জাতীয়

বদলির আদেশ মানছেন না জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা

ঢাকার বাইরের কর্মস্থলে বদলির আদেশ মানছেন না জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা। আদেশ হাতে পাওয়ার পর পরই বদলি ঠেকাতে মন্ত্রী, সচিব, সাংসদ, রাজনৈতিক ও চিকিৎসক নেতাদের দিয়ে তদবির শুরু হয়। আবার কেউ কেউ প্রয়োজনে সরকারি চাকরি ছাড়ার হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে শিক্ষক সংকট দূর করতে সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার কমপক্ষে ৫ জন চক্ষু বিশেষজ্ঞকে ঢাকার বাইরের দুটি মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়। এর মধ্যে ৯ ফেব্রুয়ারী চারজনের ও ১৫ এপ্রিল ১ জনের বদলির আদেশ জারি  হয়।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৯ ফেব্রুয়ারী ডা. মো. শাহিনুর রহমানকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব), ডা. মো. আবদুর রশীদ, সহযোগী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) চক্ষু, ওএসডি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে সংযুক্তি দিয়ে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে, ডা. মো. আবিদ কামালকে সহযোগী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) চক্ষু, ওএসডি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে সংযুক্তি দিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজে ও ডা. মিজানুর রহমান মিয়াকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) চক্ষু বিভাগে বদলি করা হয়। একইভাবে পৃথক এক আদেশে গত ১৫ এপ্রিল খুলনা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) চক্ষুকে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়। কিন্তু তারা কেউ সেখানে যোগদান করেনি।গত ১ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এ কে এম ফজলুল হক স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই পাঁচ সিনিয়র শিক্ষককে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের আদেশ দেয়া হয়। অন্যথায় তারা বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষনিকভাবে অবমুক্ত হবেন বলে উল্লেখ করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিনিয়র শিক্ষকরা সবাই রাজধানী ঢাকা কিংবা তার পছন্দের কর্মস্থলে চাকরি করতে চান। আদেশ হাতে পাওয়ার পর পরই বদলি ঠেকাতে মন্ত্রী, সচিব, সাংসদ, রাজনৈতিক ও চিকিৎসক নেতাদের দিয়ে তদবির করাতে থাকেন। কেউ কেউ প্রয়োজনে সরকারি চাকরি ছেড়ে দেয়ারও হুমকি দেন বলে জানা যায়।স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সম্প্রতি বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠককালে ঢাকার বাইরে শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষকের অভাবে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ বিশেষ করে নতুন চালু হওয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে জেনেও  সিনিয়র শিক্ষকদের বদলির আদেশ অমান্য করার বিষয়টি খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জানা গেছে, বদলির আদেশ অমান্য করার ঘটনাটি শুধুমাত্র এই পাঁচ চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ক্ষেত্রে ঘটেছে তা নয়, মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের বদলির আদেশ প্রায়শই অমান্য হলেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় তা জনসন্মুখে প্রকাশ পায়না।গত ১৫ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক আদেশে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রধানদের কাছে তাদের প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ওএসডি ও সংযুক্তির মাধ্যমে অবস্থানরত অধ্যাপকদের তালিকা চেয়ে পাঠান।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে বেশ কিছু সংখ্যক সিনিয়র চিকিৎসককে গাইনি, নিওনেটালজি ও বার্ণ অ্যান্ড প্লাষ্টিক সার্জারির শিক্ষক হিসেবে বদলি করা হয়। তাদের সকলকে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বেঁধে দিয়ে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের আদেশ দেয়া হলেও অনেকেই কাজে যোগদান করেননি। কেউ কেউ যোগদান করলেও ছুটি নিয়ে ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছেন। এমইউ/এআরএস/এমএস

Advertisement