আন্তর্জাতিক

বাসন মাজলেও মান যায়, রিকশা চালালে ক্ষতি কী?

‘অন্যের বাড়িতে বাসন মাজলেও তো মান-সম্মান যায়, রিকশা চালালে ক্ষতি কী?’ রিকশার প্যাডেল ঘোরাতে ঘোরাতেই প্রশ্নটা ছুড়ে দেন রিকশা চালক মিঠু। এমন প্রশ্নের জবাবে সম্মতি জানানো ছাড়া আর কীইবা উত্তর থাকতে পারে!

Advertisement

বিশেষ করে যে নারীর বাড়িতে স্বামী শয্যাশায়ী, আট বছরের ছেলে আর তিন বছরের মেয়ে রয়েছে, তার মুখে তো এমন প্রশ্নই স্বাভাবিক।

২৮ বছর বয়সী এ নারী ভারতের বেহালার রাস্তায় সকাল-বিকেল দু’বেলা রিকশা চালান। শুরুর দিকে রিকশা নিয়ে বেরোতে দেখলেই পুরুষ রিকশাচালকরা তাকে নিয়ে বিদ্রুপাত্মক কথা বলতেন।

অনেকেই তার কাছে জানতে চান, নারী হয়ে রিকশা চালাতে আসার কারণ? মিঠুর সাফ জবাব, ‘অন্যের বাড়ি বাসন মাজলে কি সম্মান থাকে?’

Advertisement

স্বামীকে সুস্থ করা, সন্তানদের পড়াশোনা করাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মিঠু পুরুষ রিকশাচালকদের যাবতীয় বাধা উপেক্ষা করেই বেহালা পোড়াসত্যতলা রিকশাস্ট্যান্ডে নিয়মিত হাজির হচ্ছেন।

মিঠুর স্বামী বরুণ পণ্ডিত এক সময় রিকশা চালাতেন। স্বামীকে সাহায্য করতে লোকের বাড়িতে কাজ করতেন মিঠু। চারজনের সংসার কোনোমতে চলে যেত।

কিন্তু তার মাদকাসক্ত স্বামী পঙ্গু হয়ে গেছেন। স্নায়ুজনিত অসুখে বর্তমানে শয্যাশায়ী তিনি। ভারী কাজ করতে নিষেধ করেছেন চিকিৎসক। বাধ্য হয়ে রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ভাড়ার রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। কিন্তু সমস্যা সেখানেও।

বাধা হয়ে দাঁড়ান এলাকার পুরুষ রিকশাচালকরা। মিঠুকে রিকশা নিয়ে কোনো খানেই দাঁড়াতে দিতেন না তারা। সম্প্রতি কলকাতা পৌরসভার ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজীব দাস মিঠুকে রিকশা চালাতে দেখেন। সব জানার পর তিনিই পোড়াশ্বথতলা স্ট্যান্ডে মিঠুকে রিকশা নিয়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করে দেন।

Advertisement

মিঠু এখন দু’বেলা রিকশা চালান। সংসারের কাজ সেরে সকাল ন’টা নাগাদ রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ঘণ্টা দু’য়েক রিকশা চালিয়ে বাড়ি ফিরে স্বামী-সন্তানদের খাইয়ে, নিজে খেয়ে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত আবার রিকশা চালান।

দৈনিক দুই থেকে তিনশ টাকা উপার্জন করেন তিনি। টাকা জমিয়ে একটি পুরনো রিকশাও কিনেছেন। সারা মাসের উপার্জন দিয়ে সংসারের খরচ, ঘর ভাড়া, ছেলের পড়াশোনা ছাড়াও সেই টাকা থেকেই স্বামীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে হয়।

রিকশা চালাতে কোনো সমস্যা হয় কি-না জানতে চাইলে মিঠুর জানান, ‘প্রথম কয়েকদিন একটু গা, হাত-পায়ে ব্যথা হয়েছিল। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।’

মিঠুর ছেলে সবে ক্লাস টু-তে পড়ে। ছোটো বোনকে ‘অ, আ, ক, খ’ শেখায় সে। হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরে বাড়ি ফিরে এমন দৃশ্য দেখে সব ক্লান্তি ভুলে যান তিনি।

স্বপ্ন দেখেন, তিন চাকার রিকশাই একদিন তার সংসারের হাল ফেরাবে। স্বামীকে সুস্থ করানো, ছেলেকে ভালোভাবে পড়াশোনা কোনোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। মেয়েকেও ভর্তি করবেন স্কুলে।

কেএ/এমএস