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং তুমি যদি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তবে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। এ ব্যাপারে আমি কোনো পরোয়া করব না।
হে আদম সন্তান! তুমি যদি আমার কাছে পৃথিবীর সমান গোনাহসহ উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কাউকে শরিক না কর; তাহলে আমিও ঠিক পৃথিবীর সমান ক্ষমা নিয়ে তোমার দিকে এগিয়ে যাব। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, দারেমি, মুস্তাদরেকে হাকেম)
সুতরাং হে আল্লাহর বান্দা! হে মুসলিম উম্মাহ! ভয় কিসের? আর দেরি নয়, আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা ও ইসতেগফার করি। তার আলিশান দরবারে ক্ষমা চাই। প্রিয়নবির হাদিস থেকে তাওবা ও ইসতেগফারের দুটি দোয়া তুলে ধরা হলো-
> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বলে-
Advertisement
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি”
অর্থ : ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ব্যতিত কোনো মাবুদ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চির প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁর কাছে তাওবা করি।’
তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, এমনকি সে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পলায়ন করার মত গোনাহ করলেও।’ (তিরমিজি, মুসতাদরেকে হাকেম)
আরও পড়ুন > যে কাজে মানুষের পাপও সাওয়াবে পরিণত হয়
> অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাইয়্যিদুল ইসতেগফার হল- বান্দা বলবে-
اَللَّهُمَّ اَنْتَ رَبِّى لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ خَلَقْتَنِى وَ اَنَا عَبْدُكَ وَ اَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَ وَعْدِكَمَاسْتَطَعْتُ اَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ اَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَ اَبُوْءُ بِذَنْبِىفَاغْفِرْلِىْ فَاِنَّهُ لَا يَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাত্বাতু; আউজুবিকা মিন শার্রিমা সানা’তু আবুউ লাকা বিনেমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিযামবি; ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া কোনো প্রভু নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি সাধ্যমতো তোমার কাছে দেয়া ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি পালনে সচেষ্ট আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমাকে যে নেয়ামত দান করেছ, তা স্বীকার করছি এবং আমি আমার পাপসমূহ স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া কেউ ক্ষমাকারী নেই।’
যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে এ দোয়া দিনের বেলায় পাঠ করে এবং সন্ধ্যার আগেই মারা যায় তবে সে জান্নাতি। আর যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ বিশ্বাসে সঙ্গে রাতের বেলায় এ দোয়া পাঠ করে এবং সকালের আগেই মারা যায়, তাহলে সেও জান্নাতি।’ (বুখারি)
সুতরাং আর কোনো হতাশা নয়, আল্লাহ তাআলার অবিচল আস্থা এবং বিশ্বাসের সঙ্গে ইসতেগফার পড়ে তাওবা করব। কেননা মুক্তির একমাত্র পথই হচ্ছে আল্লাহর দরবারে ইসতেগফার পড়ে তাওবা করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পাপের কাফ্ফারা হল ‘অনুতাপ’। আর অনুতাপই হচ্ছে ‘তাওবা’। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। ইসতেগফার ও তাওবার মাধ্যমে গোনাহমুক্ত জীবন লাভ করে দুনিয়া ও পরকালের সফল দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর