শুধু ক্রিস গেইল আর ম্যাককালামের ঝড়ো ব্যাটিংই নয়, মোহাম্মদ আমিরের বারুদ মাখা বোলিং দেখার আগ্রহও কিছু কম ছিল না ঢাকার ক্রিকেট অনুরাগিদের; কিন্তু সোমবার দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে এ ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলারের বিধ্বংসী স্পেল দেখা যাবেই- এ নিশ্চয়তা কিন্তু ছিল না।
Advertisement
কি করে থাকবে? ঢাকা ডায়নামাইটস কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন নিজেই দোটানায় ছিলেন তাকে নিয়ে। খেলার আগের রাতেও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি মোহাম্মদ আমির খেলবেনই। রোববার রাতে জাগো নিউজের সাথে একাদশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে খালেদ মাহমুদ সুজনের কন্ঠে ছিল আত্মসমর্পনের সুর।
‘আমি আমার দলের শক্তির জায়গায় হাত দিতে গিয়ে দশবার ভাবছি। আমার মনে হয় এ মুহূর্তে আমার দলের যে শক্তি আছে, সেটা ব্যাটসম্যান কেন্দ্রিক বা ব্যাটিং নির্ভর। আমার বিদেশি কোটায় যে পাচঁজন খেলছে (লুইস, আফ্রিদি, সাঙ্গাকারা, পোলার্ড ও নারিন ) তারা সবাই ব্যাট হাতে অবদান রাখতে পারে। রেখেছেও। তাই আমিরকে খেলাতে হলে ওই পাঁচজনের একজনকে বাদ দিতেই হবে। আর তা দিতে গেলেই আমার দল থেকে একজন ব্যাটসম্যান কমাতে হয়। আমি আমার ব্যাটিং শক্তি কমিয়ে মাঠে নামবো কি না, সেটাই ভাবছি। তাই বলতে পারছি না, আমির খেলবে কি না। ওর খেলার সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি চান্স।’
শেষ পর্যন্ত ওই মধুর সমস্যার সমাধান করেছে ঢাকা ডায়নামাইটস ম্যানেজমেন্ট। মোহাম্মদ আমিরকে ঠিকই খেলানো হয়েছে। ফরেন কোটায় আমিরকে জায়গা দিতে হয়েছে আরেক পাকিস্তানি শহিদ আফ্রিদিকে। এক পাকিস্তানী আমিরের অন্তর্ভুক্তি, আরেক পাকিস্তানি আফ্রিদির বাদ পড়া- কোনটাই ম্যাচের ফলের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারেনি।
Advertisement
বিদেশি কোটায় রদবদল ঢাকার জন্য সু-খবর বয়ে আনেনি। মোহাম্মদ আমির সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। তার চার ওভারের স্পেলে ২৮ রানে জমা পড়েছে দুই উইকেট; কিন্তু সেটা ম্যাচ জেতার জন্য যথেষ্ঠ ছিল না।
কারণ বোর্ডে রানই উঠেছে অনেক কম; ১২৮। ওই রান নিয়ে জেতা কঠিন। ম্যাচ শেষে ঢাকা কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন আর অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিশ্চয়ই আফসোসে পুড়েছেন। হয়ত বার বার মনে হয়েছে, ‘ইস কি ভুলটাই না করেছি! আমিরের মত বিশ্বমানের এক ফাস্ট বোলার দলে থাকার পরও কেন যে আগে বোলিং না নিয়ে ব্যাটিং করলাম?’
ঢাকার ম্যানেজমেন্ট ও থিঙ্ক ট্যাঙ্কের হতাশার মাত্রা বাড়ার একটা বড় কারণ প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে আরেক পাকিস্তানি পেসার হাসান আলির বল হাতে জ্বলে ওঠা। শুধু বল হাতে জ্বলেই ওঠেননি, ম্যাচ ভাগ্যও গড়ে দিয়েছেন এ পাকিস্তানি।
প্রথমবার বিপিএল খেলতে এসে শনিবার রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে এক উইকেট পেলেও তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি হাসান আলি; কিন্তু আজ সোমবার শেরে বাংলায় দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে তিনি। ঢাকার ইনিংসের অর্ধেকটাই জমা পড়েছে তার পকেটে।
Advertisement
ওপেনার এভিন লুইস, ওয়ান ডাউনে মেহেদী মারুফ, মিডল অর্ডারে মোসাদ্দেক আর দুই বোলার সাদ্দাম ও আবু হায়দার রনি- এই পাঁচজনই হাসান আলির সুইং ও ইয়র্কার লেন্থের ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন।
বিপিএলে আগে কোন বোলার ৫ উইকেট পাননি, তা নয়। এর আগে ৭ জনের ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ডও আছে। হাসান আলি ঐ তালিকার আট নম্বরে। তার ৩.৩ ওভারে ২০ রানে ৫ উইকেট, বিপিএলের তৃতীয় সেরা বোলিং ফিগার।
সেরা বোলিং পাকিস্তানের আরেক পেসার মোহাম্মদ সামির (৬ রানে ৫ উইকেট)। আর দ্বিতীয় সেরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার কেভিন কুপারের (১৫ রানে ৫ উইকেট)। এছাড়া গতবার বাংলাদেশের তরুন অফ স্পিনার আফিফ হোসেন ধ্রুবও ২১ রানে ৫ উইকেট দখল করেছিলেন।
আজ তার চেয়ে এক রান কম দিয়ে সমান ৫ উইকেট শিকারি হাসান আলি। তারচেয়ে বড় কথা, তার বলে পাঁচজনই বোল্ড হয়েছেন। খেলা শেষে কুমিল্লার অধিনায়ক তামিম ইকবাল মনে করতে পারলেন না, তার দেখা ও খেলা কোন ম্যাচে কোন বোলারের পাঁচ উইকেটের সবগুলোই বোল্ড হবার ঘটনা আছে কি না?
বলার অপেক্ষা রাখে না হাসান আলির ওই বিধ্বংসী বোলিংয়েই ঢাকার কম্ম কাবার। ১২৮-এ ইনিংস শেষ। শেরে বাংলার উইকেটে ধুন্দুমার ব্যাটিং করা সহজ নয়। তারপরও ১৩০-১৪০ করে জেতা কঠিন। ঢাকারও শেষ রক্ষা হয়নি।
এরপর মোহাম্মদ আমিরও ৪ ওভারের স্পেলে ২৮ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন; কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। হাসান আলির বোলিংটাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে। তার ওই স্পেল ছাড়াও কুমিল্লার জয়ে আরও একজনের বড় অবদান আছে। তিনি শোয়েব মালিক। তামিম (১৮), লিটন দাস (০), ইমরুল (২০), ড্যারেন ব্রাভো (১২) এবং জস বাটলার (১১) আউট হবার পরও হতোদ্যম না হয়ে, ভড়কে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় ঠিক একা একদিক আগলে রাখার কাজটি করেন মালিক।
শেষ পর্যন্ত ৫৩ বলে ৫৪ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়ে দুই বল আগে বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফিরে আসেন এ পাকিস্তানি। নিজের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে তুলে দিলেন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে।
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি