বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) প্রশাসনিক ভবনে আজ সোমবার দুপুরে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে চলচ্চিত্র প্রযোজকদের মতবিনিময় সভা ডাকেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নানা প্রজন্মের বেশ ক'জন প্রযোজক। আলোচনার এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে জাজ মাল্টিমিডিয়ার স্বত্বাধিকারী আবদুল আজিজের ওপর চড়াও হন প্রযোজক মোহাম্মদ ইকবাল। এ সময় দুজনকেই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও অশ্লীল গালাগালিও করতে দেখা যায়।
Advertisement
হঠাৎ এ অপ্রীতিকর ঘটনায় বিস্মিত হয়ে যান উপস্থিত প্রযোজক ও এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ সময় প্রযোজক কামাল মো. কিবরিয়া লিপু, নায়ক ও প্রযোজক আলমগীর, প্রয়াত রাজ্জাকের ছেলে সম্রাট বেরিয়ে যান। তবে এফডিসির এমডি ও অন্যান্য প্রযোজকদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত হলে পুনরায় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি হঠাৎ ঘটে গেল। বেশ কিছু বিষয় নিয়ে মতানৈক্য দেখা যাচ্ছিল প্রযোজকদের মধ্যে। সেখানে দুইজন প্রযোজক উত্তেজিত হয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তাদের এ কাণ্ডে বেশ বিব্রতকর অবস্থার তৈরি হয়। সোহেল রানা, আলমগীর সাহেবদের মতো গুণী মানুষেরাও বেশ অবাক হয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা সবাইকে শান্ত করে সভা ভালোভাবেই শেষ করেছি।’
এফডিসিতে আধুনিক প্রযুক্তির সব ব্যবস্থা থাকার পরও আজকাল বেশিরভাগ সিনেমার শুটিং হচ্ছে বাইরে। এফডিসিতে কীভাবে শুটিংয়ের পরিবেশ বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে প্রযোজকদের পরামর্শ ও সাহায্য কামনা করেই আজকের সভাটি ডাকা হয়েছিল বলে জানান চলচ্চিত্রের কারখানার এ কর্তা।
Advertisement
এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি সভায় এসে প্রযোজকেরা অপ্রীতিকর কাণ্ড ঘটাবেন সেটা মেনে নিতে পারছেন না চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। সিনেমা পাড়ায় ঘটনাটি অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে। তবে অনেকে এ ঝগড়াকে সাজানো নাটক বলে দাবি করছেন। তাদের মতে, কথা কাটাকাটিতে জড়ানো দুই প্রযোজকই সদ্য গঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র চলচ্চিত্র ফোরামের সদস্য। তাদের মধ্যে মোহাম্মাদ ইকবাল রয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আর আব্দুল আজিজ আছেন কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে।
সদস্য হিসেবে থাকলেও সংগঠনটির নেতৃত্ব প্রভাবিত করেন আব্দুল আজিজ। একই মতের সংগঠনের দু’জন প্রযোজক একটি ‘সিরিয়াস’ সভায় হুট করে তর্কে জড়িয়ে অশ্লীল গালাগালি ছুড়ে মারছেন, এ বিষয়টিকে পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবেই ভাবছেন অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কজন নির্মাতা ও প্রযোজক বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে দাবি করেন, হয়তো এফডিসির উদ্যোগে এফডিসিতে সিনেমার কাজ ফিরিয়ে আনার বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না অনেক প্রযোজকেরাই। তাই ঘটনাটি ঘটানো হলো। পরিকল্পনা করে আজকের সভাটি বানচাল করাই ছিল হয়তো মূল উদ্দেশ্য। তবে শেষ পর্যন্ত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ায় সেটি আর সফল হয়নি।
কেউ কেউ দাবি করছেন, প্রযোজকদের মধ্যে একতা ও দায়িত্ববোধ নেই এফডিসির এমডির সামনে সেটা প্রমাণ করাও হতে পারে এ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের উদ্দেশ্য। এসব দেখে হতাশ হয়ে এফডিসিকে চাঙ্গা করার ভাবনা থেকে সরে আসবেন এমডি। এফডিসি থাকবে শুটিং বঞ্চিত, চলচ্চিত্রে প্রভাব কমবে এফডিসি ঘেঁষা সমিতি ও চলচ্চিত্রের মানুষদের। যাদের প্রতি বেশ প্রকাশ্যেই ক্ষোভ রয়েছে চলচ্চিত্র ফোরামের সঙ্গে জড়িতদের।
Advertisement
তাই ঘটনাটিকে হালকাভাবে না নিয়ে এর সুষ্ঠু তদন্ত করে এমন দায়িত্বহীন আচরণের জন্য এফডিসির এমডির দৃষ্টি আকর্ষণও করেছেন অনেক চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, যদি পরিকল্পনা হয়ে থাকে এ ঘটনা তবে তার একটা শাস্তি দরকার। কারণ অনেকদিন ধরেই চেষ্টা চলছে এদেশে সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিটাকে সমূলে ধ্বংস করতে। তারা চায় না এখানে তাদের মতের বাইরে কারো কোনো প্রভাব থাকুক। সেটা না পেরে তারা এফডিসিকে বিকল করার পরিকল্পনা করেছে। সাম্প্রতিককালে কৌশলে হলো দখল করে রাখা, সাফটার নাম করে শুধুমাত্র কলকাতার ছবি আমদানির চিত্র দেখলেই সেটা বোঝা যায়। তারা কেবল চলচ্চিত্রের ব্যবসাটাকেই মূখ্য করে নিয়েছেন। চলচ্চিত্রেও যে দেশপ্রেম, দায়বোধ থাকে সেটাকে এড়িয়ে চলেন।
আর যদি এটি পরিকল্পিত নাও হয়, তবে দুই প্রযোজকের এমন শিশুসুলভ আচরণের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা উচিত বলেও মনে করছেন অনেকে।
তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি দুই প্রযোজক আব্দুল আজিজ এবং মোহাম্মদ ইকবালের।
এদিকে আজকে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে প্রযোজকদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছিলেন এম এ আলমগীর, গাজী রাকায়েত, মুশফিকুর রহমান গুলজার, মোহাম্মদ হোসেন, খালিদ হোসেন সম্রাট, কাজী হায়াৎ, শাহ আলম কিরণ, খোরশেদ আলম খসরু, নাদির খান, আতিকুর রহমান লিটন, সামসুল আলম, মেহেদী হাসান সিদ্দিকী মনির, আবদুল আজিজ ও মোহাম্মদ ইকবাল প্রমুখ।
স্ত্রীর অসুস্থতায় আজ সভায় উপস্থিত হতে পারেননি প্রযোজক ও অভিনেতা ফারুক। ব্যক্তিগত কারণে উপস্থিত ছিলেন না সোহেল রানা, শাকিব খান, জায়েদ খানের মতো জনপ্রিয় প্রযোজকেরাও।
এলএ