খেলাধুলা

ওয়াটসনের না আসা শাপে বর, পুষিয়ে দিচ্ছেন পোলার্ড!

শেষ মুহূর্তে কাফ মাসল ইনজুরিতে বিপিএল খেলতে আসতে পারেননি অসি অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন। এ অস্ট্রেলিয়ানকে না পেয়ে কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন তাকিয়ে ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দীর্ঘদেহী কাইরণ পোলার্ডের দিকে।

Advertisement

বিপিএল শুরুর আগে জাগো নিউজের সাথে আলাপে বলেছিলেন, পোলার্ডের ওপর আস্থা রাখতে হচ্ছে। আশা করছি পোলার্ড ওয়াটসনের ঘাটতি পুষিয়ে দেবে। শেষ পর্যন্ত, পোলার্ড ওয়াটসনের ঘাটতি পুষিয়ে দিচ্ছেন। ঢাকা ডায়নামাইটস কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন মনে করছেন, ওয়াটসনকে না পাওয়াটা বরং শাপে বর হয়েছে।

আজ খেলা শেষে জাগো নিউজের সাথে আলাপে সুজন জানালেন, শেন ওয়াটসনকে না পেয়ে খানিক হতাশায় ভুগছিলাম। তবে বিশ্বাস ছিল পোলার্ডের ওপর। সারা বছর প্রচুর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে। এই ফরম্যাটের ক্রিকেট তাদের কাছে একদম জানা অংকের মতো হয়ে গেছে। আমার এখন মনে হয় ওয়াটসনের না আসা বরং শাপে বর হয়েছে।’

ওয়াটসন শতভাগ সুস্থ্য ছিল না। তাই তার কাছ থেকে এমন পারফরমেন্স পেতাম কি না সন্দেহ। পোলার্ড, একাই আগের ম্যাচ জিতিয়েছে। আজও দারুন ব্যাটিং করেছে। ঢাকা কোচের মূল্যায়ন অমুলক নয়। আজ ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটা তার হাতে না উঠলেও, রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে শনিবার দুপরের ম্যাচে ঢাকার জয়ে বড় ভুমিকা ছিল পোলার্ডেরও।

Advertisement

ঢাকার ইনিংসে তো বটেই, ম্যাচেরও টপ স্কোরার (৩৮ বলে ৬৫) ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার এভিন লুইস। আর শেষ অংশে শহিদ আফ্রিদির স্পিন ঘূর্ণি (৪ ওভারে ২৬ রানে ৪ উইকেট)। খালি চোখে এবং স্কোরকার্ড দেখার পরও মনে হবে ঢাকা ডায়নামাইটসের সেরা পারফরমার বুঝি এরাই; কিন্তু আসলে কি তাই? নাহ মোটেও তা নয়।

দিন শেষে ৬৮ রানের বড় জয় পাওয়া সাকিব আল হাসান বাহিনীর জয়ের মূল রূপকার শুধুই ওই দু’জন নন। আরও একজন আছেন? তিনি কে? আর কেউ নন, কাইরণ পোলার্ড; ঢাকা ডায়নামাইটসের দীর্ঘদেহী ক্যারিবিয়ান মিডল অর্ডার।

যারা আজ দুপুর থেকে বিকেল অবধি ঢাকা ডায়নাাইটস আর রাজশাহী কিংস ম্যাচ দেখেছেন তারা সবাই একবাক্যে বলবেন, এ ম্যাচে ঢাকা শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানে জিতলেও সাকিবের দলকে ২০ ওভার শেষে প্রায় নিশ্চিত ঠিকানা খুঁজে দিয়েছেন কাইরণ পোলার্ড।

সন্দেহ নেই আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান এভিন লুইস শুরুতে ঝড়ের বেগে রান তুলে রাজশাহীর ফ্রন্টলাইন বোলিংকে তছনচ করে দিয়েছেন। তার ঝড়ো উইলোবাজিতে ঢাকার শুরুটাও হয়েছে দারুণ।

Advertisement

শেরে বাংলায় অন্যদিন প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করা বেশির ভাগ দলই শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অস্বস্তি বোধ করে। শেষ ৫-৬ ওভারে কোন না কোন মিডল অর্ডারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াকু বা নির্ভর করার মত পুঁজি পায়। আজ এভিন লুইস আর শহীদ আফ্রিদি মাত্র ৪.১ ওভারে ৫৩ রান তুলে দিলে ঢাকা পায় উড়ন্ত সূচনা।

আফ্রিদি ৮ বলে ১৫ রান করে আউট হলেও এভিন লুইস পঞ্চাশ পেরিয়ে যান। ইনিংসের ঠিক মাঝামাঝি তরুণ পেসার হোসেন আলীর বলে ডিপ মিড উইকেটে মুমিনুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে লুইস যখন আউট হন তখন ঢাকার স্কোর ৯৯/৩।

সেখান থেকে ঢাকার রান গিয়ে শেষ অবধি ঠেকে ২০১-এ। দলকে এই এতদুর নিয়ে যাবার পিছনে মূল ভুমিকাই কাইরণ পোলার্ডের। সাত নম্বরে নেমে একাই সব দায় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে খেলেন। তার কারণেই শেষ ১০ ওভারে ঢাকা পায় ১০২ রান। ২৫ বলে যার ৫২ আসে পোলার্ডের ব্যাট থেকে।

এভিন লুইসের সাজানো ও দেখানো পথে যদি আর কেউ হেঁটে দলকে নিয়ে যেতেন তাহলে ভিন্ন কথা ছিল। কিন্তু কেউ তা পারেননি। ৯৯ রানে লুইস আউট হবার পর নাদিফ (৯বলে ৬), কুমারা সাঙ্গাকারা (২২ বলে ২৮) আর অধিনায়ক সাকিব (১১ বলে ১১) রান গতি বাড়াতেও পারেননি।

স্কোরলাইন খুব বড়ও করতে পারেননি। বরং এভিন লুইস যেমন ইচ্ছেমত উইকেটে সামনে ও দু’দিকে হাত খুলে রান গতি গতি বাড়াচ্ছিলেন, সে গতি অনেকটাই কমে গিয়েছিল। যা পোলার্ডের ব্যাটের ছোঁয়ায় আবার বেড়ে যায়। ১৪ নম্বর ওভারে ( ১৩.৩) উইকেটে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আউট না হয়ে মাত্র ২৫ বলে ৫২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন।

আগের ম্যাচে শেষ দিকে ঝড় তুলে ছয় ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন পোলার্ড। আজ যেহেতু সাথে তেমন কোন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান ছিলেন না, তাই খানিক দায়িত্ব নিয়ে খেলার চেষ্টায় তুলে মেরেছেন কম। তাই ছক্কা তুলনামুলক কম; তিনটি।

শেষ অবধি পোলার্ডের হাফ সেঞ্চুরিতেই ঢাকা পৌছে যায় ২০০‘র ঘরে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এবারের বিপিএলে রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে এ ম্যাচেই প্রথম কোন দল ২০০‘র ঘরে পৌছালো।

আর শেষ পর্যন্ত রাজশাহী ওই রান টপকাতেও পারেনি। ধারে কাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি। আফ্রিদির লেগস্পিনে বেসামাল স্যামির দল অলআউট হলো ১৩৩ রানে। রান যা করার করলেন তরুণ জাকির হাসান। আগের দিন ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংস খেলা এ উইকেট কিপার কাম মিডল অর্ডার এ ম্যাচেও রাজশাহীর সর্বোচ্চ স্কোরার, ২৩ বলে ৩৬।

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি