‘ওমা, কি দারুণ দেখতে লাগছে, টলমলে স্বচ্ছ পানিতে নৌকাগুলো কেমন দুলে দুলে ভাসছে। পাশেই সোনালী আঁশ পাটের বোঝা। চারপাশে সারি সারি সবুজ বৃক্ষরাজি। ইটপাথরের যান্ত্রিক নগরীতে সুউচ্চ অট্টালিকার পাশে এমন দৃশ্য কি কল্পনা করা যায়!’
Advertisement
আজ (শুক্রবার) ছুটির দিন ভোরে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর লেকের সামনে দাঁড়িয়ে আনুমানিক ঊনিশ-বিশ বছর বয়সী এক তরুণী একই বয়সের আরেক তরুণীকে লক্ষ্য করে এ কথাগুলো বলছিলেন।
তাদের সঙ্গে আসা এক তরুণ এ সময় ক্যামেরা বের করে বলে, ‘তোরা দাঁড়া, লেকের পানি, নৌকা, পাট ও সবুজ বৃক্ষরাজিকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে ফাটাফাটি একটা ছবি তুলে দেই।’ এ সময় তিনজনকেই হাসতে দেখা যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে আগামীকাল (শনিবার) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Advertisement
এ সমাবেশকে ঘিরে লাখো মানুষের সমাগম হওয়াার আশা করা হচ্ছে। সরেজমিন পরির্দশনকালে দেখা গেছে সমাবেশকে ঘিরে মঞ্চ নির্মাণসহ শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ইতিহাস ও ঐহিত্যকে তুলে ধরতে মঞ্চের বিপরীতে জায়ান্ট স্ক্রিন তৈরি হচ্ছে।
এছাড়া উদ্যানের লেকে ভাসছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক বেশ কয়েকটি নৌকা। নৌকার পাশেই স্তুপাকারে রাখা আছে সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের বোঝা। সমাবেশ মঞ্চের চৌহদ্দিতে পাহারা দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। উদ্যানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা বৃহস্পতিবার প্রাত:ভ্রমনকারীদের শুক্রবার গেট বন্ধ থাকবে জানালেও আজ ভোরে গিয়ে গেট খোলা দেখতে পাওয়া যায়।
শওকত আলী নামের একজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, গতকাল তাদের ডেকে শুক্রবার গেট বন্ধ থাকবে বলা হলেও রাতে আবার গেট খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় হয়তো আজও সাধারণ লোকজনকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। তবে শনিবার ভোরে গেট বন্ধ রেখে সমাবেশে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তল্লাশি শেষে নেতাকর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হবে বলে শুনেছেন তিনি।
শোডাউনদলীয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ অনুষ্ঠানের আয়োজক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট হলেও প্রকারান্তরে এটি ক্ষমতাসীন দলের শোডাউনে পরিণত হবে। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটি বিএনপির সমাবেশের পাল্টাপাল্টি কোনো সমাবেশ নয়।
Advertisement
আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবারের সমাবেশে লাখো মানুষের সমাগম ঘটাতে শীর্ষ নেতারা তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডের সব নেতাকর্মীকে এতে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাঘা বাঘা রাজনৈতিক নেতাদের ভাষণ থাকলেও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতির পিতার এ স্বীকৃতিকে পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা দিতে হলে ওইদিন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী প্রতিটি নাগরিককে বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকতে হবে।
এদিকে দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন থানায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে বর্ধিতসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। বৃহস্পতিবার মহানগর দক্ষিণের পাঁচ থানার বর্ধিত সভায় ১৮ নভেম্বর নাগরিক সমাবেশে প্রতিটি নেতাকর্মীকে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেন নেতারা।
এমইউ/এমএমজেড/আইআই