বিনোদন

আহা শাকিব-অপু, আহারে ডিভোর্স!

চলতি বছরের ১০ এপ্রিল একটি বেসরকারি টেলিভিশনে লাইভে এসে আট বছর আগে বিয়ে করার খবর প্রকাশ করেছিলেন অপু বিশ্বাস। সেখানেই দেশবাসীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আব্রাম খান জয় নামের সন্তানের সঙ্গে। কিন্তু শাকিব চাইতেন বিয়ে ও সন্তানের কথা গোপন রাখতে। তিনি অপুকে নিষেধ করেছিলেন এই খবর প্রকাশ করতে।

Advertisement

অন্যদিকে অপুকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বুবলীকে নিয়ে মাতামাতি শুরু করেন শাকিব। সেই বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি অপু। লাইভে এসে হাটে হাড়ি ভাঙেন বিয়ে ও সন্তান জন্ম দেয়ার। সেটি মেনে নিতে পারেননি তার স্বামী শাকিব খান। অপুর উপর রাগে-ক্ষোভে লাইভ চলাকালীনই গণমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন, ‌ছেলেকে মেনে নিলেও স্ত্রীর মর্যাদা দেবেন না অপু বিশ্বাসকে।

অবশেষে বহু নাটক শেষে স্ত্রী-পুত্রকে মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন শাকিব। তাদের একসঙ্গে নিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখিও হন পহেলা বৈশাখের দুই দিন আগে। কিন্তু সেটি যে কেবলই লোক দেখানো স্বান্তনা ছিলো অনুমান করতে পেরেছিলেন চলচ্চিত্রাঙ্গনের অনেকেই। কেননা, নানা অজুহাতে সংসার এড়িয়ে যেতেন শাকিব। কখনোই তিনি অপুর মুখোমুখি হতেন না। কোনো আড্ডা বা অনুষ্ঠানে অপুর নাম উচ্চারিত হলে সেখানেই তিনি বিরক্তি প্রকাশ করতেন। ছেলেকে তিনি দেখতেন হয় নিজের কাছে নিয়ে অথবা অপু বিশ্বাস বাসায় থাকবেন না সেই খবর নিশ্চিত হলে।

শুধু নিজে নন, শাকিব তার বাবা, মা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও অপু বিশ্বাসের দূরত্ব তৈরি করে দেন। ফলে শ্বশুরবাড়ির কারো সঙ্গেই যোগাযোগ হতো না অপুর। ইচ্ছে থাকলেও পুত্রের আদেশ মেনেই একমাত্র নাতিকে দেখার সুযোগ পাননি শাকিবের বাবা ও মা।

Advertisement

আবার অপুকেও দেখা যেত বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা লাইভে গিয়ে শাকিবকে বিভিন্ন নায়িকাদের সঙ্গে জড়িয়ে ব্যাঙ্গ করতে। বিশেষ করে বুবলীর সঙ্গে শাকিবকে জড়িয়ে নানা ধরনের মুখরোচক কথা তিনি বলেছেন। এইসবের প্রেক্ষিতে বুবলীও অপুকে নিয়ে নানা কটু মন্তব্য করেছেন। স্ত্রী ও কতিথ প্রেমিকার এইসব কথার লড়াই বিরক্ত করেছে শাকিবকে।

এইসব ঘটনা দেখে ও শুনেই ঢাকাই সিনেমার আকাশে বারবার ছড়িয়েছে শাকিব-অপুর ডিভোর্সের গুঞ্জন। এইসব নিয়ে জানতে চাইলে শাকিব কখনো মুখ খুলতেন না। কিন্তু অপু বারবার সংসার বাঁচানোর দায় নিয়ে বলতেন ‘ভালো আছি শাকিবের সংসারে। আমাদের ছেলের জন্য দোয়া করবেন।’ সেই দায় এবার চুকে গেল। গতকাল সোমবার বিকেল ৩টারে দিকে জানা গেলে অপুকে ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়েছেন শাকিব।

এবার কেবল আনুষ্ঠানিকতা বাকি। শিগগিরই হয়তো একে অপরের কাছে ‘সাবেক’ হয়ে যাবেন ঢাকাই ছবির ইতিহাসে সর্বাধিক সিনেমার জুটি শাকিব-অপু।

তবে অবাক করা বিষয় হলো ডিভোর্স লেটার পাঠালেও এ নিয়ে কোথাও মুখ খুলেননি শাকিব। তিনি বর্তমানে একটি ছবির শুটিং করতে ভারতে রয়েছেন। সেখান থেকে সাংবাদিক ও কাছের মানুষরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কারো কাছেই তিনি এই বিষয়ে কিছু বলবেন না বলে দাবি করেছেন। তার দাবি, ‘যা বলার তালাকনামায় বলেছি। এর বেশি কিছু বলার নেই।’

