তথ্যপ্রযুক্তি

রোবট রেস্টুরেন্টে এত সাড়া পাব কল্পনাও করিনি

দুদিন হলো, রোবট রেস্টুরেন্টটি চালু করেছি। কিন্তু মানুষের যে এত সাড়া পাব তা কখনো কল্পনাও করিনি। দিনরাত কাস্টমারের উপচেপড়া ভিড়। তাদের সার্ভিস দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের দুটি রোবটে হচ্ছে না। কাস্টমারদের চাপ সামলাতে শিগগিরই আরও দুটি রোবট যুক্ত করব।

Advertisement

জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এসব কথা বলেন, দেশে প্রথম চালু হওয়া রোবট রেস্টুরেন্টের চেয়ারম্যান আনোয়ারুন নবী মজুমদার।

রাজধানীর মিরপুর রোডে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন এবং আসাদ গেটের কাছে প্রধান সড়কের ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় এ রেস্টুরেন্টটির অবস্থান। এখানে খাবারের অর্ডার নেন মানুষ আর টেবিলে কাস্টমারদের খাবার সরবরাহ করে রোবট।

সরেজমিনে রোবট রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ভেতরে জায়গা না পাওয়ায় অনেকে আছেন দাঁড়িয়ে। কেউ এসেছেন সপরিবারে। আবার কেউ বন্ধুদের সঙ্গে। তবে রোবট রেস্টুরেন্টে শিশুদেরই আগ্রহ একটু বেশি।

Advertisement

রেস্টুরেন্টের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, বিনোদনপ্রেমি ভোজনরসিক মানুষ বসে আছেন খাবারের অপেক্ষায়। ম্যাক্স (ছেলে) ও মেগান (মেয়ে) নামের দুটি রোবট টেবিলে টেবিলে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। একটি টেবিলে খাবার নিয়ে আসল রোবট। রোবটের ট্রে থেকে খাবার নামালেন এক ক্রেতা। সঙ্গে সঙ্গে রোবট থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ বলল। পাশে বসা শিশুটি রোবট দেখে খুব খুশি।

মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে মা, ভাই, বোন ও দাদির সঙ্গে রোবট রেস্টুরেন্টে এসেছে ছোট্ট শিশু তামজিল আজিজ খান। রোবট দেখার অনুভূতি প্রাকাশ করে তামজিল বলেছে, আমি জীবনে রোবট দেখি নাই। তাই দেখতে এসেছি। এখানে রোবট খাবার দেয়। রোবট খাবার দেবে আমি খাব।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রেস্টুরেন্ট দেখতে যান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক

সুরাইয়া নামে এক নারী জাগো নিউজকে বলেন, ফেসবুকে নতুন এ রেস্টুরেন্টের খবর পেলাম। রোবট খাবার দেবে বিষয়টি বাস্তবে দেখার জন্য এসেছি। খাবার অর্ডার করলাম। রোবট খাবার নিয়ে এসেছে। বিষয়টি খুব আনন্দদায়ক। খাওয়াও হলো সঙ্গে নতুন একটি অভিজ্ঞতা পেলাম। ভালোই লাগল। আবারও বন্ধুদের নিয়ে আসব।

Advertisement

একটি রেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. আসলাম বলেন, রোবটের কথা শুনে আমার দুই ছেলে আসতে চাইল। তাই তাদের নিয়ে এসেছি। শহরে বাচ্চাদের তেমন কোনো বিনোদনের জায়গা নেই। এখানে তারা বিনোদনও পেয়েছে খাবারও খেয়েছে। আমার দুই ছেলেই রোবট দেখে খুব খুশি। এটি একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ বলে জানান তিনি।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আনোয়ারুন নবী বলেন, আমার সন্তান তাসিন রওনাক নবী এবং রাহিন রাইয়ান নবী চীন সফরে যায়। সেখানে গিয়ে তারা চীনের রোবট দ্বারা খাবার সরবরাহ পদ্ধতি দেখে আকৃষ্ট হয়। তারা তখন রোবট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং বাংলাদেশে রোবট রেস্টুরেন্টে চালুর বিষয়ে আলোচনা করে। এরপর এই রেন্টুরেন্টের যাত্রা শুরু হলো।

‘গত বুধবার রেন্টুরেন্টটি উদ্বোধন করি। এরপর থেকেই মানুষের ভিড়। আমরা কাস্টমারদের বসার জায়গা দিতে পারছি না। রোবটের প্রতি মানুষের আগ্রহ আর এত সাড়া পাবো কল্পনাও করিনি। বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর হওয়ায় মানুষের ভিড় আরও বেড়ে গেছে-’ বলেন তিনি।

আনোয়ারুন নবী বলেন, ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাপে খাবার সরবারহ করতে হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের রাত ১০টা পর্যন্ত রেস্টুরেন্ট খোলা রাখার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় খাবার শেষ হয়ে যায়। অনেকে এসে খাবার না পেয়ে ঘুরে গেছেন। বিষয়টি দুঃখজনক। দুটি রোবট খাবার সরবরাহ করছে। আমরা শিগগিরই আরও দুটি রোবট আনব।

তিনি বলেন, ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এসেছিলেন আমাদের রোবট রেস্টুরেন্ট দেখতে। তিনি খুব খুশি হয়েছেন আমাদের নতুন এ উদ্যোগে।

খাবারের মান প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রাহিন রাইয়ান নবী বলেন, খাবারের দাম সাধ্যের মধ্যেই রাখা হয়েছে, যাতে সবশ্রেণির মানুষই এখানে আসতে পারেন। শিশুদের জন্য আমাদের বিশেষ কিছু খাবার রয়েছে। আমরা খাবারের মান ও পারিবারিক পরিবেশ অবশ্যই বজায় রাখব। যাতে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে কেউ এখানে খেতে আসতে পারেন।

তিনি জানান, বর্তমানে তিনটি খাবারের আইটেম রয়েছে। সর্বসাধারণের সুবিধার্থে প্রাথমিক অবস্থায় শিশুদের ‘কিডমিল’ এবং দেশীয় খাবারের সেট ফুড পরিবেশন করা হচ্ছে, যার মূল্য ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রেস্টুরেস্টটি প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

এসআই/এমএ/জেডএ/এমএস