আন্তর্জাতিক

কেমন আছেন রোহিঙ্গারা?

রাখাইন রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ একটি রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

Advertisement

২৫ আগস্টের পর থেকে ছয় লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নতুনভাবে আসা শরণার্থীদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ শিশু। প্রত্যেক সপ্তাহে হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আসা অব্যাহত রয়েছে।

সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে নো ম্যান্স ল্যান্ডে আটকা পড়ে আছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। বর্তমানে সেখানেও আতঙ্কের মধ্যেই তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।

গত ১৫ নভেম্বর ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সীদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে। সেখানে এক লাখ ৫৬ হাজার দুইশ পাঁচ জন শিশুকে ভিটামিন এ খাওয়ানো হয়।

Advertisement

এছাড়া দুই বছর থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সীদের ক্রিমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। এক লাখ চার হাজার ৪৮ জন শিশুকে ক্রিমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর তথ্য রয়েছে।

৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত হামের টিকা দেয়া হয়েছে। এক হাজার সাতশ ১৪ জনের হাম হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে দু'জন মারা গেছে। তিন লাখ ২৫ হাজার চারশ ৫৭ জন শিশুকে হামের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করেছে ইউনিসেফ।

৭০ জন স্বেচ্ছাসেবককে সেবাদানের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ইউনিসেফ। শরণার্থী শিশুদের দুরাবস্থা এবং তাদের পরিবারকে মানবিক সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে সংস্থাটি।

ইউনিসেফ বলছে, সাত লাখ ২০ হাজার শিশুর মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১২ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে আসা তিন লাখ ৬২ হাজার পাঁচশ শিশুর মানবিক সহায়তা দরকার।

Advertisement

৩০ নভেম্বর ২০১৭ সালের হিসাবমতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রিতিনিয়ত সেই সংখ্যা আরও বেড়ে যাচ্ছে।

২৫ আগস্টের পর থেকে ইতোমধ্যেই ছয় লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, খাবার এবং নিরাপদ আশ্রয় প্রয়োজন। অথচ তারা একেবারে নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে।

পরিবার-স্বজন হারিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা ভিন্ন ধরনের এক বাস্তবতার সাক্ষী হয়ে থাকছে। কাপড় ধোয়ার উপাদানের অভাবে তারা নোংরা জামাকাপড় পরে দিন পার করছে। এতে করে অসুস্থ্য হওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে।

নতুনভাবে আসা রোহিঙ্গাদের বিশেষ করে নারীদের গোসলের ব্যবস্থা তেমন একট নেই বললেই চলে। পয়ঃনিষ্কাশনে দুরাবস্থার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

ইউনিসেফের পক্ষ থেকে আগেই কলেরার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে কলেরা ছড়িয়ে পড়ে মহামারী দেখা দিতে পারে।

এছাড়া রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা নানা ধরনের সহিংসতা বিশেষ করে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রোহিঙ্গা শিশুদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়া এবং বাল্যবিবাহ দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চার থেকে ১৮ বছরের চার লাখ ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষার প্রয়োজনেরও কথা জানিয়েছে ইউনিসেফ।

সূত্র : রিলিফ ওয়েব

কেএ/এমএস