জাতীয়

অনুমোদনের অপেক্ষায় আরো পাঁচটি নতুন ধানের জাত

জাতীয় বীজ বোর্ডের কারিগরি কমিটির সভায় অনুমোদন পেল আরো পাঁচটি নতুন ধানের জাত। এই পাঁচটি জাতের মধ্যে চারটি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং অন্যটি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। ব্রি উদ্ভাবিত জাতগুলোর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ব্রিধান ৭০, ব্রিধান ৭১, ব্রিধান ৭২ ও ব্রিধান ৭৩। বিনা উদ্ভাবিত জাতটির নাম দেয়া হয়েছে বিনা ধান ১৭ গ্রিন সুপার রাইস।সুগন্ধী, লবণ সহনশীল, জিংক প্রোটিনযুক্ত এবং খরা সহ্য করার গুণসম্পন্ন এ জাতগুলো ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রায়াল বা পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হয়েছে। সব স্থানেই প্রত্যাশিত ফলন পাওয়ায় আশা করা যায় জাতীয় বীজ বোর্ড এর আগামী সভায় এসব জাত অনুমোদন পাবে। নতুন উদ্ভাবিত ও প্রস্তাবিত জাত ব্রিধান ৭০ আমন মৌসুমে চাষের উপযুক্ত। লম্বা, চিকন ও সুগন্ধী জাতের জীবনকাল ১৩০ দিন। ফলন হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ ৫ টন। ২০১৩-১৪ সালের আমন মৌসুমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুরের ১০টি স্থানে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হয়েছে এ জাত। মূল্যায়ন দল কর্তৃক ৯টি স্থানে জাতটি ছাড়করণের পক্ষে এবং একটি স্থানে ছাড়করণের বিপক্ষে সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির নিয়ন্ত্রিত গবেষণা খামারে পর পর দুই বছর ডিইউএস টেস্ট করা হয়েছে। এ জাতটিতে চেক জাত (তুল্য জাত) ব্রিধান ৩৭ এর চেয়ে একাধিক ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।প্রস্তাবিত ব্রিধান ৭১ হচ্ছে খরা সহনশীল জাত। খরার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে বলেই এই জাতটির নামকরণ করা হয়েছে ব্রিধান ৭১। প্রজনন পর্যায়ে ২১ থেকে ২৮ দিন বৃষ্টি না হলেও এ জাতের ফলনে তেমন ক্ষতি হবে না। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ফলন ৫ থেকে ৬ টন পর্যন্ত হতে পারে। রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে কম। প্রস্তাবিত জাতটিতে চেক জাত (তুল্য জাত) ব্রিধান ৫৭ থেকে নানামুখি ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে।প্রস্তাবিত ব্রিধান ৭২ এর জীবনকাল ১২৫ থেকে ১৩০ দিন। পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা ১১৬ সে.মি.। চালে ৮ দশমিক ৯ ভাগ প্রোটিন এবং ২২ দশমিক ৮ মিলি গ্রাম/কেজি জিংক রয়েছে, যা প্রচলিত অন্যান্য জাতের চেয়ে ৬ মিলিগ্রাম/কেজি এবং জিংক সমৃদ্ধ জাত ব্রিধান ৬২ এর চেয়েও ৩ মিলিগ্রাম/কেজি বেশি। হেক্টরে ফলন সাড়ে ৫ টনেরও বেশি। প্রস্তাবিত জাতটিতে চেক জাত (তুল্য জাত) ব্রিধান ৪১ এর চেয়ে নানামুখি ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।প্রস্তাবিত ব্রিধান ৭৩ আমন মৌসুমে উপযুক্ত লবণ সহনশীল। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো চারা অবস্থায় ১২ ডিএস/মি (৩ সপ্তাহ) লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। জীবনকাল ১২০ থেকে ১২৫ দিন। চালের আকৃতি চিকন, সাদা এবং ভাত ঝরঝরে। হেক্টর প্রতি ফলন সাড়ে ৪ টন।বিনা উদ্ভাবিত প্রস্তাবিত বিনা ধান ১৭ জিএসআর-এর জীবনকাল ১১২ থেকে ১২৮ দিন। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) সহযোগিতায় ফিলিপাইন হতে সংগ্রহ করা হয় এই জাতের মাতৃ কৌলিক সারি। এ জাতের এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন ২৩ দশমিক ৩ গ্রাম। প্রতি শীষে পুষ্ট দানার সংখ্যা গড়ে ২১৫ থেকে ২২৫টি। হেক্টর প্রতি ফলন ৭ টনের বেশি। দেশের ৫টি অঞ্চলের ১৪টি স্থানে ট্রায়াল করে জাতটি অবমুক্তকরণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। ব্রি এর আগে চারটি হাইব্রিডসহ ৭২টি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত এবং বিনা ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ৮১টি জাত উদ্ভাবন করেছে। জাতীয় বীজ বোর্ডে নিয়ম অনুযায়ী অচিরেই এ জাতগুলো অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) আনোয়ার ফারুক।বিএ/আরআইপি

Advertisement