ই’তিকাফে আমরা কি করব? আমাদের আচরণ কি হবে? পক্ষান্তরে- কি কি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। কি ধরণের আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে তা জানা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক। কারণ কষ্ট করে মসজিদে ই’তিকাফের নিয়তে দশটি দিন ও রাত কাটিয়ে যদি আমরা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ করতে না পারি তাহলে আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। সুতরাং আমরা এ বিষয়গুলোর কিছু নিয়ম-নীতি জেনে নিই-ই’তিকাফের মাসায়েল১. ই’তিকাফের জন্য নিয়্ত করা। এক সঙ্গে দশদিনের জন্য নিয়্ত না করলে সুন্নাত ই’তিকাফ আদায় হবে না, বরং তা নফলে পরিণত হবে।২. রমজানের ২০ তারিখ সূর্যাস্তের আগেই ই’তিকাফের নিয়্যতে মসজিদে পৌঁছে যাওয়া।৩. মাসনুন ই’তিকাফের নিয়ত করলে অবশ্যই তা পূর্ণ করা আবশ্যক। ওজর ব্যতীত তা ভঙ্গ করা বৈধ নয়।৪. ই’তিকাফকারীর জন্য ই’তিকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা হারাম। তেমনি স্ত্রীকে চুমু খাওয়া, আলিঙ্গন করা ইত্যাদি বৈধ নয়। (আলমগিরী)৫. মাসনুন ই’তিকাফ শুরু করার পর মাঝে যদি দু’একদিন ভঙ্গ হয়ে যায় তখন সেই কয় দিনের ই’তিকাফ পরে কাযা করে নিতে হবে। ৬. পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ই’তিকাফ করা ও করানো কোনোটিই বৈধ নয়।৭. ই’তিকাফকালীন কুরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ তাহলিল করা, দ্বীনি মাসআলা-মাসায়েল আলোচনা করা, অন্যকে শিখানো উত্তম এবং বৈধ। (আলমগিরী)৮. মহিলারা ই’তিকাফের স্থানকে কাপড় দিয়ে পর্দা টেনে নিবে, যাতে বেগানা পুরুষ আসলে ই’তিকাফের স্থান ত্যাগ না করতে হয়।এ ছাড়াও ই’তিকাফ অবস্থায় নিম্নের কাজগুলো করতে পারবেন-১. অন্যান্য রোজাদারের মতো রাতের বেলায় খাওয়া-দাওয়া, চা ও অন্যান্য হালাল পানীয় পান করা ইত্যাদি সবকিছুই ই’তিকাফকারীর জন্য বৈধ। (আলমগিরী)২. প্রয়োজনীয় দুনিয়াবি কথাবার্তা বলাও বৈধ।৩. প্রয়োজন মত বিশ্রাম এবং ঘুমানোও বৈধ। (আলমগিরী)৪. ধর্মীয় লেখা-লেখি ও জরুরি চিঠি-পত্র লিখা বৈধ। (দুররুল মুখতার)৫. মসজিদে ই’তিকাফ অবস্থায় শুধু প্রয়োজনীয় বেচাকেনার কথাবার্তা বলা জায়েজ। তবে পণ্য মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে না। (আলমগিরী)৬. ই’তিকাফকারী ডাক্তার প্রয়োজনবশত বিনা পারিশ্রমিকে চিকিৎসাপত্র লিখতে পারবে।৭. মল-মূত্র ত্যাগ, অজু (ফরজ ও নফল), ফরজ গোসল ও সুন্নত গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ। (আলমগিরী)৮. ই’তিকাফকারীর খাবার মসজিদে পৌঁছে দেয়ার কেউ না থাকলে নিজে মসজিদের বাইরে গিয়ে খাবার আনতে পারবেন।৯. মুয়াজ্জিন ই’তিকাফ করলে এবং আজানের জায়গা মসজিদের বাইরে হলে, বাইরে গিয়ে আযান দেয়া বৈধ। (দুররুল মুখতার)১০. ই’তিকাফের স্থান পাঞ্জেগানা মসজিদে হলে জুমআর নামাজের জন্য জামে মসজিদে যাওয়া বৈধ। (আলমগিরী) এবং জুমআ শেষে ৬ রাকাআত সুন্নত পড়ে সাথে সাথে ই’তিকাফের স্থানে ফিরে আসবে। (আননুতাফ ফিল-ফাতওয়া)১১. অজু-ইস্তেঞ্জার জন্য বের হলে যদি কোনো জানাজা উপস্থিত থাকে তাহলে বিলম্ব না করে জানাজার নামাজ পড়ে নেয়া বৈধ।১২. ফরজ ও মাসনুন গোসল ছাড়া স্বাভাবিক গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হবে না। তবে খুব বেশি প্রয়োজন দেখা দিলে মসজিদের ভেতরে বসে মাথা বের করে মাথায় পানি দিবে। কোনো কোনো মুফতির মতে, এতেও সমস্যা না কাটলে অজু-ইস্তিঞ্জার সময় বের হলে নিকটে পানির ব্যবস্থা থাকলে দেরি না করে গোসল সেরে নিবে।১৩. কুরআন মাজীদ ও দ্বীনি তা’লিম দেয়াও বৈধ।১৪. ই’তিকাফকালে শরীরে তেল লাগানো, খুশবু ব্যবহার, চুল-দাড়ী আঁচড়ানোর অনুমতি আছে।১৫. ই’তিকাফ অবস্থায় চুপ থাকাকে ছাওয়াব মনে করে চুপ থাকা অর্থাৎ কোনো যিকিরও না করা মাকরূহ তাহরিমি। (আলমগিরী)১৬. মসজিদ এক তলা হোক আর বহুতল বিশিষ্ট হোক, ছাদও মসজিদের অন্তর্ভুক্ত সুতরাং ই’তিকাফকারী ছাদে যেতে পারবে। পাশাপাশি বারান্দাও যদি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে ই’তিকাফকারী বারান্দায়ও যেতে পারবে।সুতরাং উপরোক্ত বিষয়াদির প্রতি নজর রেখেই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও লাইলাতুল ক্বদর প্রাপ্তির নিয়্যতে আমরা ই’তিকাফ পালন করব। ইনশাআল্লাহ।ইতিকাফে নিষেধ; যা ই’তিকাফ ভঙ্গের কারণ :১. যে কোনো চাকরিজীবী নিজ দায়িত্ব পালনে মসজিদের বাইরে গেলে ই’তিকাফ ভেঙে যাবে। এ ধরণের দায়িত্বশীলদেরকে ই’তিকাফের পূর্বেই ছুটি নিয়ে নিতে হবে।২. খতম তারাবির জন্য ই’তিকাফের মসজিদ ছেড়ে অন্য মসজিদে গেলেও ই’তিকাফ ভেঙে যাবে।৩. বিনা কারণে মসজিদের বাইরে গেলেও ই’তিকাফ ভেঙে যাবে; যদিও তা অল্প সময়ের জন্য হয়। (আলমগিরী)৪. ই’তিকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে; এমনকি স্ত্রীকে চুমু খাওয়া বা স্পর্শ করার দ্বারা যদি বীর্যপাত ঘটে। (আলমগিরী)৫. ফরজ ও মাসনুন নয় এমন গোসলের জন্য বের হলে ই’তিকাফ ভেঙে যাবে।৬. কোনো কারণে রোজা ভেঙে গেলে বা রোজা রাখতে না পারলে ই’তিকাফ ভেঙে যাবে। কারণ মাসনুন ও ওয়াজিব ই’তিকফের জন্য রোজা জরুরি। (শামী)৭. শুধুমাত্র জানাজার জন্য মসজিদে থেকে বের হলে ই’তিকাফ ভেঙে যাবে। (আলমগিরী) যদি জানাজা মসজিদের ভিতর থাকা অবস্থায় মসজিদে হয়। তবে সেক্ষেত্রে জানাজায় শরিক হতে পারবে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।সুতরাং উপরোক্ত বিষয়গুলো আমরা স্মরণে রেখে আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ ও মতে থেকে যথাযথভাবে ই’তিকাফ আদায় করব এবং লাইলাতুল ক্বদর অর্জনের চেষ্টা করে আখিরাতের মুক্তি নিশ্চিতে সচেষ্ট হব। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।তথ্যসূত্র : ফতোয়ায়ে আলমগিরী, শামী, আননুতাফ ফিল-ফাতওয়া এবং আদ্দুররুল মুখতার।জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগি যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।এসএইচএস/একে /এমএস
Advertisement