ঘুষ কেলেঙ্কারি উদঘাটনে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-কমিশনার (সদর) শোয়েব আহাম্মদকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে এক আদেশে এ কমিটি পুনর্গঠনের আদেশ দেন পুলিশ কমিশনার শৈবাল কান্তি চৌধুরী।পুলিশে পদোন্নতির জন্য ঘুষের তহবিল সংগ্রহের ঘটনা অগে থেকে জেনেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত এবং এ বিষয়ে তখন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি তিনি। এসব কারণে তদন্ত কমিটি নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে কমিটির প্রধানের পদ থেকে উপ-কমিশনার (সদর) শোয়েব আহাম্মদকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে ।শুক্রবার রাতে যোগাযোগ করা হলে বিএমপি কমিশনার শৈবাল কান্তি চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, কমিটির প্রধান বিএমপি পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) শোয়েব আহাম্মদকে সরিয়ে উপ কমিশনার (ট্রাফিক) আবু সালেহ মো. রায়হানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, কোতয়ালী থানার সহকারী কমিশনার শাহানাজ পারভীন, সহকারী কমশিনার আসাদুজ্জামান, সহকারী কমিশনার রুণা লায়লা ও সহকারী কমিশনার অপু সরোয়ার। পুলিশ কমিশনার শৈবাল কান্তি চৌধুরী জানান, বিএমপি পুলিশের ঘুষ কেলেঙ্কারীর ঘটনা উদঘাটনে ১৩ জুন উপ কমিশনার শোয়েব আহমদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ঘুষের তহবিলের বিষয়টি শোয়েব আহমেদ দু’মাস আগেই জানতেন। এমনকি একজন উপকমিশনার এ বিষয়ে তাকে অবহিত করলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। তদন্ত কমিটি নিয়ে যাতে কোনো রকম প্রশ্ন না ওঠে সে কারণেই তাকে সরিয়ে বিএমপি পুলিশের উপ কমিশনার ট্রাফিক আবু সালেহ মো. রায়হানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, উপ পুলিশ কমিশনার দক্ষিণ আবদুর রউফ খান দু’মাস আগে তার কার্যালয়ে পুলিশ সদস্যদের ঘুষ সম্পর্কিত একটি সভা হওয়ার ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে উপপুলিশ কমিশনার হেডকোর্য়াটার শোয়েব আহমদকে জানালেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। এর আগে ২০১৩ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত পুলিশের পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা কার্যক্রমের মূল্যায়ন কমিটিতে তার ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ উঠে। এরপর থেকে শোয়েব আহমেদকে পরীক্ষা কমিটিতে রাখা হয়নি।অপরদিকে, পুলিশ সিকিউরিটি সেলের তদন্ত প্রতিবেদনে মেট্রোপলিটন কমিশনার শৈবাল কান্তি চৌধুরীও বিষয়টি আগে থেকে জানতেন এবং তিনি তাদের পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযুক্ত করে তাকে এখান থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। ৭৭ লাখ টাকার ঘুষ তহবিল গঠনের অভিযোগে গত ৩০ জুন ৩ সহকারী উপ-পরিদর্শক এবং ৭ নায়েক ড্রাইভার কনস্টেবল সাময়িক বরখাস্ত হন। ঘুষ তহবিলের ৫০ লাখ টাকা গচ্ছিত রাখার অভিযোগে পরদিন ১ জুলাই উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. জিল্লুর রহমান সাময়িক বরখাস্ত হন। বরখাস্ত হওয়ার পরদিন ২ জুলাই পৃথক দুটি চেকের মাধ্যমে গচ্ছিত রাখা ৫০ লাখ টাকা ফেরত দেন জিল্লুর। এদিকে, এই টাকা সংশ্লিষ্টদের মাঝে ফেরত দেয়ার জন্য গঠিত ৩ সদস্যের আরেকটি কমিটির প্রধানও উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) রায়হান। প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো (১১৬৫ জনের স্থলে সাড়ে ৫ হাজার) পাশের উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয়ে দেয়ার জন্য ২৩০ কনস্টেবলের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ হাজার করে ৭৭ লাখ টাকার ঘুষ তহবিল গঠন করে পুলিশের অসাধু একটি সিন্ডিকেট। গত নভেম্বরে কনস্টেবল থেকে এএসআই পর্যন্ত প্রায় ৮শ সদস্যের পদোন্নতি পরীক্ষা হয়। এদের মধ্যে ৩৩২ জন উত্তীর্ন হন। যাদের মধ্যে ২৩০ জনের কাছ থেকে ঘুষ আদায় হয়েছিল। সাইফ আমীন/এমজেড/এমএস
Advertisement