Advertisement

আবার অপুও ডুব দিয়েছেন। কাল বিকেল থেকেই আর তার অবস্থান জানা যাচ্ছে না। পরিবারের সদস্য ছাড়া কারোর ফোনকলও রিসিভ করছেন না তিনি। যার ফলে ডিভোর্সের ব্যাপারটি কোনদিকে যাচ্ছে সেটি রয়েছে ধোঁয়াশায়। তবে শাকিব-অপুর বেশ কিছু ঘনিষ্ট সূত্রে ভেসে আসছে ভিন্ন ভিন্ন খবর। কেউ বলছেন ডিভোর্সের আবেদনের বিপরীতে আপীল করবেন অপু। কেউ কেউ দাবি করছেন, সংসার টিকিয়ে রাখতে শাকিবের সঙ্গে আলোচনায় বসার চেষ্টা করছেন তিনি।

শোনা যাচ্ছে, শাকিবের আবেদনের বিপরীতে আপীল করবেন অপু। তিনি এখনো বিশ্বাসই করতে চাইছেন না যে শাকিব তাকে ডিভোর্স পাঠিয়েছেন। তার দাবি, তালাকানামায় উল্লেখ করা শাকিবের দুটি অভিযোগই ভিত্তিহীন। শাকিব তালাকনামায় লিখেছেন, অপু তাদের সন্তানকে কাজের লোকের কাছে রেখে ‘কথিত’ বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় অভিযোগে শাকিব জানিয়েছেনে, অপু তার কোনো নির্দেশ মেনে চলেন না।

প্রথম অভিযোগের বিষয়ে অপুর ঘনিষ্ঠ সূত্রের বক্তব্য, অপু তো গুরুতর অসুস্থ হয়ে ভারতে গিয়েছিলেন সম্পূর্ণ একাই। সেটা ছিলো বেশ ঝুঁকির। সেখানে তার বোনকে নিয়ে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে বয়ফ্রেন্ডের কথা আসবে কেন। আর যেহেতু শাকিবের বাবা-মা বা তার পরিবারের কেউ যোগাযোগ রাখে না তাই অপু বাধ্য হয়েই ছেলেকে সবরকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে রেখে গিয়েছিলেন। এমনকি অপু এটাও জানতেন যে শাকিব আগের দিন রাতে ঢাকায় ফিরেছেন বিদেশের শুটিং শেষ করে।

অপুর সূত্রটির দাবি, স্বামী হিসেবে শাকিব যদি দায়িত্ববান হতেন, স্ত্রী পুত্রের খবর রাখতেন তবে দেশে ফিরে তো শাকিব অপুর কাছেই যেতেন। সেখানেই রাত কাটাতেন। তবে অপু যে অসুস্থ সেটা তিনি জানতে পারতেন এবং নিজেই সব ব্যবস্থা করতেন স্ত্রীর চিকিৎসার। অপুকে একা ভারতে যেতে হতো না আবার ছেলেকেও ঢাকায় একা রেখে যেতে হতো না। স্ত্রী-পুুত্র ও সন্তানের প্রতি এই দায়হীনতার শাস্তি তো শাকিবের পাবার কথা। স্বামী সংসার ও স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ববান ও সচেতন হলে ‘বয়ফ্রেন্ড’র প্রশ্ন আসবে কেন? এইসব প্রশ্নের দায় এড়িয়ে উল্টো অপুকেই ডিভোর্সের মুখে ফেললেনে শাকিব

আর দ্বিতীয় অভিযোগের ব্যাপারে অপুর সূত্রটি জানিয়েছে, শাকিব এমন কোনো আদেশ-নিষেধ করেননি অপুকে যা তিনি মেনে চলেননি। শাকিবই কথা দিয়েছিলেন ছেলে জন্মানোর পর তিনি বিয়ে ও সন্তানের খবর সবাইকে জানাবেন। আবারও অপুকে চলচ্চিত্রে ফেরাবেন সারপ্রাইজ দিয়েই। কিন্তু সেই কথা রাখেননি শাকিব। অপুকে তিনি কোথাও বের হতে দিতেন না। স্ত্রী-পুত্রকে আড়ালে রেখে নিজে একের পর এক নায়িকাদের সঙ্গে নানা রকম সম্পর্ক উপভোগ করেছেন।

নিজে একের পর এক সিনেমা করলেও অপু আবার সিনেমায় আসুক সেটাও চাইতেন না শাকিব। অপুও সব মেনেই নিয়েছিলেন। কিন্তু বুবলীকে নিয়ে প্রেম ও বিয়ের খবর চাউর হলে অপু বাধ্য হয়েই শাকিবের অবাধ্য হয়ে প্রকাশ্যে স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করেন। এটা যে কোনো মেয়ের বেলাতেই হতো বলে প্রকাশ্যে আসার পর গণমাধ্যমে দাবি করেছিলেন অপু

