দুই দিন বিরতি দিয়ে আজ (শনিবার) থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা পর্বের লড়াই। এর আগে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন সকাল থেকেই সরগরম ছিল শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। এক সপ্তাহের বেশি সময় পর আবার প্রাণ চাঞ্চল্যতা ফিরলো হোম অফ ক্রিকেট। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের উত্তর দিকে একাডেমি মাঠে ছিল প্রতিযোগি দলগুলোর সরব উপস্থিতি।
Advertisement
সকাল নয়টায় শেরে বাংলার মূল গেটে ঢুকলো খুলনা টাইটান্সের বাস। মাহেলা জয়বর্ধনের শিষ্য তথা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাহিনী প্র্যাকটিস শেষ হবার আগেই এসে হাজির মাশরাফি বিন মুর্তজার রংপুর রাইডার্স। প্রায় একই সময় অনুশীলন করলো চিটাগং ভাইকিংস। জুমার নামাজের আগেই চলে আসলো মোস্তাফিজ, মুমিনুল ও মিরাজদের রাজশাহী কিংস।
জুমায়ার নামাজের পর আড়াইটার মধ্যে খালেদ মাহমুদ সুজন আর সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস, মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স আর সিলেট সিক্সার্স, একের পর এক দলের অনুশীলনে কাটলো প্রায় সারা দিন। কারণ একটাই। পূন্য ভূমি সিলেট, রাজধানী ঢাকা আর বন্দর নগরী চট্টগ্রাম হয়ে আবার রাজধানী ঢাকায় ফিরছে বিপিএল। আজ (শনিবার) থেকে আবার শুরু বিপিএলের মাঠে লড়াই।
লড়াই শুধু কাগজে কলমেই নয়। মাঠেও। সত্যিকার লড়াই শুরু হয়ে গেছে। কোন পর্বের গুরুত্ব কম নয়। তবে ঢাকার এই পর্বটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারন ২ ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর যে খেলাগুলো হবে, তার প্রায় সবকটারই রয়েছে অন্যরকম গুরুত্ব। ঢাকার এই পর্বেই নিশ্চিত হবে কোন চার দল যাবে কোয়ালিফাই রাউন্ডে। এখনো সেরা চার দলের মধ্যে থাকা নিয়ে চলছে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যদিও তামিম ইকবালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খুলনা টাইটান্সের সেরা চারে থাকা নিশ্চিত।
Advertisement
বাকি দুই অবস্থান নিয়ে তুমুল লড়াই; সাকিব আল হাসানের ঢাকা ভায়নামাইটস, মাশরাফির বিন মুর্তজার রংপুর রাইডার্স ও মুশফিকের রাজশাহী কিংসের। চট্টগ্রামেই সেরা চারে থাকা নিশ্চিত করেছে কুমিল্লা ও খুলনা।
ওপরের অংশ পড়ে আবার ভাববেন না, শনিবার থেকে রবীন লিগের যে শেষ পর্ব শুরু হবে, তা বুঝি কুমিল্লা ও খুলনার জন্য কম গুরুত্বের। মোটেই তা নয়। এই দুই দলের কাছে এই পর্বের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ভিন্ন। তাদের সামনে আছে এক ও দুই নম্বরে থেকে সেরা চারে থাকার সুবর্ণ সুযোগ। যেহেতু এলিমিনেটর আছে, তাই প্রথম কিংবা দ্বিতীয় স্থানে থাকলে ফাইনালে খেলার সুযোগ একটু বেশিই। প্রথম লড়াই হবে পয়েন্ট টেবিলে থাকা এক ও দুই