জাতীয়

ক্যান্সার নির্ণয়ে সরকারি হাসপাতালে কোনো ফিজিসিস্ট নেই!

ক্যান্সার রোগীদের সঠিক ও নির্ভুল রোগ নির্নয় এবং প্রয়োজনীয় রেডিওথেরাপি চিকিৎসা দেয়ার জন্য ‘মেডিকেল ফিজিসিস্ট’ এর পদ থাকা অত্যাবশ্যক হলেও দেশের সরকারি কোনো হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত এ পদটি নেই!নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যান্সার চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত অত্যাধুুনিক এক্সিলেরেটরসহ (লিনিয়াক) বিভিন্ন সহযোগী মেশিন পরিচালনা ও ক্যান্সার রোগীদের টার্গেটেড (সুনির্দিষ্ট ডোজ ও মাত্রায়) রেডিওথেরাপি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে মেডিকেল ফিজিসিস্ট মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন।তারা জানান, প্রতিবেশি দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফিজিসিস্ট ছাড়া ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা প্রদান নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশে ফিজিসিস্ট ছাড়াই হাজার হাজার ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের তিনটি সরকারি হাসপাতালে (জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান) ক্যান্সার রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য ছয়টি অত্যাধুনিক লিনিয়ার এক্সিলেরেটর (লিনিয়াক) মেশিন রয়েছে। অত্যাধুনিক এ মেশিনের প্রতিটির দাম সর্বনিম্ন আট কোটি থেকে সর্বোচ্চ ১৬ কোটি টাকা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মূল্যবান এ মেশিনগুলো পরিচালনার জন্য ফিজিসিস্ট থাকা অত্যাবশ্যক হলেও তিন সরকারি হাসপাতালের একটিতেও নিয়োগপ্রাপ্ত ফিজিসিস্ট নেই। মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ভাড়াটে ফিজিসিস্টদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান দিয়ে ক্যান্সার রোগীর রোগ নির্নয় ও চিকিৎসা চলছে!বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে বর্তমানে দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১২ লাখ। প্রতি বছর নতুন করে দুই লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত ও দেড় লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে।বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিক্সের পথপ্রদর্শক জার্মানির কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু গোলাম জাকারিয়া জাগো নিউজকে বলেন, যেকোনো ধরনের ক্যান্সার রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগে চিকিৎসক, ফিজিসিস্ট ও টেকনোলজিস্ট পদ থাকা অত্যাবশ্যক। কোন ধরনের ক্যান্সার রোগীকে কোন ধরনের টার্গেটেড রেডিওথেরাপি দিতে হবে তা নির্নয়ের মূল দায়িত্ব ফিজিসিস্টের। কিন্তু দুঃখজনক হলে তিনি দীর্ঘদিন যাবত ফিজিসিস্ট নিয়োগের প্রচেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিক্স সোসাইটি (বিএমপিএস) কুমারেশ চন্দ্র পাল জানান, বেশ কয়েক বছর আগে  জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক)  হাসপাতালের সহযোগী, সহকারী ও মেডিকেল ফিজিসিস্টের ১১টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে যখন চার সহস্রাধিক অ্যাডহক চিকিৎসক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি হয় তখন ফিজিসিস্ট নিয়োগের জন্য তিনটি পদে আবেদন চাওয়া হয়। পরবর্তীতে নিয়োগ বিধি না থাকার দোহাই দিয়ে ওই পদে নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়। বিএমপিএস-এর সাধারণ সম্পাদক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রচলিত সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি পদ্ধতির মধ্যে রেডিওথেরাপি তুলনামূলক ব্যয়বহুল। ক্যান্সার রোগীদের শতকরা ৬০ ভাগ কোনো না কোনোভাবে রেডিওথেরাপির আওতায় আসে। এ চিকিৎসা শুধুমাত্র চিকিৎসক দিয়ে প্রধান সম্ভব নয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড সায়েন্সের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের নিয়মানুযায়ী আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মেডিকেল ফিজিসিস্ট ও রেডিওথেরাপিস্ট টেকনিশিয়ানের একটি টিম অত্যাবশ্যক হলেও সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল ফিজিসিস্টের স্থায়ী কোনো পদ নেই।জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে যে সকল প্রতিষ্ঠান লিনিয়াক মেশিন সরবরাহ করে তাদের কোম্পানি থেকে ফিজিসিস্ট সরবরাহ করা হয়। তার বেতন-ভাতা মেশিন বিক্রির সময় আদায় করা হয়। অভিযোগ রয়েছে বেশিরভাগ সময় ফিজিসস্টি উপস্থিত থাকেন না। রেডিওথেরাপি বিভাগের টেকনোলজিস্টদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তারা দায়সারা কাজ করেন। জানা যায়, সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়।  এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ পর্যন্ত ৩০ জন মেডিকেল ফিজিসিস্ট পাস করে বেরিয়েছেন। বর্তমানে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিক্স সোসাইটির সম্মেলন : আগামী ৭ জুলাই বিএমপিএস-এর চতুর্থ বার্ষিক সম্মেলন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ভবনে অনুষ্ঠিত হবে। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা জানান, দেশে মেডিকেল ফিজিক্স শিক্ষা ও ক্যান্সার চিকিৎসায় মেডিকেল ফিজিসিস্টদের ভূমিকা ও গুরুত্ব তুলে ধরতে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। দেশ-বিদেশের দুই শতাধিক মেডিকেল ফিজিসিস্ট ও বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনে ৪৬টি বৈজ্ঞানিক পেপার উপস্থাপন করা হবে। এমইউ/বিএ/আরআইপি

Advertisement