পুলিশে ঘুষ কেলেঙ্কারির বিষয়ে আগে থেকে জেনেও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বরিশাল পুলিশ কমিশনার শৈবাল কান্তি চৌধুরীকে পদ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি দায়িত্বে ব্যর্থতার কারণে শৈবাল কান্তির বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হতে পারে। ঘুষ কেলেঙ্কারি উদঘাটনে গঠিত পুলিশের সিকিউরিটি সেলের তদন্ত কমিটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ ধরনের সুপারিশ করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সিকিউরিটি সেলের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আলমগীর আলম জাগো নিউজকে জানান, মেট্রোপলিটনের শীর্ষ কর্মকর্তা হওয়ায় পুলিশ কমিশনার ঘুষ কেলেঙ্কারির দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তদন্তে স্পস্ট যে, শীর্ষ কর্মকর্তা এই ঘটনার শুরু থেকে সব কিছুই জানতেন। অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারার ব্যর্থতা তার কাঁধেই বর্তাবে। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের প্রশয় দিয়েছেন। এই অপরাধে তাকে প্রত্যাহারসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশ সিকিউরিটি সেলের তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। মেট্রোপুলিশ কমিশনার তার (তদন্তকারী কর্মকর্তার) চেয়ে উচ্চ পদস্থ হওয়ায় তিনি তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করতে পারেন না বলে জানান। তবে ঘুষের টাকা নিজ হেফাজতে গুচ্ছিত রাখার অভিযোগে উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. জিল্লুর রহমানকে বুধবার সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও অপর ৩ উপ-কমিশনার কিংবা কোনো সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে পুলিশ সিকিউরিটি সেলের তদন্ত কমিটি শাস্তির সুপারিশ করেনি। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশালের সভাপতি প্রফেসর এম. মোয়াজ্জেম হোসেন বলছেন, কয়েক মাস ধরে ঘুষ নেয়া হলো, একজনের কাছে গুচ্ছিত রাখা হলো, এগুলো পুলিশ কমিশনারের অজানা থাকার কথা নয়। তিনি এ ঘটনা সবই জানেন। তাই তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। প্রফেসর এম. মোয়াজ্জেম বলেন, উপর তলার দুর্নীতিবাজরা জালে আটকা পড়লেও জাল ছিঁড়ে বেড়িয়ে যায়। ধরা খায় চুনোপুঁটিরা। এবারের এই ঘটনায় বড়, মধ্যম, ছোট যে পর্যায়ের কমকর্তা-কমচারী জড়িত থাকুক না কেন পুলিশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি করে অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। না হলে প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ব্যহত হবে। তাই প্রধানমন্ত্রীর উচিত এই ঘুষ কেলেঙ্কারির সঠিক তদন্ত করা। এদিকে, ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছেন না স্থানীয় পুলিশের পদস্থ কোনো কর্মকর্তা। এমনকি পরিচিত গণমাধ্যম কর্মীদের ফোনও রিসিভ করছেন না তারা। মেট্রোপলিটনের মাঠপর্যায়ে কর্মরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত মঙ্গলবার ৩ সহকারী উপ-পরিদর্শকসহ ১০ জনের বরখাস্ত আদেশের পর গত বুধবার উপ-কমিশনার জিল্লুর রহমানের বরখাস্তাদেশ নাড়া দিয়েছে পুরো পুলিশ বাহিনীকে। এই ঘটনায় জড়িত অন্যান্যরাও এখন বরখাস্ত আতঙ্কে রয়েছে। অপরদিকে কনস্টেবলদের কাছ থেকে ঘুষ বাবদ আদায় করা টাকা, তাদের মাঝে ফেরত দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা। গত বছরের নভেম্বরে মেট্রোপলিটনে কর্মরত কনস্টেবল থেকে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পর্যন্ত প্রায় ৮০০ সদস্য পদোন্নতি পরীক্ষা দেয়। এদের মধ্যে ৩৩২ জন পদোন্নতি পায়। যার ২৩০ জনই কনস্টেবল। পদোন্নতি পেলেও তাদের পদায়নের কোনো জায়গা ছিলনা। তাই পুলিশ সদর দফতরে প্রস্তাব আকারে পড়ে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটনের জনবল কাঠামো পাশের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে দেয়ার জন্যই তারা এই ঘুষের তহবিল করেছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা। বর্তমানে মেট্রোপলিটন পুলিশে কমিশনার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত ১১৬৫ জন কর্মরত রয়েছে। নতুন প্রস্তাবে এখানে সাড়ে ৫ হাজার পুলিশের পদ চাওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে মঞ্জুর করানোর জন্যই ঘুষের তহবিল গঠন করেছিল এখানকার পুলিশের একদল সদস্য। সাইফ আমীন/এআরএ/এসআরজে
Advertisement