নানা জল ঘোলা করে শাকিব মেনে নেন অপুকে। অপু সিনেমা করতে পারবেন না এমন কোনো ঘোষণা শাকিব কোথাও দেননি। বরং বেশ কিছু টিভির অনুষ্ঠানে গিয়ে শাকিব বলেছেন, অপুর সঙ্গে জুটি হয়ে কোনো সমস্যা নেই। তবে এটা ঝুঁকির। কারণ বাস্তব জীবনের স্বামী-স্ত্রী নায়ক-নায়িকা হলে সেই সিনেমা চলে না। কিন্তু তিনি অপুকে সিনেমা করা থেকে বিরত থাকার কথা কোথাও বলেননি। তার ফিটনেস ঠিক হতে হতে সময় লাগবে। যদি অপু নিজেকে তৈরি করতে পারে তবে সেটা তার জন্য ভালো।

তাই অপুও নিজেকে তৈরি করে প্রত্যাবর্তন করতে চাইলেন সিনেমা দিয়ে। দুটি সিনেমাতে চুক্তিবদ্ধও হন তিনি। কিন্তু সেটা শাকিব মানতে পারেননি। অপুর সিনেমা করার বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন গণমাধ্যমে। সেটি জানতে পেরে অপু সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ালেন এবং সিনেমা না করার ঘোষণাও দেন। তবুও কেন শাকিবের এমন অভিযোগ- তার নির্দেশ মানেন অপু? ডিভোর্সের ব্যাপারটি সাজানো কোনো চিত্রনাট্য হতে পারে বলেই অপুর সূত্রের দাবি। শাকিব কোনো একটি মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়েই তাকে ভালোবেসে ধর্ম-জাত ছেড়ে এসে বিয়ে করা অপুকে ডিভোর্স দিতে যাচ্ছেন।

দুটি অভিযোগ মিথ্যে ও সাজানো বলে ভাবছেন অপু এমনটা দাবি করে ওই সূত্রটি জানিয়েছে, এই ডিভোর্সের আবেদনের বিপরীতে আপীল করতে যাচ্ছেন অপু। তিনি চান না সংসার ভেঙে যাক। ছেলের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে তিনি সংসার টিকিয়ে রাখতে চান। দুজনের পরিবারের মানুষদের নিয়ে শাকিবের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান।

এদিকে অপু যে কলকাতায় বয়ফ্রেন্ড নিয়ে হোটেলে রাত কাটিয়েছেন সেই প্রমাণ শাকিবের কাছে রয়েছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। শাকিব দেশে না ফেরা পর্যন্ত সেই প্রমাণের প্রমাণ পাওয়া কঠিন।

তবে চলচ্চিত্র পাড়ায় এই ডিভোর্স নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। শাকিব-অপু এই দুই পক্ষে ভাগ হয়ে চলছে তর্ক বিতর্ক। কেউ বলছেন, নায়িকা হিসেবে একক রাজত্বের লোভে পড়েই শাকিবকে বিয়ে করেছিলেন অপু। সেই লোভের শাস্তি তিনি পাচ্ছেন। কেউ বলছেন, শাকিবের সঙ্গে সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে বোকামির পরিচয় দিচ্ছেন অপু। বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা শাকিবের মত হয়তো পাল্টাতে পারে। কিন্তু স্বামীর ভেতরে ভেতরে সম্পর্ক মরে যাওয়ার যে দুর্গন্ধ সেটা কী সহ্য করতে পারবেন অপু?

কেউ আবার শাকিবকেই দায় দিচ্ছেন এই সম্পর্ক ভাঙনের পেছনে। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের অভাবেই শাকিব বিচ্ছেদের পথে হাঁটলেন। ক্যারিয়ার বলতে অজ্ঞান এই নায়ক ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যক্তিজীবনের জন্য অভিশাপই বয়ে আনলেন বলেও দাবি কারো কারো।

অনেকে আবার এই দম্পতির একমাত্র পুত্র আব্রাম খান জয়ের জন্য মন খারাপ করছেন। ছেলেটি সারা জীবন বাবা ও মায়ের প্রেমময় সম্মিলিত ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে। আবার চলচ্চিত্রের অনেক সিনিয়র মানুষজন এই দুই তারকার বিয়ে-বিচ্ছেদের খবরে বেশ বিরক্তি প্রকাশ করছেন।

তাদের মতে, শাকিব-অপু দুজনই আলোচনা প্রিয় তারকা। নিজেদের সবসময় আলোচনায় রাখতে পছন্দ করেন তারা। একটা সময় খুব ভালো গেলেও দিনে দিনে ইন্ডাস্ট্রিতে গুরুত্ব হারাচ্ছেন তারা। এইসব বিয়ে-বিচ্ছেদের নাটক দিয়ে তারা নিজেদের আলোচনায় রাখছেন। গণমাধ্যমগুলোকে ব্যস্ত রাখছেন তাদের পেছনে। শাকিব-অপুর এইসব বিষয় হাইলাইট করে সংবাদকর্মীরা চলচ্চিত্র ও তার সঙ্গে জড়িতদের ইমেজকে খুব হালকা করে ফেলছেন দর্শকের কাছে। এইসব থামা উচিত।

এলএ