বৃষ্টিস্নাত শীতে নির্মলতা এসেছে প্রকৃতিজুড়ে। দু’দণ্ড গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিই প্রকৃতির রূপ বদলে দিয়েছে। আর তাতেই শীতের হাতছানি মিলছে পাড়ায় পাড়ায়। ভাপা পিঠা, চিতই পিঠার পসরা এখন নগরীর গলিতে গলিতে। এমন আবহে যদি পিঠার সঙ্গে বাঁশির সুর, ঢাকের তাল আর বাউলের উদাস করা গান মেলে, তাহলে কার না মন হরে?
Advertisement
হ্যাঁ, রাজধানীবাসী আজ (১৭ নভেম্বর, শুক্রবার) হারিয়েছিল ঠিক যেন গ্রামেই। এপাড়ে পিঠার গন্ধ আর ওপাড়ে মন হরণ করা বাউলের গান। আবার নাগরদোলার চিৎকার আর বানরখেলার ডুগডুগির আওয়াজও ভেসে আসে ক্ষণে ক্ষণে।
শুক্রবার ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে মিলেছিল এক টুকরো গ্রামবাংলার প্রতিচ্ছবি। পিঠার গন্ধে মৌ মৌ করছিল সকাল থেকেই। বিকেল হতেই আর তিল ধরার ঠাঁই মেলেনি। দীর্ঘ লাইন ধরে প্রবেশ করতে হয়েছে রবীন্দ্র সরবোরের মঞ্চ আঙ্গিনায়। আর সন্ধ্যায় তো পুরোই পাগলপাড়া নবান্নের এ আয়োজন। তখন মঞ্চে বেহলা হাতে হালের জনপ্রিয় বাউলশিল্পী সামছেল হন চিশতি। সঙ্গে কাঠি ঢোল, বাঁশের বাঁশি, তবলা, রাবাব আর মুন্দিরার খেলা।
গাইলেন, ‘যদি থাকে নসিবে, আপনা আপনা আসবে/জোর করে মন হরণ করো না/করে ছলনা/; ‘বাউলের সঙ্গে গাইলো সবাই, নাচলোও সবাই। এরপর ‘বেহায়া মন’ শিরোনামের আরও দুটি গানে প্রায় যেন গ্রামই নিয়ে গেল দর্শকদের।
Advertisement
ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরের মুক্তমঞ্চে বৃহস্পতিবার তিন দিনব্যাপী শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব। প্রাণ চিনিগুড়ার পক্ষ থেকে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
উৎসবে পুঁথি পাঠ, গাজীর কিসসা, পালা গান, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, পালকি, লাঠি খেলা, বানর নাচে মাতোয়ারা দর্শকরা। ঢেকি, কুলা, মাথাল, যাতাকলসহ গ্রামবাংলার নানা ঐতিহ্যও প্রদর্শিত হচ্ছে উৎসবে। কথা হয়, সামছেল হক চিশতি বাউলের সঙ্গে। বলেন, গান তো নানা জায়গাতেই গাই। শহরের মধ্যে এমন আয়োজন আসলেই দুর্লভ। গান গেয়ে প্রাণ ভরালাম। যারা এসেছেন, তারা গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধারণ করেই এসেছেন।
সিরাজগঞ্জ থেকে বানর নিয়ে খেলা দেখাতে এসেছেন জয়নাল আবেদিন। বলেন, এ জন্তুর (বানর) খেলা গ্রামেই মানায়। তবে এখানে এসেও গ্রামীণে মেলা মনে হলো। থাকব তিনদিনই।
উৎসবে মন মজাতে এসেছেন সিসিলিয়া। একটি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার এই তরুণী। বলেন, দিনটি দারুণ উপভোগ করলাম। দুপুরের খাবার সেরেছি পিঠা দিয়েই। বিকেলে প্রিয় শিল্পীর গান শুনলাম। মনে রাখার মতো একটি উৎসব বটে।
Advertisement
এএসএস/আরএস