বাহ্ কী দারুণ মিল! তিনদিন আগের মতো আবারও শেষ ওভারে রুদ্ধশ্বাস লড়াই। এবারো বিজয়ী দলের নাম মাশরাফির রংপুর রাইডার্স। পার্থক্য একটাই- মাত্র ৭২ ঘণ্টা আগে শেষ ওভারে চিটাগংয়ের পেসার তাসকিন আহমেদের করা খেলার শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দারুণ এক জয় এনে দিয়েছিলেন থিসারা পেরেরা।
Advertisement
কিন্তু শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের হয়ে ডাক পড়ায় দেশে ফিরে গেছেন ওই লঙ্কান পেস বোলিং অলরাউন্ডার। চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ওই ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের শেষ ওভারে দরকার ছিল ১০ রানের। আর আজ সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে জিততে হলে শেষ ছয় বলে ৯ রান প্রয়োজন ছিল মাশরাফি বাহিনীর।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এবার রংপুরের ত্রাণকর্তা খোদ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। বোলার ছিলেন ইংলিশ পেসার টিম ব্রেসনান। আর স্ট্রাইকে রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রথম বল অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ওয়াইড। পরের বল একটু ইয়র্কার লেন্থের; মাশরাফি সপাটে হাঁকালেন।
কিন্তু লেন্থ খুব বেশি ভালো থাকায় বল দূরে না গিয়ে সোজা চলে গেল বোলার ব্রেসনানের হাতে। তৃতীয় বল ফুলটচ; সামনের পায়ের ওপর ভর করে মাশরাফি তুলে দিলেন। লং অনের ওপর দিয়ে বল সোজা গিয়ে আছড়ে পড়লো সীমানার ওপারে।
Advertisement
তার পরের বল ইয়র্কার লেন্থের। ফুলটচ বানিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ঠেলে সিঙ্গেলস। এরপরের বল আবার ফুলটচ। এবার অফ ড্রাইভ ব্যাটসম্যান নাহিদুল ইসলামের। বল সোজা চলে গেল সীমানার ওপারে। এরই সঙ্গে ৪ উইকেটের সরণীয় জয় ধরা দিল রংপুরের।
উইনিং স্ট্রোকটা তার ব্যাট থেকে না আসলেও সাত নম্বরে নেমে অধিনায়ক মাশরাফি খেললেন ১০ বলে ১৭ রানের ছোট্ট অথচ খুব দরকারি একটি ইনিংস। থিসারা পেরেরা নিচে আছেন। বোলিংয়ের পাশাপাশি এ লঙ্কানের সামর্থ্যও পর্যাপ্ত। ওভার পিছু ১০ থেকে ১২ রান তুলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেবার ক্ষমতা রাখেন। যার প্রমাণ দিয়েছেন ঠিক আগের ম্যাচেই। আজ তিনি নেই।
নিচের দিকে মানে ফিনিশিংয়ে কাউকে তো দরকার! সে কাজটি করবেন কে? অনেক ভেবে চিন্তে অধিনায়ক নিজেই ফিনিশারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। তাই তো ব্যাটিং অর্ডারে খানিক রদবদল।
চিটাগং ভাইকিংসের সঙ্গে নিজে তিন নম্বরে নামলেও আজ ক্রিস গেইলকে ওপেনার হিসেবে রেখে তার সঙ্গে জিয়াকে ওপরে নিয়ে যাওয়া। গেইল-জিয়ার উদ্বোধনী জুটি। আর তিন নম্বরে নিউজিল্যান্ড সুপার স্টার ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।
Advertisement
এ ফর্মুলা মোটামুটি কাজে দিল। শেষ দিকে নেমে পরপর কয়েক ম্যাচে কিছু করতে না পারা জিয়া আজ নতুন বলে ছয় ওভারের পাওয়ার প্লে‘তে ফিল্ডিং বিধিবদ্ধতা কাজে লাগিয়ে ২০০.০০ স্ট্রাইক রেটে ১৮ বলে খেলে ফেললেন ৩৬ রানের এক ঝড়ো ইনিংস। গেইল কিছু করতে পারেননি। আউট হলেন তিন বলে ৫ রান করে।
তিন নম্বরে নামা ম্যাককালামও খেললেন ভিন্ন মেজাজে। হাতে খুলে খেলার বদলে ব্রেন্ডন মনোযোগী হলেন একদিক আগলে রানের চাকা সচলের কাজে। ৩৮ বলে ৪৩ রানে ম্যাককালাম আবুল হাসান রাজুর স্লোয়ারে তুলে মারতে গিয়ে ডিপে ক্যাচ আউট হবার পর আরেক বিদেশি রবি বোপারাও দল জিতিয়ে সাজঘরে ফেরার চেষ্টা করলেন; কিন্তু টার্গেট বড়; ১৭৪। ২৪ বলে ৩৩ রান করা বোপারা রানআউট হলেন বাবর আজমের থ্রো‘তে।
তারপর হিসাবে খানিক কঠিন হয়ে গেল। শেষ ১৮ বলে দরকার পড়লো ৩০ রানের। ঠিক ওই জায়গায় হাল ধরলেন মাশরাফি। শক্ত হাতে হাল ধরে দলকে সাফল্যের বন্দরে ভিড়িয়ে ফিরলেন সাজঘরে। যথার্থ ও যোগ্য অধিনায়কের মতো বল ও ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া রংপুর অধিনায়ক এবারও স্বার্থক ফিনিশারের ভূমিকায়ও সফল।
এআরবি/আইএইচএস/আইআই