বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আগামী ১৫ বছরে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিতকায় দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালীতে। শুধু একটি নয়, দ্বীপ মহেশখালীতে একে একে চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এরপর ৫ম অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে টেকনাফের সাবরাংয়ে। কক্সবাজারকে ঘিরে বৃহৎ শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনায় ইতোমধ্যেই এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে মহেশখালীতে ১১ হাজার ৭২৫ একর জমিও নির্বাচন করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজারের উন্নয়ন নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার নানা মেগা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জেলার দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে কাজ শুরু করে সরকার। ‘কক্সবাজার ফ্রি ট্রেড জোন’ নামের এই অঞ্চলটি হবে আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
Advertisement
কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার হামিদেরদ্বিয়া, কুতুবজোম ও ঘটিভাঙ্গা মৌজার ৮ হাজার ৭৮৪ একর এলাকাজুড়ে এ অঞ্চলটি গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ অঞ্চলে বাস্তবায়নাধীন হোয়ানক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। নৌ-পথে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো। এ ছাড়া চরভরাট শ্রেণির জমি হওয়ায় এতে বৈধ বসতি নেই। প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে ভালো নৌ-যোগাযোগ, প্রচুর খাস জমি ইত্যাদি কারণে মহেশখালীতেই ৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার চিন্তা করা হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, কক্সবাজার সদর থেকে সড়কপথে ৪০ কিলোমিটার ও নৌপথে ৪ কিলোমিটার দূরে মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী, পাহাড় ঠাকুরতলা ও গোরকঘাটা মৌজা জুড়ে ১ হাজার ৪৩৮ একর এলাকায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর নাম হবে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-১। মহেশখালীর উত্তর নলবিলা মৌজার ৮২৭ একর জমি জুড়ে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-২ নামে আরেকটি অঞ্চল প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এলাকাটি মহেশখালী চ্যানেলের পাড়ে ও বদরখালী সেতু দ্বারা সারাদেশের সড়ক সংযোগের সঙ্গে যুক্ত। মহেশখালীর ধলঘাটা মৌজার ৬৭৬ একর এলাকাজুড়ে মহেশখালী-৩ নামে আরও একটি অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্রমতে, তিনটি অঞ্চলেই যথাক্রমে মহেশখালী ও মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়া যাবে। দেশের দুই সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে এর নৌ যোগাযোগও ভালো। পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বসতি বা আবাদি জমি নষ্ট করতে হবে না। সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ’র (বেজা) কার্যালয়ে সম্প্রতি বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদের নেতৃত্বাধীন প্রাথমিক স্থান নির্বাচন কমিটির বৈঠকে এ অঞ্চলগুলো নির্বাচিত হয়। কক্সবাজারের ৪টি ছাড়াও দেশের মোট ৭টি জায়গায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বেজার পরবর্তী গভর্নিং বোর্ড সভায় উত্থাপিত হবে। সূত্রটি জানায়, এ অঞ্চলগুলোর মূল উন্নয়ন কাজের জন্য জি টু জি (গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট), পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) ও বেজার সঙ্গে সরকারের অন্য যে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ ভিত্তিতে বিনিয়োগ আহ্বান করা হবে। এর পর বেজার নিয়ম অনুসারে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত দরপত্রগুলো যাচাই-বাছাইয়ের পর যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে প্রাক-যোগ্যতা লাইসেন্স দেয়া হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ধারণা দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আগামী ১৫ বছরে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি চূড়ান্তভাবে মনোনীত ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গভর্র্নিং বোর্ডের সভায় অনুমোদিত হয় বলে সূত্রটি জানিয়েছে। এমএএস/আরআইপি