জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের অসমাপ্ত বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার অপপ্রয়াস হিসেবে অনুমান নির্ভর ও কাল্পনিক অভিযোগে এই মামলায় মিথ্যা বর্ণনায় আমাকে জড়ানো হয়েছে।’
Advertisement
আজ (মঙ্গলবার) বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে শেষ দিনের বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাকে, জিয়া পরিবার ও বিএনপিকে হয়রানি করার প্রয়াস হিসাবে এ মামলাটি করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজের সঙ্গে আমি কোনোভাবে জড়িত নই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ মামলায় কোনো সাক্ষী বক্তব্য দেয়নি যে আমি এ ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। মামলার বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মিথ্যা এবং মনগড়া সাক্ষ্য দিয়েছেন আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। তিনি নিরপেক্ষ থাকলে এ রুপ অনুমান নির্ভর সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ থাকতো না।’
Advertisement
আজ (মঙ্গলবার) বেলা সোয়া ১১টার দিকে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালত খালেদার জামিন এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় যুক্তি উপস্থাপন উত্তোলনপূর্বক আত্মপক্ষ সমর্থনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
তবে আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবীরা আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য দিতে আবেদন করলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বিরোধিতা করেন। আদালতে তিনি আবেদন করেন, ‘সাত-সাতদিন তিনি (খালেদা জিয়া) বক্তব্য দিয়েছেন, আর কত? তার লিখিত বক্তব্য নেয়া হোক।’
আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করে বলেন, ‘আজকেই তাকে (খালেদা জিয়া) শেষ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আজকেই (মঙ্গলবার) তাকে বক্তব্য শেষ করতে হবে। শেষ করতে না পারলে লিখিত আকারে দিতে হবে।’ পরে আদালতে খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
Advertisement
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অপর একটি মামলা করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
জেএ/এসএইচএস/পিআর