ডালিয়া সুন্দর একটি ফুল। এটি কম্পোজিটি পরিবারভুক্ত। এর আদি বাসস্থান মেক্সিকোর গুয়াতেমালায়। বাংলাদেশেও ডালিয়া ফুল চাষ করা যায়। আসুন জেনে নেই ডালিয়া চাষের নিয়ম-
Advertisement
নামকরণলর্ডবুটি নামের এক ব্যক্তি স্পেন থেকে ডালিয়া ফুল প্রথমে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। সেই ফুল দেখে সুইডেনের উদ্ভিদতত্ত্ববিদ আন্দ্রিয়াস গুস্তাভ ডাল নিজের নামানুসারে এর নাম রাখেন ডালিয়া।
শ্রেণিডালিয়া ১১টি শ্রেণির আওতাভুক্ত। বাংলাদেশে সব শ্রেণির ফুল পাওয়া না গেলেও বেশকয়েক শ্রেণির ডালিয়া চাষ করা যেতে পারে।
জাত উন্নত জাতের মধ্যে রয়েছে- সিঙ্গল, স্টার, অ্যানেমিন ফাওয়ার্ড, কলারেট, পিওনি ফাওয়ার্ড, ফরমাল ডেকোরেটিভ, ইন ফরমাল ডেকোরেটিভ, ডবল শো ফ্যান্সি, পম্পন, রয়্যাল হোয়াইন, ক্যাকটাস, ভ্যারাইটি গার্ল প্রভৃতি।
Advertisement
মাটি উর্বর দো-আঁশ মাটি বা বেলে দো-আঁশ প্রকৃতির ঈষৎকার মাটি ডালিয়া চাষের জন্য উত্তম। ছায়াযুক্ত স্থানে গাছ দুর্বল ও লম্বা হয়, ফুল কম ও ছোট হয় এবং রঙের ঔজ্জ্বল্য হ্রাস পায়। ফলে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমিতে ডালিয়ার চাষ করতে হবে।
জলবায়ু ডালিয়া চাষ করতে আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যেদিন বৃষ্টি হবে সেদিন থেকে যতদিন পর্যন্ত মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকবে ততদিন পানি দেওয়ার দরকার নেই। আবার গরমের সময়ে মাটি যখন শুকনো হয়ে ওঠে তখন পানির পরিমাণ বাড়িয়ে মাটি আর্দ্র করে তুলতে হবে। কারণ ডালিয়া গাছের জন্য আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। তবে মাটি বেশি ভিজে কাদাকাদা হয়ে গেলে তা গাছের জন্য তেমন উপকারী হবে না। টবের গাছের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা করা উচিত। বৃষ্টির সময়ে গাছের ওপর ছাউনি দিতে পারলে ভালো কিংবা কোনো ছাউনির নিচে রাখলে গাছ নিরাপদে থাকবে। টবের গাছের ক্ষেত্রে প্রতিদিন নিয়ম করে পানি দিয়ে মাটিকে আর্দ্র রাখা উচিত।
বংশবিস্তারডালিয়া বীজ, মূলজ কন্দ, ডাল কলম এবং ক্ষেত্রবিশেষে জোড় কলমের সাহায্যে বংশবিস্তার করে।
মূলজ কন্দ ডালিয়া গাছের গোড়ায় জন্মানো মূলজ কন্দ পরবর্তী বছর চারা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ফুল শেষে গাছ নিস্তেজ হয়ে পাতা ও ডাঁটা শুকিয়ে এলে কন্দ পরিপক্ক ও সংগ্রহ উপযোগী হয়। মাটির নিচ থেকে অক্ষত অবস্থায় কন্দ তুলে দু’-একদিন বাতাসে শুকিয়ে আলুর মতো শুষ্ক বালুতে সংরক্ষণ করতে হয়। এরপর ভাদ্র-আশ্বিন মাসে কন্দগুলোকে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক বালু মিশ্রিত বীজতলা বা টবে রোপণ করে সামান্য পানি সিঞ্চন করলে কয়েক দিনের মধ্যে কন্দের চোখ থেকে নতুন চারা বের হয়। চারা দুই থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা হলে মূলজ কন্দটিকে চারাসহ কেটে টুকরো করে নির্ধারিত জমিতে বা টবে রোপণ করা চলে।
Advertisement
ডাল কলমআশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাসে ডালিয়ার ডাল কলম করা যায়। এ সময়ে মূলজ কন্দে জন্মানো কচি চারা বা ডাল থেকে গিটসহ কেটে বা ভেঙে নিতে হয়। তাছাড়া পুষ্ট কন্দ বা কাণ্ডের পাশে জন্মানো ১৫-২০ সেন্টিমিটার লম্বা পুষ্ট ডাল ও গিটসহ সংগ্রহ করা চলে।
সার প্রতি ১০০ বর্গ মিটার জমিতে ২০০ কেজি গোবর, তিন কেজি কাঠের ছাই ও দুই কেজি টিএসপি সার মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হয়। ভারি মাটিতে গোবরের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া ভালো। টবে ডালিয়া চাষের জন্য ২ ভাগ দো-আঁশ মাটি, ২ ভাগ বালি, ২ ভাগ কাঠের ছাই, ১ ভাগ পাতা পচা সার, ১ ভাগ গোবর, ১ ভাগ খৈল ও ১ ভাগ টিএসপি সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হয়।
চারা রোপণ ডালিয়া চাষের জমিতে জাতভেদে ৬০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে প্রতিটবে একটি চারা রোপণ করতে হয়। টবের আকার ২৫ সেন্টিমিটার হলে ভালো হয়।
পরিচর্যা চারা লাগানোর পর থেকে গাছে এমনভাবে সেচ দিতে হয়, যাতে কখনো পানির ঘাটতি না পড়ে এবং জলাবদ্ধতা দেখা না দেয়।
রোগ-বালাইডালিয়া গাছে সাধারণ রেড স্পাইডার ও রেড মাইভ ধরনের পোকা হয়। এ পোকা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় হলো- প্রতিসপ্তাহে নিয়ম করে ক্যালিথিন বা নোবাকন নামে ওষুধের ২০ ফোঁটা এক লিটার পানিতে ভালো করে গুলিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়ে ঝারির সাহায্যে গাছগুলোকে ভিজিয়ে দিতে হয়।
এসইউ/আইআই