নম্বর দলের ভেতরে। ঐ ম্যাচের বিজয়ী দল সরাসরি চলে যাবে ফাইনালে। আর কোয়ালিফাইয়ার একের পরাজতি দল খেলবে এলিমিনেটর পর্বের প্রথম ম্যাচের বিজয়ীর সঙ্গে। ঐ খেলার বিজয়ী দলের জায়গা হবে ফাইনালে। মোদ্দা কথা কুমিল্লা ও খুলনার সেরা চারে থাকা নিশ্চিত। এখন তাদের অবস্থান শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াবে? তারা কি এক ও দুইয়ে থেকে কোয়ালিফায়ার একে মুখোমুখি হবার বাড়তি সুবিধা নিতে পারবে তা সামনের দিনগুলোয় পরিষ্কার হবে।
এদিকে আজ দুটি খেলা। দুপুর একটায় দেখা হবে মাশরাফি-তামিমের। আর সন্ধ্যা ছয়টায় মুখোমুখি হবে সাকিবের ঢাকা ও মুশফিকের রাজশাহী। নয় খেলায় অংশ নিয়ে সর্বাধীক সাত ম্যাচ জেতা কুমিল্লার পয়েন্ট ১৪। অন্যদিকে সেরা চারে থাকার জোর লড়াই করা রংপুর রাইডার্সের পয়েন্ট ৯ খেলায় ১০ পয়েন্ট।
অন্যদিকে ১০ খেলায় ঢাকার সংগ্রহ ১১ পয়েন্ট। আর সমান খেলায় মুশফিক, মুমিনুল, মিরাজদের পয়েন্ট আট। কুমিল্লা ও খুলনা ছাড়া এখন সেরা চারের অপর দুই দল হবার লড়াইয়ে ঢাকা, রংপুর ও রাজশাহী। তাই বলে যে সিলেট সিক্সার্সও যে বাদ তাও বলা যাবে না। গাণিতিক সমীকরণে নাসির বাহিনীরও সম্ভাবনা আছে। তবে সেটা অনেক ‘যদি ও তবের’ ওপর নির্ভর করে।
Advertisement
তবে এ মুহূর্তে ১০ খেলায় ১১ পয়েন্ট থাকা ঢাকা আর নয় খেলায় ১০ পয়েন্ট পাওয়া রংপুরের সমীকরণটা অত জটিল না। মাশরাফির দল আর সাকিব বাহিনী আর একটি করে ম্যাচ জিতলেই হয়তো সেরা চারে পৌঁছে যাবে। রংপুরের খেলা বাকি আছে তিন জায়ান্ট কুমিল্লা, খুলনা ও ঢাকার সঙ্গে। অন্যদিকে রাজশাহী কিংসের খেলা বাকি ঢাকা ও চিটাগং ভাইকিংসের। তাই দুই দল শনিবার জিততে মরিয়া।
অন্যদিকে বর্তমানে রাজশাহীর পয়েন্ট ১০ খেলায় আট। আজ ঢাকাকে হারাতে পারলে পয়েন্ট দাঁড়াবে ১০। তখন রাজশাহীর সমীকরণ একটু সহজ হবে। কারণ রাজশাহীর শেষ খেলা হলো টেবিলে তলানিকে থাকা চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে। সৌম্য সরকারের দল ইতোমধ্যেই এবারের বিপিএল থেকে বিদায় নিয়েছে। ১০ খেলায় দুটি মাত্র জয় পাওয়া আর বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত আরেক ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পাওয়া চিটাগংয়ের সংগ্রহ দাঁড়াবে নয়। যা দিয়ে হবে না।
একই অবস্থা প্রায় সিলেট সিক্সার্সের। সিলেট পর্বে প্রথম তিন ম্যাচ জেতা নাসির ও সাব্বির বাহিনীর বর্তমান পয়েন্ট ১০ খেলায় সাত। শেষ দুই ম্যাচ জিতলে সংগ্রহ দাঁড়াবে ১১। কিন্তু টেবিলের যা অবস্থা তাতে ১১ পয়েন্ট নিয়ে সেরা চারে জায়গা পাবার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। কারণ টেবিলের যে চালচিত্র তাতে চার নম্বর দলেরও হয়তো পয়েন্ট থাকবে ১২। তার কমে সেরা চারে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা সত্যিই খুব কম।
এআরবি/এমআর/এমএস