মোরিসিও টিযুমবার সুরের আনন্দধারায় মন এখনও ভাসছে নিশ্চয়। অমন সুর কখনও মিলে যায়! সপ্তাহ-ই তো গড়ায়নি, মধুমাখা সে সুর হারাবে কেন! মোরিসিও টিযুমবা তার নিপুণ হাতে যা বাজালেন আর গাইলেন, তাই ছিল এবারের ফোক ফেস্টের অনবদ্য পরিবেশনা।
Advertisement
প্রথম দিনের গোটা স্টেডিয়াম নেচেছিল ব্রাজেলিয়ান ‘সেক্সটেট’ ছন্দের তালে তালে। ওটাই শেষ। ওই রাতে আর কেউ তালই আনতে পারেনি বলে শ্রোতাদের অভিমত। আসরের শুরু ফকির শাহবুদ্দিনে। শাহবুদ্দিনের গানে খিদে মেটেনি সুর পাগলদের। সাধকদের লেখা জনপ্রিয় গান গাইলেও গিটার আর বিদেশি যন্ত্রের অত্যাচারে ফকির শাহবুদ্দিন হারিয়েছিলেন ব্যান্ডের তালে। তিব্বতী লোক সংগীতের সুরে তেনজিন চো’য়েগাল গাইলেও, তা অবশ্য শ্রোতার মন জয় করতে পারেনি। বাঁশিতে ঝড় তোলার কথা ছিল, তা পারেনি ওরা।
আর প্রথম দিনের আসরের শেষ বেলায় শ্রোতাদের হতাশ করেছেন আসমের ফোক শিল্পী পাপন। ‘দিনে দিনে খসিয়া পড়িবে রঙিলা দালানের মাটি’ গানটি গত আসরে যে তালে গাইছিলেন, এবার তা মেলেনি। আরও বাংলা গান প্রত্যাশা থাকলেও পাপন মজেছিলেন হিন্দিতেই। তাও আবার গিটারের আধিক্যে। ফলে ফোকের চাইতে ব্যান্ডের ধাঁচ-ই বেশি ছিল পাপনে।
আসরের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে দর্শকের মন কাড়েন বাউল শিল্পী আরিফ দেওয়ান। ‘দয়া করে এসো হে দয়াল’ গানের মধ্য দিয়ে শ্রোতাদের হৃদয়ে টান ধরান। তবে শেষ বেলায় আরিফ দেওয়ানও আর সে টান ধরে রাখতে পারেননি। দেশিয় যন্ত্র ব্যবহার করলেও, মঞ্চে যন্ত্রীর আধিক্য আর গান বাছাইয়ে ত্রুটি থাকায় আরিফ দেওয়ানও ঠিকঠাক মাতাতে পারেননি।
Advertisement
তবে এদিন নেপালের গানের দল কুটুম্বা ঝড় তুলেছিলেন শ্রোতা মনে। দেশিয় যন্ত্র আর ঢংয়ে কুটুম্বা যে দর্শক মনে দাগ কেটেছিল, তা হলফ করেই বলা যায়। তবে পাকিস্তানের মিকাল হাসান ব্যান্ড এক প্রকার বিরক্তকর পরিবেশনা করে দ্বিতীয় দিন। এদিন অবশ্য মাত্র তিনজন যন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে ওঠে প্রাণে আলো দেয় অন্ধ বাউল শাজাহান মুন্সি। শেষ বেলায় মঞ্চে ওঠেন সুফি সংগীতের অনবদ্য দুই সহোদর নুরান সিস্টার্স। নুরান সিস্টার্সে গতবারের রেশ ছিল শ্রোতা মনে। এবারে ভরসা ছিল আরও বেশি। কিন্তু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হতাশাতেই রেখেছেন এ দুই বোন। যে সুরে মাতাল বনে যাওয়ার কথা ছিল, সে সুরে খানিকটা স্থির-ই থাকতে হয়েছে দর্শকদের।
আসরের শেষ দিনের শুরু বেলায় শরীয়ত-মারফত পালা গান নিয়ে মঞ্চে আসেন শাহ আলম সরকার ও আলেয়া বেগম। বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম এই পালা গানের সঙ্গে শহুরে শ্রোতারা বিশেষ পরিচিত লাভ করেন। তবে সময় স্বল্পতার কারণে শাহ আলম সরকার আর আলেয়া বেগমকে অতৃপ্তি নিয়েই মঞ্চ ছাড়তে হয়। অতৃপ্ত থাকে শ্রোতা মনেও।
এরপর মঞ্চে এসে কোকিলা সুরে দর্শক নাচান ফোক শিল্পী শাহনাজহ বেলী। লালন, হাছন রাজা, শাহ আবদুল করিম আর রাধারমণে মাস্তি করেন বেলী। যদিও বেলীর পরিবেশনায় ব্যান্ডের তালও ছিল। গিটার বিড়ম্বনায় তাল হারান বেলীও।
আসরের শেষ দিনে শ্রোতাদের পাগল করেন ইরানের গানের দল রাস্তাক। ওদের বাঁশিতে যা বাজল, তা কখনই ভোলার নয়। দলের নারী সদস্যদের পরিবেশনাও ছিল অসাধারণ। রাস্তাকে সুরেলা হৃদয় মাস্তি ঠিক এখনও।
Advertisement
এদিন ভারত থেকে আসা বাউলশিল্পী বাসুদেব দাসও বিশেষ গায়কী ঢংয়ে পরিবেশন করেন বাউল গান। আর ফোক ফেস্টের সমাপ্তি লগ্নে মঞ্চ আর গ্যালারিতে ঢেউ তুলেছিল মালির গানের দল তিনারিওয়েন ব্যান্ড। এ দলের শিল্পীদের মুখ বাঁধা ছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। তবে সুর আর যন্ত্রে ভেতরের আবেগ প্রকাশ করতে এতটুকু কার্পণ্য করেনি ইব্রাহিম আগ আলহাবরের দল তিনারিওয়েন ব্যান্ড।
এএসএস/এএইচ/জেআইএম