জাতীয়

৪০ শতাংশ হত্যাকাণ্ডই পারিবারিক!

স্বামীর হাতে স্ত্রী, স্ত্রীর হাতে স্বামী, ভাইয়ের হাতে ভাই, বাবা-মার হাতে সন্তান, সন্তানের হাতে বাবা মা হত্যার খবর ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি করে। তবে এগুলোর কোনো কোনোটি পত্রিকার পাতায় স্থান পায়, আর বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কোনো খবরই প্রকাশ পায় না।বাংলাদেশ পুলিশের এক পরিসংখ্যান বলছে- পারিবারিক কলহের জের ধরে গত পাঁচ বছরে প্রায় ১০ হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু হত্যার মামলা হয়েছে।বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন- বছরে মোট হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৪০ শতাংশ হচ্ছে পারিবারিক হত্যাকাণ্ড।তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে পারিবারিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছিল ১৬৭৫টি, ২০১১ সালে ১৬৮৮টি এবং ২০১২ সালে ১৫৩৫। সুতরাং সর্বমোট যে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে দেশে তার ৩৯-৪০ শতাংশই হচ্ছে পারিবারিক হত্যাকাণ্ড’। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ীর পূবালী এলাকার এক বাড়িতে গৃহবধূ সুরভী আক্তারকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন তার স্বামী সাজ্জাতুল ইসলাম রাসেল। পরদিন থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কোনো কারণে মতের অমিল হলে বা বিরোধ হলে সেটা কেন হত্যার পর্যায়ে যাচ্ছে বা মানুষের মধ্যে পরিবারের সদস্যদের খুন করার এই প্রবণতা কেন? এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘অনেক সময় বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কের কারণে হচ্ছে এই হত্যাকাণ্ড। বাংলাদেশের যে ট্র্যাডিশনাল ভ্যালু নিয়ে দীর্ঘদিন চলতো সেখান থেকে হঠাৎ করে জাম্প করেছে, সঙ্গে যোগ হয়েছে গ্লোবালাইজেশন’। ‘ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও আকাশ সংস্কৃতির কারণে এবং দ্রুত কম্পিউটার, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দ্রুত আধুনিক মূল্যবোধগুলো বাংলাদেশের সোসাইটির মধ্যে চলে আসছে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। অধ্যাপক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এসব কারণ সাধারণভাবে একটা সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হচ্ছে। এটা একটা বড় কারণ। এছাড়া, মানুষের হাতে এখন টাকা পয়সা চলে এসেছে। ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের নতুন রূপ দেখতে পাচ্ছি’।গত কয়েক বছরের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দাম্পত্য কলহ, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক, যৌতুক, মাদকাসক্ত এসব বিষয় রয়েছে হত্যাকাণ্ডগুলোর মূল কারণ হিসেবে।পারিবারিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন আইনজীবী শাহিন মমতাজ বলেন, এর কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে তিনি দেখেছেন বেশির ভাগ মামলা কয়েক বছর পর পরিবারের মধ্যেই আপোষ-রফা করে ফেলার হার সবচেয়ে বেশি।শাহিন মমতাজ আরো বলেন, ‘প্রথমত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হত্যাকাণ্ড হলে যদি কোনো শিশু জীবিত থাকে তাহলে সে মামলা অবধারিতভাবে মিউচুয়ালের দিকে যেতে দেখেছি। এছাড়া বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘ সময় লাগার কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তাৎক্ষণিক যে মানসিক অবস্থা থাকে সেটা কেটে যায়। ৫/৭ বছর পর তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে আদালতে মামলা তুলে নেয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। আর ১০/১৫ বছর ধরে মামলা চালিয়ে রায় পাওয়া পর্যন্ত খুব কম মামলা চলে বলে আমাদের কাজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি”।  সূত্র : বিবিসি বাংলাএসকেডি/একে/এমএস

Advertisement