আইন-আদালত

পিলখানা ট্র্যাজেডি : দ্বিতীয় দিনের মতো রায় পড়া শুরু

বহুল আলোচিত বিডিআর সদর দফতরের পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার মামলায় সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো রায় পড়া শুরু করেছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

আজ সোমবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার রায় পড়া শুরু করেন। আজ পূর্ণাঙ্গ রায় পড়া শেষ হবে বলেও জানান তিনি।

হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চে মামলাটিতে দ্বিতীয় দিনের রায় পড়া শুরু হয়। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

আসামি সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ মামলার রায় পড়া শুরু হয় রোববার সকাল ১০টা ৫৪ মিনিটে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, রায়ে এক হাজার পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ রয়েছে।

Advertisement

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি শওকত হোসেন রোববার জানিয়েছিলেন, বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের পর্যবেক্ষণ পড়া শেষে হলে মূল রায়ে (আদেশের অংশ) কার দণ্ড কী তা ঘোষণা শুরু হবে। পর্যবেক্ষণ আলাদাভাবে দিলেও আসামিদের সাজার বিষয়ে তিন বিচারক সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন বিচারপতি শওকত হোসেন। রোববার দুপুর ১টায় আদালত বিরতিতে যাওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আজকের পর কালকেও বিচারকরা আবার পর্যবেক্ষণ পড়বেন। আজকে অর্ডারিং পোরশন (সাজার অংশ) তারা দেবেন বলে মনে হয় না।’

মামলা সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, অ্যাটর্নি জেনারেল ছাড়া আজ আদালতে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পরিচয়পত্র দেখে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় স্বজনদের কাউকে রায় শোনার জন্য ভেতরে ঢোকানো হয়নি।

এখন পর্যন্ত পড়া রায়ের পর্যবেক্ষণে নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডকে নৃশংস ও বর্বরোচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ইপিআর পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনী দেশে-বিদেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু ২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরের কিছু সদস্য আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এই কলঙ্কচিহ্ন তাদের অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে।

একসঙ্গে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার নজির ইতিহাসে নেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন হাইকোর্ট।

Advertisement

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ওই হত্যাযজ্ঞে ৫৭ কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। এই হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিলেন। আজ হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়ার দুটি ধাপ শেষ হতে যাচ্ছে। এ মামলায় আসামি ছিলেন ৮৫০ জন। সাজা হয় ৫৬৮ জনের। তাদের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছিল। খালাস পেয়েছিলেন ২৭৭ জন।

এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরাও জেল আপিল ও আপিল করেন। ৬৯ জনকে খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে।

এসবের উপর ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৩৭০তম দিনে গত ১৩ এপ্রিল। সেদিন শুনানি শেষে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরপর হাইকোর্ট রায় ঘোষণার জন্য ২৬ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেন।

এফএইচ/এআর/এনএফ/এমএস