প্রতি বছর বাংলাদেশ প্রমিয়ার লিগ (বিপিএল) একটা ক্রিকেট উৎসবের আমেজ তৈরি করে সারা দেশে। বছরের এই শেষ সময়টায় সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজ নিজ শহরকে সমর্থন জানাতে। আবার একজন আরেকজনকে নিজ দলের শক্তি-দুর্বলতা নিয়েও খোঁচা দেয়! এ যেন এক অন্যরকম ক্রিকেটীয় পরিবেশ দেশজুড়ে।
Advertisement
তবে আলোর নিচেই থাকে অন্ধকার। এমন জমকালো চোখ ধাঁধানো আয়োজন কিন্তু দেশের বিশাল একটা অংশ চাইলেও দেখতে পারে না। মাসখানেক আগের একটি বেসরকারি জরিপে জানা গেছে, দেশে এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে তিন কোটি মানুষ। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাক্কলন অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলের ৪৭.১% মানুষ দারিদ্র্যসীমা এবং ২৪.৬% মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। অপরদিকে, শহরাঞ্চলের ৪৯.৭% দারিদ্র্যসীমা এবং ২৭.৩% চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। যারা বিশাল একটা অংশ সব ধরনের বিনোদন থেকে বঞ্ছিত হয়।
তেমনই এক দরিদ্র শিশুর নাম হৃদয়। বসবাস চট্টগ্রামের সাগরিকায়। অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান। ঘরে নেই কোন টিভি। আর এত দাম দিয়ে টিকেট কিনে খেলা দেখার সামর্থ্যও নেই তার। সাগরিকা স্টেডিয়ামের মূল গেট ধরে এক সাগর আকুতি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল শিশুটি। কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম, কার খেলা দেখতে আসছো? প্রথমে অন্যদিক ফিরে থাকলেও দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করার পর বললো, ‘ক্রিস গেইলের একটু খেলা দেখতে চাই। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন দোকানে দাঁড়াইয়া দেখি। আজকে আইছিলাম, যদি স্টেডিয়ামে ঢোকা যায়!’
এরপর আরও অনেক কথা হল হৃদয়ের সাথে। কিন্তু সব কথাকে সংবাদে পরিণত করা যায় না। ঠিক ঐ কথাটির মতই, ‘কিছু কথা থাক না গোপন।’
Advertisement
বলা হয় ‘খেলাধুলা’ নাকি সব কিছুর উপরে। এখানে নেই কোন ভেদাভেদ কিংবা নেই কোন বৈষম্য! তারপরও এই যে ধনি-দরিদ্র এত বৈষম্য, যা কখনওই কারও চোখে পড়ে না কিংবা কেউ দেখতে চায় না। ক্রিকেট নিয়ে দেশে এতবড় ক্রীড়া উৎসব, অথচ কত বড় একটা জনগোষ্টি তা দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত! সে খবর ক’জনই বা রাখে?
কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে বিপিএলের আয়োজন। বিসিবি কি পারে না একটা দিন এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের খেলা দেখার ব্যবস্থা করে দিতে! হলোই বা তাদেরকে কিছু টিকিট বিনে পয়সায় ছেড়ে দিতে! কিংবা স্টেডিয়ামের বাইরে হলেও একটা ফান জোন তৈরি করে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখার ব্যবস্থা করতে!
এমএএন/আইএইচএস/এমএস
Advertisement