জাতীয়

নগরপিতার মৃত্যুতে কাঁদছে নগর

সদ্যপ্রয়াত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হকের মরদেহ শনিবার সকালেই লন্ডন থেকে ঢাকায় আনা হয়। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তার মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।

Advertisement

আনিসুল হক শুধু নগরপিতা হওয়ার সুবাদেই নন, তিন দশক আগে থেকেই একাধারে একজন সফল টিভি উপস্থাপক ও ব্যবসায়ী হিসেবে লাখো মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। ফলে তাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে গত দুদিন যাবৎ নগরবাসীদের অনেকেই উন্মুখ হয়েছিলেন।

তার পরিবারের সদস্যরা বনানীর বাসভবনে নগরবাসীকে ভিড় না করতে অনুরোধ জানিয়ে বলেছিলেন, সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আর্মি স্টেডিয়ামে নেয়া হবে। পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী বিকেল সাড়ে ৩টায় তার মরদেহ সেখানে নেয়া হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এর আগেই অনেকেই তাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মানুষটিকে একনজর দেখতে শনিবার সকাল থেকেই বিমানবন্দর ও পরবর্তীতে তার বাসভবনে ভিড় জমান। যেন নগরপিতার মৃত্যুতে কাঁদছে নগর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং শীর্ষ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ চা বিক্রেতা, মুদি দোকানিসহ সর্বস্তরের জনগণ এ নগরপিতাকে শেষ দেখা দেখতে তার বাসভবনের আশপাশে ভিড় করেন। তবে সেখানে যাতায়াতে নিয়ন্ত্রণ ছিল পুলিশের। হাতেগোনা কিছু মিডিয়াকর্মী ছাড়া অন্য কাউকে সেখানে যেতে দেয়া হয়নি।

Advertisement

ওবায়দুল কাদের শনিবার আনিসুল হকের বাসভবনে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, আনিসুল হক ছিলেন একপিস, তোর মতো আরেকজন খুঁজে পাওয়া কঠিন। তার দুচোখ ভরা স্বপ্ন ছিল, স্বপ্ন ছিল ঢাকাকে আধুনিক সিটি হিসেবে গড়ে তুলবার।

তিনি বলেন, আসিনুল হক মানুষকে ভালোবাসতেন, তাই মানুষও তাকে ভালোবাসে। তার প্রমাণ আজ তার বাসভবনে ও নগরীতে শোকাতুর মানুষের ঢল। একজন মানুষ কত জনপ্রিয় হলে মানুষের ভালোবাসার ঢেউ এভাবে উপচেপড়ে। আজকে মহানগরীতে সেই দৃশ্যপটাটাই দেখলাম। বহু মানুষকে কান্নার নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, একজন কোমল ব্যক্তি ছিলেন আনিসুল হক। তার কোনো তুলনা হয় না। বাংলাদেশের মানুষ তার কথা সারাজীবন স্মরণ করবে। তার সততা, তার ব্যবহার, ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন অমায়িক ও বিনয়ী। আবার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ছিলেন কঠিন। সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি ভুল করতেন না। বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পিছপা হতেন না। তার অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণে যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এর আগে শুক্রবার বাদ জুমা আনিসুল হকের প্রথম জানাজা লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক সেন্ট্রাল মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা অংশ নেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

শনিবার বিকেল সোয়া ৪টায় রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা সম্পন্ন হয়। এখান থেকে মরদেহ নিয়ে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এফবিসিসিআই-এর সভাপতি ছিলেন আনিসুল হক। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।

এমইউ/জেডএ/জেআইএম