অর্থনীতি

অনলাইন ব্যাংকিং সুযোগের পাশাপাশি ঝুঁকিও বাড়িয়েছে

অনলাইন ব্যাংকিং সুযোগের পাশাপাশি ঝুঁকিও বাড়িয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং, এটিএম সেবায় বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি তৈরি করেছে।

Advertisement

বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম’র অডিটোরিয়ামে অলটারনেটিভ ডেলিভারি চ্যানেল : অপরচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব দি নিউ ব্যাংকিং ইনভারমেন্ট’ শীর্ষক কর্মশালায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৬৭ শতাংশ অনলাইন ব্যাংকিং জালিয়াতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত। আইটি বিশেষজ্ঞ এবং আইটি ফার্মের সঙ্গে যোগসাজশে ব্যাংক কর্মকর্তারা এ জালিয়াতি করে থাকেন। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ জালিয়াতি ব্যাংক কর্মকর্তা এবং আইটি বিশেষজ্ঞরা ঘটান। শুধু ব্যাংক কর্মকর্তারা ১৮ শতাংশ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ৯ শতাংশ জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তা এবং আইটি ফার্মের যোগসাজশ রয়েছে। ব্যাংকিং খাতের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ৫০টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিআইবিএম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর বলেন, অনলাইনভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় অনেকাংশে কমে গেছে। মাত্র দুই লাখ জনবল দিয়ে এতোগুলো ব্যাংক কয়েক হাজার শাখা পরিচালনা করছে। অনলাইন ব্যাংকিং চালু না হলে এতোগুলো শাখা পরিচালনায় ১০ লাখেরও বেশি জনবল প্রয়োজন হত।

ডেপুটি গভর্নর বলেন, বিকল্প ব্যাংকিং ব্যবস্থা খুবই ভালো। কিন্তু এর অপব্যবহার হলে আর্থিক খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স আনা হচ্ছে। ব্যাংকারদের প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে আর্থিক খাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলমের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

Advertisement

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং জালিয়াতির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে এটিএম এবং প্লাস্টিক কার্ডের মাধ্যমে। প্রায় ৪৩ শতাংশ ঘটনা প্রযুক্তিভিত্তিক। জালিয়াতি ঘটনার মধ্যে ২৫ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘটছে। অনলাইন চেক ক্লিয়ারিং (এসপিএস) এবং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রন্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে ঘটছে ১৫ শতাংশ, ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে ১২ শতাংশ, ব্যাংকিং সফট্ওয়ায়ের মাধ্যমে তিন শতাংশ এবং সুইফটের মাধ্যমে দুই শতাংশ জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি হয়েছে। ১০ টাকার হিসাব খোলার সুযোগ দিয়ে শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাইকে যে আর্থিক অন্তুর্ভুক্তি করা যায়, তার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের আইটিতে দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, বাংলাদেশের সবাইকে ১০ টাকার হিসাব খোলার জন্য বাধ্যবাধকতা করতে হবে। এসময় জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির প্রশংসা করে তিনি বলেন, এর ফলে ব্যাকিং খাতে জালিয়াতি অনেক কমে এসেছে।

ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রেসিডেন্ট মো. আরফান আলী বলেন, আগামী দিনে ব্যাংকিং খাতের প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি না থাকলে ভয়াবহ সমস্যার মুখে পড়বে ব্যাংকিং খাত। কর্মশালায় উন্মুক্ত আলোচনায় অন্য বক্তারা বলেন, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ডেটা খরচ কমানো উচিত। ডেটা খরচ কমালে গ্রাহকরা সুবিধা পাবেন। এছাড়া এক্ষেত্রে ব্যাংকারদের মাইনসেট পরিবর্তন করতে হবে। অলটারনেটিভ ডেলিভারি চ্যানেলে লেনদেনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। কেননা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অনেক শাখায় এখনো ইলেকট্রিসিটি পৌঁছায়নি।

এমএ/এসআই/জেডএ/বিএ

Advertisement