টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই ধুম ধাড়াক্কা ক্রিকেট। চার-ছক্কার অবাধ প্রদর্শনি। ক্রিকেটের যে ফরম্যাটে দর্শক বিনোদনই বড় কথা। সেখানে গেইল আর ম্যাককালামের মত দুই দুজন ধুন্ধুমার ব্যাটসম্যান দলে এসেছেন, কোথায় আগে ব্যাটিং করবেন- দর্শক টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের দুই সেরা ও সফলতম ব্যাটসম্যানের উত্তাল উইলোবাজি দেখবে। তা না রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক মাশরাফি টস জিতে নিলেন ফিল্ডিং।
Advertisement
রংপুর সমর্থক থেকে শুরু করে আজ সন্ধ্যায় শেরে বাংলায় খেলা দেখতে আসা ২০-২২ হাজার দর্শক আর টিভির সামনে বসে থাকা কোটি ক্রিকেট অনুরাগির বড় অংশের প্রশ্ন। দর্শকরা তাদের মত ভাববেন, তাদের চিন্তায় বিনোদন, বাহারি মার উপভোগ, উত্তাল উইলোবাজি, আর চার-ছক্কার ফুলঝুরি থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু অধিনায়ক মাশরাফি তো আর দর্শক বিনোদনের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেবেন না। শেরে বাংলার উইকেট যে আদর্শ টি-টোয়েন্টি পিচ নয়, তা মাশরাফির চেয়ে আর ভালো কে জানে? এখানে বল পিচে পড়ে থেমে আসে। কখনো কখনো নিচেও থাকে।
এই পিচে ইচ্ছেমত বোলারদের ওপরে চড়াও হওয়া সহজ নয়। যাতে-তাকে যেখান দিয়ে খুশি তুলে মারাও কঠিন- এসব নখদর্পনে মাশরাফির। তবে যেহেতু রাত বাড়ার সাথে সাথে শিশির পড়ে বল ভিজে যায়। গ্রিপ করাই দায়।
Advertisement
স্পিনারদের বল ধরা এবং বল ঘোরানো আরও কঠিন হয়ে ওঠে। পরের সেশনে ব্যাটিং করা তুলনামুলক সহজ হবে। বরং আগে বোলিং করলে বোলারদের বল ধরা ও কারুকাজ দেখানোয় অত সমস্যা হবে না- এই চিন্তায়ই হয়ত টস জিতে বোলিং নেয়া মাশরাফির।
সে চিন্তা প্রাথমিকভাবে সফল। অধিনায়ক নিজে আর শ্রীলঙ্কান থিসারা পেরেরার মাপা পেস আক্রমণের বিপক্ষে মোটেই হাত খুলে খেলতে পারেননি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ব্যাটসম্যানরা। মাশরাফি ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে দুই উইকেট দখল করেন। আর থিসারা পেরেরার চার ওভারের স্পেলে আউট হন কুমিল্লা ইনিংসের দুই টপ স্কোরার ইমরুল কায়েস (৩২ বলে ৪৭) ও মারলন স্যামুয়েলস (৩৪ বলে ৪১)।
তাতেই তামিম বাহিনীর স্কোর আটকে থাকে দেড়শো‘তে (১৫৩)। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আজকাল হর হামেশা ২০০ বা তার বেশি রান ওঠে। গেইল আর ম্যাককালামের কাছে এটা নিতান্তই ছোট্ট আর মামুলি টার্গেট। তার ওপর শিশিরে ভেজা উইকেট। বল ধরতে সমস্যা হবে। সব মিলিয়ে কুমিল্লা পেরে উঠবে না, গেইল-ম্যাককালামদের একজনের ব্যাট জ্বলে উঠলেই রংপুর খুব সহজেই এ রান টপকে যাবে। এমনটাই ভাবা হচ্ছিলো।
কিন্তু হায়! ভাবা হলো একরকম, আর ঘটলো আরেকটা। স্লো ও লো উইকেটে গেইল-ম্যাককালামের ঝড়ো ব্যাটিং থামাতে অধিনায়ক তামিম ইকবাল কার্যকর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলেন আফগান লেগস্পিনার রশিদ খান ও তরুণ অফস্পিনার মেহেদি হাসানকে।
Advertisement
এ দু’জনের স্পিন ঘূর্ণিতেই কম্ম-কাবার রংপুরের। পাকিস্তানি পেসার হাসান আলির বলে পুল করতে গিয়ে আকাশে তুলেও কিপার লিটন দাসের অমার্জনীয় ব্যর্থতায় শূন্য রানে জীবন পাওয়া গেইল ওই ওভারে তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়েও বেশি দুর যেতে পারেননি। রশিদ খানের লেগস্পিনে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন গেইল (১৩ বলে ১৭)।
আর প্রথম থেকে নিচু ডেলিভারিতে অস্বস্তি ভোগ করা ম্যাককালাম (১৪ বলে ১৩) বারবার শট খেলতে গিয়েও মাঝ ব্যাটে আনতে না পেরে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পড হন অফ স্পিনার মেহেদির বলে।
দুই আশা ভরসার কেন্দ্রবিন্দু গেইল-ম্যাককালাম আউট হবার পরই আসলে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে মাশরাফির রংপুর। এরপর লেগস্পিনার রশিদের বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন লঙ্কান টপ অর্ডার কুশল পেরেরা, শূন্য রানে।
আর বাঁহাতি শাহরিয়ার নাফীস অফস্পিনার মেহেদির বলে জায়গায় দাড়িয়ে বোল্ড হলেন শূন্য রানে। বিনা উইকেটে ৩১ রান থেকে ৩২ রানে রংপুরের খোয়া গেলো ৪ উইকেট। এরপর রবি বোপারা (৪৮ বলে ৪৮) আর মোহাম্মদ মিথুন (২৬ বলে ৩১) চেষ্টা করেও পারেননি।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের দুই সেরা, সফল ও বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান নিয়েও ১৫২ রান করতে না পারার হতাশায় নীল রংপুর শিবির। অধিনায়ক মাশরাফির হতাশা একরকম। আর অনেক মূল্যে কেনা গেইল (প্রতি ম্যাচে ৩০ হাজার ডলার) আর ম্যাককালামের (ম্যাচ পিছু ২৫ হাজার ডলার) দু’জন এক সাথে ব্যর্থ- নিশ্চয়ই অনেক বেশি হতাশ ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা।
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি