জাতীয়

ঘুষ কেলেঙ্কারি : বিএমপি`র চেইন অব কমান্ড বিপন্ন

ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ইমেজ সংকটে পড়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। সংকট উত্তরনের পথে না হেঁটে শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা এখন একজন অন্যজনের ঘাড়ে এর ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির কারণে গোপন বিষয়গুলোও এখন চলে আসছে জনসম্মুখে । সংবাদপত্র ও সাধারণ মানুষের মুখে মুখে আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘুষ কেলেঙ্কারির কথা।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে মেট্রোপলিটন পুলিশে কমিশনার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত ১১৬৫ জন কর্মরত রয়েছেন। এদের মধ্য থেকে ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, গ্রেফতার বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও নিপীড়নের মতো অভিযোগে মাঝে মাঝেই সমালোচনার খোরাক হতে হয়েছে নিম্নপদস্থ কর্মকর্তাদের। তবে এবার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে শীর্ষপর্যায়ের এক কর্মকর্তাকে এরই মধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘুষের ঘটনা অগে থেকে জেনেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত এবং এ বিষয়ে তখন কোনো পদক্ষে গ্রহণ না করায় বিএমপির আরেক শীর্ষ কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটির প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই ধরনের অভিযোগে মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে পদ থেকে প্রত্যাহার করে নিতে সুপারিশ করেছে ঘুষ কেলেঙ্কারি উদঘাটনে গঠিত পুলিশের সিকিউরিটি সেলের তদন্ত কমিটি।গত কয়েকদিনের এসব ঘটনায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ব্যর্থতার দায় এড়াতে শীর্ষ কর্মকর্তারা একে অন্যকে দোষারোপ করছেন। এতে করে পুলিশ সদস্যরাও রয়েছেন মানসিক চাপে।পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চলমান সংকট নিরসনে প্রথম পর্যায়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদগুলোতে রদবদল করা হতে পারে। তাদের বদলি করা হতে পারে অন্যত্র। পরবর্তীতে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে তাদের বিরুদ্ধে।ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বরিশাল মেট্রোপলিটান পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে স্বীকার করে টিআইবি’র আদলে গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশালের সভাপতি প্রফেসর এম. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এখনকার পুলিশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য পুরো বিষয়টির উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত হওয়া উচিত। এ ধরনের তদন্তে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দরকার। তদন্তে নীচ থেকে উপর পর্যন্ত যারাই দোষী সাব্যস্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলবে। এতে প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ব্যহত হবে বলে মনে করেন বিশিষ্ট এই নাগরিক।তবে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী ইন্সপেক্টর জেনারেল আব পুলিশ (এআইজি মিডিয়া) মো. নজরুল ইসলাম জানান, মুষ্টিমেয় পুলিশ সদস্যের কারণে ইমেজ সংকট হওয়ার কারণ নেই। কতিপয় ব্যক্তির দায় পুরো বাহিনীর ওপর বর্তায় না। এরই মধ্যে এ ঘটনায় গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ওই রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতর জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল রয়েছে।প্রসঙ্গত পুলিশে পদন্নোতির জন্য ৭৭ লাখ টাকার ঘুষ তহবিল গঠনের অভিযোগে গত ৩০ জুন ৩ সহকারী উপ-পরিদর্শক এবং ৭ নায়েক ড্রাইভার কনস্টেবল সাময়িক বরখাস্ত হন।ঘুষ তহবিলের ৫০ লাখ টাকা গচ্ছিত রাখার অভিযোগে পরদিন পহেলা জুলাই উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. জিল্লুর রহমান সাময়িক বরখাস্ত হন। বরখাস্ত হওয়ার পরদিন ২ জুলাই পৃথক দুটি চেকের মাধ্যমে গচ্ছিত রাখা ৫০ লাখ টাকা ফেরত দেন জিল্লুর। বিএমপি পুলিশের ঘুষ কেলেংকারির ঘটনা উদঘাটনে ১৩ জুন উপ কমিশনার শোয়েব আহমদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে তাকে সরিয়ে বিএমপি পুলিশের উপ কমিশনার ( ট্রাফিক) আবু সালেহ মো. রায়হানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।এদিকে, এই টাকা সংশ্লিষ্টদের মাঝে ফেরত দেওয়ার জন্য গঠিত ৩ সদস্যের আরেকটি কমিটির প্রধানও উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) রায়হান।প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো (১ হাজার ১শ’ ৬৫ জনের স্থলে সাড়ে ৫ হাজার) পাশের উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার জন্য ২৩০ কনস্টেবলের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ হাজার করে ৭৭ লাখ টাকার ঘুষ তহবিল গঠন করে পুলিশের অসাধু একটি সিন্ডিকেট। গত নভেম্বরে কনস্টেবল থেকে এএসআই পর্যন্ত প্রায় ৮শ’ সদস্যের পদোন্নতি পরীক্ষা হয়। এদের মধ্যে ৩৩২ জন উত্তীর্ণ হন। যাদের মধ্যে ২৩০ জনের কাছ থেকে ঘুষ আদায় হয়েছিল।সাইফ আমীন/এসআরজে

Advertisement