খেলাধুলা

চিন্তায় আগের রাতে ঘুমই হয়নি মেহেদির!

বিপিএলের মত বড় মঞ্চে এর আগে ম্যাচ খেলেছেন মোটে দুটি। সেটা গতবার। এর মধ্যে বোলিংই করার সুযোগ মিলেছিল মাত্র এক ওভার। প্রাপ্তির ভান্ডার শূন্য। এক ওভারে ১৩ রান দিয়ে উইকেট পাননি। খুলনার সেই তরুণ মেহেদি হাসান, যিনি মূলতঃ ব্যাটসম্যান, পরে অফ স্পিনার- তিনিই আজ রাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জয়ের নায়ক।

Advertisement

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে গেইল-ম্যাককালাম যেন মুর্তিমান আতঙ্ক। এ দুই ব্যাটসম্যানের নাম শুনলে অনেক বাঘা বাঘা বোলারের ঘুম হারাম হয়ে যায়। বুকের কাঁপন বাড়ে। গেইল-ম্যাককালামের ঝড়ো উইলোবাজির মুখে খেই হারিয়ে ফেলার বহু রেকর্ড আছে অনেক বিশ্ব মানের বোলারের।

অথচ এ দু’জনের উত্তাল উইলোবাজি থামাতে তার হাতেই প্রথম বল তুলে দিলেন কুমিল্লার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। গোটা শেরে বাংলা তখন স্তম্ভিত! টিভির পর্দায় লাখো লাখো ক্রিকেট অনুরাগির চোখ ছানাবড়া! এ কি করলেন তামিম?

এমন দুই ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যানের সামনে এ কোন আনকোরা তরুণের হাতে বল তুলে দেয়া হলো? কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই আনকোরা তরুণ ম্যাচ জেতানো বোলিং নৈপুন্য উপহার দিলেন। এ যেন স্বপ্নকেও হার মানায়।

Advertisement

পরিসংখ্যানে লেখা থাকবে, তার প্রথম স্পেল (২-০-২-০) উইকেটশূন্য; কিন্তু শ্রীলঙ্কান আম্পায়ার মার্টিনেজ সদয় থাকলে হয়ত প্রথম ওভারেই গেইলের মহামূল্যবান উইকেট পেয়ে যেতে পারতেন। মেহেদির বলে লেগবিফোর উইকেটের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন গেইল। মেহেদির জোরালো আবেদন এড়িয়ে গেছেন আম্পায়ার মার্টিনেজ।

প্রথম স্পেলে উইকেট পাননি, তাতে কি? দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে গিয়ে আরেক ভয়ঙ্কর উইলোবাজ ম্যাককালামকে আউট করে দিলেন। তার বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে ব্যাটে আনতে ব্যর্থ ম্যাকালাম স্ট্যাম্পড হলেন। দুই বল পরে শার্প টার্নে জায়গায় দাঁড়িয়ে বোল্ড শাহরিয়ার নাফীস।

৪ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ২ উইকেট পকেটে পুরে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার হাতে মেহেদির। এমন বড় খেলায় সুযোগ পাওয়া, গেইল-ম্যাককালামের মত ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে বোলিং ওপেন করা এবং তাদের উইকেটে বেঁধে রেখে উইকেট নেয়া। যে কারো জন্যই স্বপ্নিল।

তরুণ মেহেদিও জন্যও। অথচ গেইল-ম্যাককালামের বিপক্ষে তাকেই বল হাতে ওপেন করতে হতে পারে এমন চিন্তায় আগের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল এ তরুণের। পরে কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের উদ্দীপক বক্তব্যে সাহস ফিরে পান তিনি।

Advertisement

ম্যাচ শেষে রাতের সংবাদ সম্মেলনে মেহেদির সাবলীল বক্তব্য, ‘গত দুইদিন থেকেই শুনছিলাম আমি এই ম্যাচ খেলবো; কিন্তু গত রাতে আমার ঘুম আসছিল না। অনেক দিন পর বোলিং করবো, তাও গেইল ম্যাককালামের বিপক্ষে। রাতে ইউটিউবে ভিডিও দেখছিলাম। তখন দেখি তাদের কোন দুর্বল জায়গাই নেই। তারা সব বলই প্রায় ছক্কা ও চার হাঁকায়। সকাল বেলা স্যারকে (কোচ সালাউদ্দীনকে) বলছিলাম, স্যার গেইল ও ম্যাককালামের তো দুর্বল জায়গাই নেই, তারা সব ছয়-চারই মারে। তখন উনি আমাকে বললেন, তোর খেলা লাগবে না। তখন বললাম, না না স্যার আমি পারবো।’

সত্যিই পেরেছেন মেহেদি। কি করে পারলেন? তার ব্যাখ্যা, ‘চিন্তা ছিল ভালো জায়গায় বল করলে মানে তাদের দুর্বল জায়গায় বল করলে আউট হয়ে যাবে এবং সেটাই হচ্ছিল।’

এবার যিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ, সেই সালাউদ্দীনের হাত ধরেই এতদুর আসা তার। তাই তো কোচের প্রতি কৃতজ্ঞতা মেহেদির, ‘আসলে আমাকে বোলার বানানোর পেছনে উনার অবদান অনেক বড় কিছু। এখন পর্যন্ত উনিই আমার সব কিছু ঠিক করে দিয়েছেন। আমাকে বোলার হিসেবে তৈরি করানোর ক্ষেত্রে উনার ইয়েটা (অবদান) অনেক বেশি।’

জীবনে কখনো এতো দর্শকের সামনে খেলেননি। একটু কি নার্ভাস লাগছিলো? মেহেদির সরল স্বীকারোক্তি, ‘এত দর্শকের মাঝে খেললে একটু নার্ভাস হই। পরে একটা দুইটা বল করার পর সব ঠিক হয়ে গেছে।’

উইকেট পাবার কথা মাথায়ই আসেনি। কি করে আসবে? সামনে যে গেইল আর ম্যাককালামের মত ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান! মেহেদি চেয়েছিলেন যতটা পারা যায় কম রান দিতে। ‘আমি আসলে টি-টোয়েন্টিতে উইকেটের আশা করিনি। চেয়েছিলাম ৪ ওভারে ২০ রান দিতে। তাহলেই খুশি থাকবো। এখন সাথে ২টা উইকেটও পেয়েছি। যা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।’

আম্পয়ার ভুল না করলে ম্যাককালামের পাশাপাশি গেইলের উইকেটটাও পেতে পারতেন; কিন্তু পাননি। তাতে কোন আক্ষেপ নেই। ‘আউটটা অনেক ক্লোজ কল ছিল আসলে। গেইলের মতো একটা উইকেট পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার ছিল। তারপরও ম্যাককালামের উইকেট পেয়েছি। সেটাও কম নয়।’

এআরবি/আইএইচএস