‘মামা, কাল কিন্তু মর্নিং ওয়াকে আইসেন না। গেটে কিন্তু তালা মারা থাকবে।’ বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি সংলগ্ন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথের সামনে প্রাতঃভ্রমণে আসেন ষাটোর্ধ্ব রহমত আলী। নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণে আসা এই বৃদ্ধকে দেখতে পেয়ে পার্কের আনসার সদস্য ওই কথা বলছিলেন।
Advertisement
রহমত আলী কারণ জানতে চাইলে আনসার সদস্য আঙ্গুল দিয়ে অদূরে লেকের দক্ষিণ পার্শ্বের সমাবেশ মঞ্চ দেখিয়ে বলেন, পরশুদিন নাগরিক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এ কারণে পুলিশের উপস্থিতিতে কড়া নজরদারির মধ্যে দিয়ে গত কয়েকদিন যাবত বিশেষ ব্যবস্থায় সভামঞ্চ তৈরি হচ্ছে।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) পার্কের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করবে বলে তারা জানতে পেরেছেন। পরশু সমাবেশ হলেও শুক্রবারই ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করে সমাবেশস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তাই শুক্রবার কাউকে পার্কে ঢুকতে দেয়া হবে না- বললেন আনসার সদস্য।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় ১৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নাগরিক সমাবেশ হলেও প্রকারান্তরে এটি ক্ষমতাসীন দলের শোডাউনে পরিণত হবে। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটি বিএনপির সমাবেশের পাল্টাপাল্টি কোনো সমাবেশ নয়।
Advertisement
সম্প্রতি বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সংহতি দিবস উপলক্ষে সমাবেশ করে। সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে দলীয়ভাবে চাঙা বিএনপি নেতারা।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবারের সমাবেশে ভেতরে বাইরে লাখো মানুষের সমাগম ঘটাতে শীর্ষ নেতারা তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। যে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মী সকলকে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাঘা বাঘা রাজনৈতিক নেতাদের ভাষণ থাকলেও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সুতরাং জাতির পিতার এ স্বীকৃতিতে পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা দিতে হলে ওইদিন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী প্রতিটি নাগরিককে বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকতে হবে।
দলীয় নেতাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন থানায় মহানগর আওয়ামী লীগের প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে বর্ধিতসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। বৃহস্পতিবার মহানগর দক্ষিণের পাঁচ থানার বর্ধিত সভায় ১৮ নভেম্বর নাগরিক সমাবেশে প্রতিটি নেতাকর্মীকে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেন নেতারা।
বৃহস্পতিবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে পুলিশ প্রহরায় মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। নিরাপত্তার স্বার্থে মঞ্চের সামনে অনেকটা জায়গা ফাঁকা রেখে নেতাকর্মীদের বসার জন্য প্যান্ডেল তৈরি হচ্ছে। বাঁশ দিয়ে একাধিক প্রবেশ গেট তৈরি করা হচ্ছে।
Advertisement
এমইউ/জেডএ/আইআই/আরআইপি