ধর্ম

রমজানে প্রতিবেশীর হক

চলছে পবিত্র রমজান মাস। এ মাস হচ্ছে সংযমের মাস। ধনী তথা সামর্থ্যবানদেরকে গরীবের কষ্ট, ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও অভাব বোঝানোর মাস। আমার প্রতিবেশী কি ইফতারে তৃপ্ত হচ্ছে। প্রতিবেশীর হক কতটুকু আদায় করতে পারছি। মাগফেরাতের দশকে আমরা আল্লাহ এবং মানুষের মাঝে সর্বাগ্রে প্রতিবেশীর কাছে কতটুকু দাবীমুক্ত। আসুন জেনে নিই প্রতিবেশীর ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বর্ণোজ্জল চিন্তা ভাবনা কী-রমজানের প্রতিবেশী-সমাজের ছোট-বড়, ধনী-গরিব মিলেই আমাদের সমাজ। আমরা যারা গ্রাম-গঞ্জে বসবাস করি তাদের অধিকাংশই গ্রামীণ জনপদে বসবাস করি। সেই জনপদে কারো কারো রমজান কাটে অনাহারে-অর্ধাহারে। সমাজের বিত্তবানদের উচিত এই গরীব প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নেয়া। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সঙ্গীদের মধ্যে উত্তম সঙ্গী হলো সেই ব্যক্তি যে তার নিজের সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহর দৃষ্টিতে প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তম প্রতিবেশী হলো সেই প্রতিবেশী যে তার নিজের প্রতিবেশীর কাছে উত্তম। (তিরমিজি, মুস্তাদরেকে হাকেম)।এ হাদিসের আলোকে বোঝা গেল, আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিবেশী সেই ব্যক্তি যে তার নিজের প্রতিবেশীর কাছে উত্তম। আমাদের আজকের রোজা পালন হচ্ছে- রহমত, বরকত, মাগফেরাত, জান্নাত লাভ, জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত এবং আখিরাতে আল্লাহর সাথে দিদারের মতো নিয়ামত লাভের আশায়। তাহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস অনুযায়ী আমাদেরকে রোজা পালনে প্রতিবেশীর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন; গরীব প্রতিবেশীর ইফতার ও সাহরিতে সহযোগীতা করা আমাদের শুধু নৈতিক দায়িত্বই নয়; বরং রাসুলের অনেক উচ্চ স্থানের সুন্নতও বটে।রমজান এসেছে আমাদের মাঝে গরিবের অবস্থা উপলদ্ধির জন্যই। আমরা তা অনুধাবন করতে পারছি। আমরা বুঝতে পারছি, আমার পাশের বাড়ির, পাশের মহল্লার পরিবারটি ঠিক মতো ইফতার করতে পারছে না। আমরা খোঁজ নিলে দেখতে পাবো যে, অনেক প্রতিবেশী রোজাদার ছোলা, পেয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ ইত্যাদি তো থাক দূরের কথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত খেজুর দিয়ে ইফতার করা, তাই পাচ্ছে না।আমরা কি একবারও ভাবছি আমাদের গরিব প্রতিবেশীর কথা। ভাবছি ঈদে বাড়ি গেলে গরিব প্রতিবেশীকে ফিতরা আদায় করবো। জাকাত দেবো। কিন্তু আমরা যদি এই রমজানে তাকে দান করি, সাদকা দিই, তাহলে এর ছাওয়াব বা প্রতিদান পাওয়া যাবে অন্যান্য সময়ের চেয়ে দশগুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বেশি।সুতরাং ফিতরার চিন্তা করার আগেই আমরা এই রমজানে গরীব প্রতিবেশির পাশে দাঁড়াই। তাদের ইফতার দিয়ে সহযোগিতা করি। শুধু নিজের রুচিকর ইফতার নিয়ে ব্যস্ত থাকলেই চলবে না। কিয়ামতের কঠিন দিনে আমাদেরকে এই গরিব প্রতিবেশীর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।অপর এক হাদিসে এসেছে, হযরত ইবনু উমর হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জিব্রিল আলাহি ওয়া সাল্লাম আমাকে অবিরত প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে উপদেশ দিতেন। এতে আমার ধারণা হলো যে, অচিরেই হয়তো তাকে ওয়ারিস বানানো হবে। (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)এই হাদিস দ্বারা প্রতিবেশীর গুরুত্ব অধিকই প্রমাণ করে। সুতরাং এই রমজানে আমরা প্রতিবেশীর প্রতি সুদৃষ্টি দেবো। তারা ঠিক মতো ইফতার করতে পারছে কি না। সেহরি খেতে পারছে কি না। ইফতার ও খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগীতা করার জন্য এগিয়ে আসবো। প্রতিবেশীর এই দানকে আল্লাহ আমাদের এই রমজানের রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাত লাভের মাধ্যম করুন। আমীন।তথ্যসূত্র : সহিহ বুখারী, মুসলিম, জামে আত-তিরমিজি, মুস্তাদরেকে হাকেমজাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগী যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।এইচএন/পিআর

Advertisement