শুক্রবার ভোর থেকে ঈদ উপলক্ষে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও দুপুর না গড়াতেই কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে টিকিট শেষ। অধিকাংশ রুটের টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার খবরে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।রাত থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদের অভিযোগ, ‘টিকিট আছে, কৃত্রিম সংকট তৈরির কারণে বলছে টিকিট নেই। বেশি দামে টিকিট বিক্রির ‘ধান্দা’ চলছে। তবে যাত্রীদের কোনো অভিযোগই আমলে নিচ্ছে না কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতারা।শুক্রবার ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে (সেহরির পর) গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গগামী হানিফ, সাকুরা, এসআর, ঈগল, নাবিল, শ্যামলী, টিআর, ডিপজল, এসকে, আগমনী, কেয়া পরিবহনের কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন।টিকিট পেতে মরিয়া অনেক যাত্রীই গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। দ্রুত টিকিট শেষ হওয়ার খবর কোনোভাবে মানতে রাজি নন তারা। তাই অনেককে লক্ষ্য করা যায় কাউন্টারে টিকিট বিক্রেতাদের সাথে বাক বিতণ্ডায় জড়াতে। টিকিট সংকটের খবরকে অনেকেই পরিবহন মালিকদের কারসাজি বলে দাবি করছেন।রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও বগুড়া রুটে চলাচলকারী আল-হামরা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম জানান, দুপুর ১২টা নাগাদ আল-হামরাসহ সব রুটের টিকেট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে।নাসিমা আক্তার নামে বেরসকারি ব্যাংক কর্মকর্তা যাবেন দিনাজপুর রানীরবন্দরে। তিনি বলছেন, টিকিট দুইটা ম্যানেজ হয়েছে। কিন্তু টিকিট দরকার আরো তিনটা। কিন্তু কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে টিকিট নেই।সাদিকুল ইসলাম সাদিক নামে ঠাকুরগাঁওগামী এক যাত্রীর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে। লাইনের প্রথম ব্যক্তি আমিই। কিন্তু টিকিট নেয়ার সময় নিজের পছন্দ মেতো টিকিট নিতে পারছি না। কাউন্টার থেকে আই-১ সিটের ২টি টিকিট দেয়া হয়। ভালো সিট চাইলে কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা কর্কশ গলায় বলছেন ‘নিলে নেন না নিলে যান’।অন্যদিকে এসআর কাউন্টার থেকে কোনো টিকিটের টাইমিং মিলছে না। যে চাচ্ছে ১৫ তারিখের টিকিট তাকে দেয়া হয়েছে ১৪ তারিখের টিকিট। যাত্রীদের কোনো পছন্দকে মূল্যায়ন করছে না কোনো বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতারা।অগ্রিম টিকিট পেতে ভোর রাতে থেকে অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে আবুল হোসেন নামের এক মধ্য বয়সী ব্যক্তি। তিনি যাবেন রাজশাহীতে। তিনি বলছেন, নাটোরের লোকজন টিকিট না পেয়ে রাজশাহীর টিকিট নিচ্ছে। সেকারণে রাজশাহীর টিকিটে বেগ পেতে হচ্ছে।এসআর বাসের কাউন্টার মাস্টার রফিকুল ইসলাম জানান, অনলাইন পদ্ধতিতে একযোগে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তাই এদিক সেদিক হচ্ছে। তবে কাউন্টারের লোকজন সুষ্ঠুভাবে টিকিট বিক্রির সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। স্বজনপ্রীতির কথা অস্বীকার করেন তিনি।টিকিট সংকটের অভিযোগেই শেষ নয় একাধিক যাত্রীর অভিযোগ, টিকিট কিনতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। প্রত্যেকটি রুটের বাসের টিকিট নিতে ৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিয়ে দিয়েও টিকিট মিলছে না।শ্যামলী পরিবহনের কল্যাণপুর ও গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকার টিকিট টেকনিক্যাল কাউন্টার থেকে সকাল ৭ টায় বিক্রি শুরু হয়। সাড়ে আটটা না বাজতেই কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে টিকিট শেষ।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধার সাধারণ ভাড়া ৪০০ থেকে সাড়ে ৪৫০ টাকা। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫২০ টাকা। তবুও মিলছে না টিকিট। সরেজমিনে দেখা দেখা গেছে, ৫২০ টাকার টিকিট ৭৫০ টাকায় বাধ্য হয়ে কিনতে হয়েছে অভিযোগ আবু তাহের নামে এক যাত্রীর।বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে টেকনিক্যালের শ্যামলী পরিবহন কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা হান্নান জানান, বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি নিছক অভিযোগ। এর সত্যতা নেই।যাত্রীদের অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, যাত্রীদের হয়রানি করে ও নির্ধারিত টাকার বাইরে বেশি টাকা নিলে তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।উল্লেখ্য, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শুক্রবার হতে দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৬০টির বেশি রুটে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়।অন্যদিকে বিআরটিসি বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে ৯ জুলাই থেকে। ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হবে আগামী ৯ থেকে ১৩ জুলাই।জেইউ/এসএইচএস/আরআই
Advertisement