ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে গেজেট জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ায় তার পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, গেজেট ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
Advertisement
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপ-নির্বাচন নিয়ে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া এবং নির্বাচনটি রাজধানীতে হওয়ায় এর গুরুত্বই আলাদা। সারাদেশের মানুষের চোখ থাকবে এ নির্বাচনের দিকে। যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফলফল পড়বে জাতীয় নির্বাচনে। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আওয়ামী লীগ। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, সিডিউল ঘোষণার আগে প্রার্থী নিয়ে কোনো আলোচনা নয়। একই সঙ্গে দলের মধ্যম ও মাঠপর্যায়ের নেতারা বলছেন, সদ্য প্রয়াত আনিসুল হকের মতো ক্লিন ইমেজের নেতার সন্ধান চলছে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা বা আনিসুল হকের পরিবারেরও কেউ প্রার্থী হতে পারেন। মোট কথা, আওয়ামী লীগ এমন একজন ব্যক্তিকে খুঁজছে যাকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জনগণ আপন মনে করে। আপাতত এ ভাবনায় আছে সরকারি দল।
আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরই যেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে কারণে এ নির্বাচনকে তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। তাদের মতে, অন্য যে কোনো সিটির নির্বাচন আর ঢাকা সিটির নির্বাচন এক নয়। ঢাকার দিকে তাকিয়ে থাকে সারাদেশ। সে কারণে এখানকার নির্বাচনের ভাবনা খানিকটা আলাদা।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ডিএনসিসির উপ-নির্বাচনের প্রার্থী নিয়ে এখনই ভাবছেন না। তারা বলছেন, সিডিউল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই, তবে তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে মধ্যম সারি ও মাঠপর্যায়ের নেতারা ইতোমধ্যে দলের প্রার্থী কারা হবেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে দলের পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক এবং আনিসুল হকের একমাত্র ছেলে নাভিদুল হক। এছাড়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনের এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার, নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি ও চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী, দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান নিখিলের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনিত উত্তরের প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের পদটি শূন্য ঘোষণা করেছে সেহেতু নির্বাচন কমিশন এ উপ-নির্বাচনের ব্যাপারে সিডিউল ঘোষণা করবে। সিডিউল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার বোর্ড এ বিষয়ে আলোচনা করে দলের প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনমুখী দল। আমি আশা করবো আগামীতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উত্তরে যে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেখানে সকল দল অংশ নেবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, অবশ্যই ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। তিনি বলেন, ডিএনসিসির মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তবে কিছুদিনের মধ্যেই এ নিয়ে দলীয় পর্যায়ে আলোচনা হবে।
Advertisement
ডিএনসিসির উপ-নির্বাচনের বিষয়ে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এক প্রশ্নের জবাবে জাগো নিউজকে বলেন, উপ-নির্বাচনের প্রার্থী নিয়ে ভাবার সময় এখনো আসেনি। কোন জটিলতা, বাধা-বিপত্তি যদি না থাকে তাহলে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সিডিউল ঘোষণা করবে। সিডিউল ঘোষণার পর প্রার্থী নির্বাচনের বিষয় নিয়ে দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হবে। দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিএনসিসির প্রার্থী চূড়ান্তের আগে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়ে তাদের মতামত নেয়া হবে। এ আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা-১১ আসনের এমপি একেএম রহমতুল্লাহ, ঢাকা-১২ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-১৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৪ আসনের এমপি আসলামুল হক আসলাম, ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-১৬ আসনের এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা ও ঢাকা-১৮ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।
আগামী ৯০ দিনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর ফলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সোমবার ঢাকা উত্তরের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এখন নির্বাচনী আইন অনুযায়ী আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে জানুয়ারিতে এ সিটি কর্পোরেশনের উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে আনিসুল হক মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেন। সিটি কর্পোরেশন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ছাড়াও বেশকিছু উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেন তিনি। উত্তরের যানজট নিরসণেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। তার কর্মপরিকল্পনা ও বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে খুব অল্প সময়ে জনগণের প্রিয় নগর পিতায় পরিণত হন আনিসুল হক।
এফএইচএস/এমএআর/বিএ
Advertisement