ঈদকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন দর্জিপাড়ার কারিগররা। তাদের হাতে মোটেও সময় নেই কেননা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তৈরি পোশাক সরবরাহ করতে হবে। পছন্দের পোশাক বানাতে দর্জিবাড়িতে ভিড় জমেছে সৌখিন গ্রাহকদের। ঈদকে সামনে রেখে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।জেলার অভিজাত হাওলাদার মার্কেট, টাউন প্লাজা ও মাসুদ হাইটস মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, প্রায় তিন শতাধিক দর্জির দোকানে অর্ডারিদের ভিড়ে জমজমাট আকার ধারণ করেছে। আর উৎসব আসলেই মার্কেটগুলোতে নারীদের পদচারণা বাড়তে থাকে।ঠাকুরগাঁও নর্থ সার্কুলার রোডের একটি দর্জিদোকানের মালিক মোবারক হোসেন জাগো নিউজকে জানান,পচিশজন কারিগর দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। রোজার আগে কাজের অর্ডার বেশি থাকায় আরো কয়েকজন কারিগর নিয়োগ দিয়েছেন। তারপরও গ্রাহক সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তিনি জানান, কাজের অর্ডার এখন পর্যন্ত ভাল হলেও তা গত বছরের তুলনায় কম। ঈদের আগে অর্ডার আরো বাড়তে পারে।ঠাকুরগাঁও বিভিন্ন মার্কেটে দর্জির দোকানের কারিগরদের এখন দম ফেলার জো নেই। দিন-রাত নতুন নতুন পোশাক বানিয়ে চলেছেন তারা।নজরুল ইসলাম, নামে এক গ্রাহক জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি তৈরি করা শার্ট-প্যান্ট পরেন। প্রতি বছর তিন থেকে চার সেট পোশাক বানাতে হয় তার। ব্যতিক্রম হয়নি এবারের ঈদেও। একটি অভিজাত দোকানে একটি শার্ট ও একটি প্যান্ট ৮০০ টাকা মজুরিতে সেলাই করিয়েছেন তিনি।দর্জির দোকানের ম্যানেজার আকবর হোসেন জাগো নিউজকে জানান, অন্য দর্জিদের তুলনায় তার সার্ভিস ভালো। গ্রাহকও বেশি। তাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাপড় সেলাই শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।ইডেন টেইলার্সের বিক্রয় কর্মকর্তা জাগাে নিউজকে বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা আধুনিক ফ্যাশনের পোশাক তৈরি করেন। এ কারণে তাদের দোকানে প্রচুর ভিড় হচ্ছে। রমজানের আগেই কাজের চাপ শুরু হয়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় চাপ অনেক কম।ঠাকুরগাঁও হাওলাদার মার্কেটে পোশাক বানাতে এসেছেন জেসমিন আক্তার। তিনি জাগাে নিউজকে বলেন, ঈদের সময় সবাই চায় নতুন পোশাক পরতে। রেডিমেড পোশাকের দোকানে একই নকশার অনেক পোশাক থাকে। ফলে সেখান থেকে কেনা পোশাকটির স্বাতন্ত্র্য অনেক ক্ষেত্রেই থাকে না। এজন্য প্রতিবারই ঈদে নিজের পছন্দমতো কাপড় কিনে দর্জির কাছে বানাতে দেই।দর্জি দোকান মালিক আবদুল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর অর্ডার কম হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কথা হয় ঠাকুরগাঁও এলিট টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী আকবর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা নেই। অন্যদিকে চাকরিজীবীরা জুলাই মাসের বেতন হাতে না পাওয়ায় পোশাক তৈরির অর্ডার কম হচ্ছে।টেইলার্সের মাস্টার হারুন অর রশীদ বলেন, সামগ্রিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খুব খারাপ। আর তার প্রভাব দর্জিপাড়ায় পড়েছে।পোশাকের মজুরি প্রসঙ্গে তিনি জানান, অন্যান্য সময়ে একটি প্যান্টের মজুরি নেওয়া হয় ৩৬০ টাকা। কিন্তু ঈদের সময় কারিগরদের পারিশ্রামিক বেড়ে যাওয়ায় এর মজুরি দাঁড়ায় ৩৯০ টাকা। অন্যদিকে শার্টের মজুরি ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৩৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।বড় মার্কেটের দর্জি দোকান ছাড়াও বিভিন্ন ছড়ানো ছিটানো সকল দর্জিবাড়িতেই বাড়তি ভিড়। কোনো কোনো দর্জি দোকানে থান কাপড়ও বিক্রি হচ্ছে। কয়েকজন টেইলার্স মালিক জাগো নিউজকে জানান, তারা ভালো ব্যবসার জন্য ঈদ মৌসুমের অপেক্ষায় থাকেন। এসময়ে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় এবং তা অব্যাহত থাকে চাঁদ রাত পর্যন্ত।এমজেড/এমআরআই
Advertisement