প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামাত ছোট আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষ মেরেছেন। তারা দেশকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছিল। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার তাদের মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে, নেবে। এছাড়া, রামু বৌদ্ধ বিহারও তারা জ্বালিয়ে দিয়েছিল। আমরা সেটিকে আরো আধুনিক দৃষ্টিনন্দন করে নির্মাণ করে দিয়েছি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দেশের উন্নয়নের সূতিকাগার হবে কক্সবাজার। কক্সবাজারকে উপলক্ষ করে এগিয়ে যাবে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার মধ্য দিয়ে এর সূচনা হলো।এসময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, কক্সবাজার অনেক দিন অবহেলিত ছিল। আর তা হতে দেবো না। ১৯৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার কক্সবাজারের উন্নয়নে যে রূপরেখা তৈরি করেছেন তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে। তার অধিকাংশই ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ঘুমধুম-দোহাজারী রেল লাইন প্রকল্পও অচিরেই বাস্তবায়ন হবে। এর জন্য আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এখন শুধু শুরু করা। কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার মধ্যে কক্সবাজারের উন্নতির ধারায় আরো একধাপ এগিয়ে দেয়া হলো। জয় হওয়া সমুদ্র সীমা, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, সাবরাং এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্টজোনসহ কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প সম্ভাবনাকে আরো সম্প্রসারিত করবে এই বিমানবন্দর।ঘুমধুম-দোহাজারী রেল লাইন নিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের দোহাজারী হয়ে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়া। এটি এতদিন কেন বাস্তবায়িত হয়নি আমার জানা নেই। তবে এবার আমরা ভূমি অধিগ্রহণের কাজও সম্পন্ন করেছি। শীঘ্রই দু’লাইনের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ঘুমধুম-দোহাজারী রেললাইন স্থাপন হলে বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগযোগের অপার সম্ভবনা সৃষ্টি হবে। আর কক্সবাজার হবে এর সংযোগস্থল। একই সঙ্গে কক্সবাজার দিয়ে মায়ানমার, ভারত ও চীনের সাথে সড়ক যোগাযোগও স্থাপন করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।উদ্বোধনী বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে সম্প্রতি বন্যায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, বন্যা দুর্গতের জন্য সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক যোগাযোগ ও দুর্গতের ঘরবাড়ি পুননির্মাণ করে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই দেশের প্রতিটি জায়গায় উন্নয়নে হাত দিয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ কাজ শেষ হলে পর্যটন শহরের সঙ্গে পুরো বিশ্বের সম্পর্ক স্থাপিত হবে। পর্যটকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক বড় বিমানগুলো সহজে বন্দরে অবতরণ করতে পারবে। ফলে কক্সবাজারের বাণিজ্যিক সুবিধা আরও বৃদ্ধি পাবে। দেশ এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কারণে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবে তাদের জন্য কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলে বিশাল এলাকার উপর উন্নতমানের ৪ তলা বিশিষ্ট ভবন তৈরি হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবারকে আধুনিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে পুনর্বাসন করা হবে। ইতোমধ্যে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। পুনর্বাসিত এলাকায় স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ প্রয়োজনী সব সুবিধা থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কক্সবাজারে ফলক উন্মোচন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও বেসামরিক বিমান ও পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। অনুষ্ঠানে উপস্থিতদেরকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বড় পর্দায় দেখানো হয়। প্রধানমন্ত্রীও কক্সবাজার বিমানবন্দরে উপস্থিতিদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেখেন।এরপর ঢাকার গণ ভবন থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনাকারী পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী বিমানবন্দরের কাজের বিবরণ দেন। তিনি জানান, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার আওতায় প্রথম পর্যায়ে বিমানবন্দরের রানওয়ে বর্ধিতকরণ ও প্রশস্তকরণের কাজ করা হবে। পুরো কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৩০ মাস। রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ফুট করা হবে। প্রস্থ বাড়িয়ে ১৫০ ফুট থেকে করা হবে ২০০ ফুট। স্থাপিত হবে নতুন ভিওআর, ডিএমই, আইএলএস, এয়ার ফিল্ড গ্রাউন্ড ও লাইটিং সিস্টেম। প্রথম ধাপের এই উন্নয়ন কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দর চত্বরে আয়োজিত সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ, উখিয়া-টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসাইন, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথসহ জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সায়ীদ আলমগীর/এমজেড/পিআর
Advertisement