খেলাধুলা

বাংলাদেশিদের দাপটের ম্যাচে নায়ক জাকির

‘আচ্ছা ভাই, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কি হলো? টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যাদের বেশি ভালো খেলার কথা, যাদের ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে স্পেশালিস্ট ভাবা হয়- সেই সৌম্য আর সাব্বিরের ব্যাটে রান নেই কেন? শুধু সৌম্য, সাব্বিরের কথা বলা কেন? মুমিনুল, জহুরুল ইসলাম অমি ছাড়া বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানরা কি ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলা ভুলেই গেলেন? তাদের কেন এমন দৈন্য দশা?’

Advertisement

বিপিএলে গত কয়েকদিন এসব কথাই আলোচনা হচ্ছে বেশি। হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। আগের ১৪ ম্যাচের একটিতেও দুই প্রতিদ্ব›দ্বী দলের টপ স্কোরার ছিলেন না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

তবে অবশেষে সে ধারার ব্যতিক্রম ঘটলো আজ। শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শেরে বাংলায় এমন একটি ম্যাচ হলো, যে ম্যাচের দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দাপট। শ্রীলঙ্কার গুনাথিলাকার ৩৭ বলে ৪০ রানের ইনিংসটি ছাড়া বিগ স্কোরাররাই হলেন বাংলাদেশের।

যার প্রথম অংশে জ্বলে উঠলো সিলেট সিক্সার্সের সাব্বিরের ব্যাট। আর শেষে, তথা আসল অংশের নায়কও মুমিনুল হক এবং তরুণ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান জাকির হাসান। প্রথশ অংশে সাব্বির (৪১) ও পরের পর্বে মুমিনুল (৪২) চল্লিশের ঘরে আউট হলেও তরুণ জাকির ঠিক পঞ্চাশ হাঁকিয়ে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়লেন।

Advertisement

জাকিরের ম্যাচ জেতানো উইলোবাজির কারণেই স্থানীয় উইলোবাজদের দাপটের ম্যাচে শেষ হাসি রাজশাহী সিক্সার্সের। শেষ অবধি খেলার ১৫ বল আগেই ৭ উইকেটের দারুণ জয়ে মাঠ ছাড়লো স্যামির দল।

প্রথম তিন ম্যাচ টানা জেতা সিলেট সিক্সার্সের খেলা দেখে ভক্ত ও সমর্থকরা উদ্বেলিত হলেও সাব্বির সমর্থকদের মন ভরেনি। কারণ, তাদের প্রিয় ব্যাটসম্যান চরম রান খরায় ভুগছিলেন। আজকের ম্যাচের আগে পর্যন্ত চেনা সাব্বিরের দেখাই মেলেনি।

শুক্রবার রাজশাহী কিংসের সাথে খেলার আগ পর্যন্ত ৫ ইনিংস (২+৩+১৬+০+১) সাকুল্যে সাব্বিরের ব্যাট থেকে এসেছে ২২ রান। সর্বোচ্চ ১৬। আজ অনেক দেরিতে জ্বলে উঠলো সাব্বিরের ব্যাট। দল ধুঁকছিলো। রান উঠছিলো না মোটেই।

প্রথম ১০ ওভার শেষে রান তোলার গতি থাকলো পাঁচেরও নিচে। না যেতেই ইনিংসের অর্ধেক শেষ; স্কোর ৪৮/৩। এমনকি ১৫ ওভার পর্যন্ত রান তোলার গতি পাঁচের আশপাশে (৭৭/৫)। দেখে মনে হচ্ছিলো খুব বেশি গেলে ১১৫ থেকে ১২০ পর্যন্ত যেতে পারে সিলেট সিক্সার্সের রান।

Advertisement

কিন্তু ইংলিশ অলরাউন্ডার টিন ব্রেসনানের সাথে সাব্বির জ্বলে ওঠায় সেই স্কোর গিয়ে ঠেকলো ১৪৬‘এ । শেষ ৫ ওভারে উঠলো ৬৯ রান। যার ৫৪ রানই আসলো শেষ তিন ওভারে। এর মধ্যে ১৮ নম্বর ওভারে ফরহাদ রেজা ২৪, ১৯ নম্বর ওভারে মোহাম্মদ সামি ১১ আর ২০ নম্বর ওভারে উইলিয়ামস দিলেন ১৯ রান।

এরমধ্যে ১৮ নম্বর ওভারে ফরহাদ রেজার ওপর প্রবল বেগে আক্রমণ করলেন সাব্বির ও ব্রেসনান। ওই ওভারে ২৪ রান দিয়ে বসলেন রাজশাহী পেসার ফরহাদ রেজা। প্রথম বলে সিঙ্গেলস নিয়ে ব্রেসনানকে স্ট্রাইক দিলেন সাব্বির। স্ট্রাইক পাওয়া ইংলিশ ব্রেসনান প্রথমে ছক্কা হাঁকালেন। পরে সিঙ্গেলস নিয়ে আবার স্ট্রাইক দিলেন সাব্বিরকে। সাব্বির শেষ তিন বলের সবগুলোকে (পরপর দুই ছক্ক, শেষ বলে বাউন্ডারি) সীমানার ওপারে পাঠালেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই মাঠ গরম করা ব্যাটিং ম্লান হলো পরের সেশনে মুমিনুল হক আর জাকির হাসানের উত্তাল উইলোবাজিতে। এবারের বিপিএলে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের হয়ে প্রথম ও আজকের খেলার আগে পর্যন্ত একমাত্র ফিফটি হাঁকানো মুমিনুল শুরু থেকে আস্থার সাথে খেলে সিলেট সিক্সার্সের ফ্রন্টলাইন বোলিংকে এলোমেলো করে দেন।

একপ্রান্তে তার আস্থা, আত্মবিশ্বাসী ও সাবলীল ব্যাটিংয়ে খেলার নিয়ন্ত্রণ চলে আসে রাজশাহীর হাতে। প্রথম উইকেটে মুমিনুলকে ভালোই সঙ্গ দিয়েছেন রনি তালুদার (২২ বলে ২৪)। ৬৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর সামিত প্যাটেল ১ রানে ফিরলে মনে হয় ম্যাচে ফিরবে সিলেট সিক্সার্স।

কিন্তু মুমিনুল, জাকির আর মুশফিক দায়িত্ব নিয়ে খেলায় আর নাসির বাহিনীর ম্যাচে ফেরা হয়নি। এর মধ্যে ভালো খেলতে খেলতে হঠাৎ আউট হয়ে গেলেন মুমিনুল। সিলেট পেসার আবুল হাসান রাজুর প্রথম বলে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে অযথা খোঁচা দিয়ে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি হাতছাড়া করেন মুমিনুল। তার ৩৬ বলে ৪২ রানের ইনিংস শেষ হবার শুরু হয় জাকির ঝড়।

ছোট-খাটো গড়নের এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হাত খুলে খেলতে পারেন অনুর্ধ্ব-১৯ থাকা অবস্থায়ই তা জানা ছিল; কিন্তু মাঝে কেন যেন নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি জাকির। অবশেষে আজ খেললেন নিজের মত করে। ২৬ বলে তিনটি ছক্কা ও চার বাউন্ডারিতে ৫১ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিলেন জাকির। বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুলের বলে উইনিং বাউন্ডারিটিও আসলো তার ব্যাট থেকেই। অপর প্রান্তে মুশফিকের ২০ বলে ২৫ রানের হার না মানা ইনিংসটিও রাজশাহীকে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে রাখলো কার্যকর ভূমিকা।

এআরবি/আইএইচএস/এমএস