দেশজুড়ে

‘নট অনলি খুদিয়াডাঙ্গা, বাট অলসো উপজেলা স্কুল’

নওগাঁর মান্দা উপজেলার ৪৬নং খুদিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উৎপল কুমার বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকেও গত আড়াই বছর ধরে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। আর এতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান এবং সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রেজাউল করিম তাকে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

Advertisement

ওই বিদ্যালয়টি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) রেজাউল করিমের নিয়ন্ত্রণে। তার কাছে শিক্ষক উৎপল কুমারের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘নট অনলি খুদিয়াডাঙ্গা, বাট অলসো উপজেলা স্কুলের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবো না। যদি অন্য স্কুলের বিষয়ে জানতে চান, উত্তর দিব।’

মান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, অফিসে অফিস সহকারী নাই। চারটি পদ শূন্য রয়েছে। উৎপল কুমার প্রামানিকের কম্পিউটারেও বেশ দক্ষতা আছে। কম্পিউটারে লেখালেখি থেকে শুরু করে অফিসে অনেক কাজ করে সে।

তিনি আরো বলেন, ওই স্কুলে যে কয়জন শিক্ষক রয়েছে তা শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট। এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কোনো যুক্তিই আসে না। এজন্য উৎপল কুমারকে অফিসেই রাখা হয়েছে।

Advertisement

জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ মার্চ তারিখে ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন উৎপল কুমার। কিন্তু আজ অবধি ওই বিদ্যালয়ে তিনি কোনো ক্লাস নেননি। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১২০ জন। শিক্ষকের পদসংখ্যা ছয়জন হলেও প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে প্রায় ছয়মাস যাবৎ। এরপর থেকে সহকারী শিক্ষিকা রেহেনা আক্তার বানুকে অতিরিক্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বিভিন্ন দাফতরিক কাজে ব্যস্ত থাকেন।

এদিকে উৎপল কুমার দীর্ঘদিন থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। বাকি তিনজন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। এই তিনজন শিক্ষেকে পাঠদান করাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হিমসিম খেতে হচ্ছে। ফলে পড়াশুনার পরিবেশ একেবারেই ভেঙে পড়েছে।

অপরদিকে, শিক্ষক উৎপল কুমার বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকেও ধরাকে সরা করে চলছেন। তিনি মান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে শিক্ষা অফিসারের পেছনের টেবিলে বসে কম্পিউটার অপারেটরের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের পাশের একটা ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে ‘মাস্টার কম্পিউটার’ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়েছেন। ফলে সেখানেও ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন।

বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও দু’তিনমাস পর পর তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হাজিরা খাতায় ও রিটার্ন ফরমে একবারে সবগুলো স্বাক্ষর করেন। আর এভাবেই বছরের পর বছর সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন তিনি।

Advertisement

শিক্ষক উৎপল কুমারের কাছে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষা অফিসার স্যার সব বিষয়ে জানেন।

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জামিল হোসেন প্রামানিক বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে বারবার তাগাদা দেয়া হলেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। গত ৪ নভেম্বর ম্যানেজিং কমিটির সভা হয়। সেখানেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার মাধ্যমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হয়। বিধি বহির্ভুতভাবে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রেহেনা আক্তার বানু বলেন, শিক্ষক স্বল্পতায় প্রতিনিয়ত পাঠদানে অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষক উৎপল কুমার বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির বিষয়টি বারবার শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে। হাজিরা খাতা ও রিটার্ন ফরমে তার অনুপস্থিত দেখিয়ে শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া হয়। অথচ শিক্ষা অফিস সেই কাগজপত্রগুলো ঠিকঠাক করে দিয়ে তার বেতন-ভাতা উত্তোলনে সহযোগিতা করে।

আব্বাস আলী/এফএ/পিআর