ইসলাম ক্ষমা ও উদারতা জীবন ব্যবস্থা। তা আবারও প্রমাণিত হলো আমেরিকার আদালতে। আমেরিকায় হত্যা ও লুটপাট মামলার আসামি ট্র্যাই আলেকজান্ডার রেলফোর্ডের নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ড অথবা ৩১ বছরের জেল হওয়ার কথা।
Advertisement
আদালতে রায় ঘোষণার মঞ্চে মৃত সালাহউদ্দিন জিতমউদের বাবা আব্দুল মুমিন সোম্বাত জিতমউদের হত্যাকারী ট্র্যাই আলেকজান্ডার রেলফোর্ড (২৪)কে ক্ষমা করে দেন। খবর ইলমফিড ডটকম।
ট্র্যাই আলেকজান্ডার রেলফোর্ড ২০১৫ সালে ২২ বছরের যুবক সালাহউদ্দিন জিতমউদকে হত্যা করে। সালাহ উদ্দিন জিতমউদ ছিলেন মুসলিম ডেলিভারি ড্রাইবার এবং ফাস্ট ফুড' দোকানের মালিক। ট্র্যাই আলেকজান্ডার রেলফোর্ড তাকে তার দোকানে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে দোকানের অর্থ ও মালামাল ছিনতাই করে।
গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আমেরিকার আদালতে রায় ঘোষণার আগে মামলার শুনানির সময় সালাউদ্দিন জিতমউদের বাবা আব্দুল মুমিন সোম্বাত জিতমউদ বিস্ময়কারভাবে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেন। এ সময় তিনি বলেন-‘ক্ষমা ও উদারতা ইসলামের শ্রেষ্ঠ উপহার।’
Advertisement
গত ২৩ অক্টোবর ২০১৭ আদালত ২৪ বছর বয়সী রেলফোর্ডকে ডাকাতি ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালত তাকে নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ড অথবা সর্বনিম্ন ৩১ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার কথা।
আদালতে বিচারকের রায় পড়ার সময় ক্ষমার এ ঘোষণা দিয়ে সবাইকে বিস্ময় করে দেন আব্দুল মুমিন সোম্বাত জিতমউদ।
আব্দুল মুমিন সোম্বাত জিতমউদের বক্তব্যের ভিডিও-
আব্দুল মুমিন সোম্বাত জিতমউদ ছিলেন মার্কিন মুল্লুকের অনেক ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল। তিনি আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন। এখন তিনি পরিবার নিয়ে থাইল্যান্ডে থাকেন।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আমি শয়তানের ওপর রাগান্বিত। শয়তানকে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য দোষারোপ করি। যে শয়তান আমাদের সবাইকে বিপথগামী করার জন্য সব সময় প্ররোচনা দেয়। যে প্ররোচনায় রেলফোর্ড আমার সন্তানকে হত্যা করে।’
অতঃপর তিনি সাক্ষীর কাঠগড়া থেকে আসামির কাঠগড়ায় গিয়ে রেলফোর্ডকে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন আব্দুল মুমিন। তাঁকে বিশুদ্ধ জীবন-যাপনের উপদেশ দেন। ইসলামের আলোকিত জীবনের দাওয়াত দেন। যা তাঁকে সুন্দর আলোকিত পথে পরিচালিত করবে।
এ সময় আদালত কিছুক্ষণের জন্য মুলতবি করা হয়। বিচারক তাঁর খাস কামরায় চলে যায়। কিছুক্ষণ পর বিচারক পুনরায় এজলাসে ফিরে আসেন।
বিচারক ২৪ বয়সী আলেকজান্ডার রেলফোর্ডকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার পর সালাহউদ্দিন জিতমউদের বাবা আব্দুল মুমিন আবারো আসামির কাঠগড়ায় যান। তাকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় রেলফোর্ডও আব্দুল মুমিনকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় তাঁর চোখে পানি আসতে দেখা যায়।
আব্দুল মুমিন তাঁকে জানান, ‘মাত্র ৭ বছর দেখতে দেখতে চলে যাবে। যখন তুমি মুক্ত হয়ে বাইরে আসবে তখন তোমার বয়স হবে ৩১ বছর। তুমি সুন্দর ও পরিশুদ্ধ জীবন-যাপন কর; এমনটাই আমি চাই।
অতঃপর আব্দুল মুমিন আদালতে সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি রেলফোর্ডকে সালাহউদ্দিন ও তাঁর মায়ের পক্ষ থেকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
আদালতে রেলফোর্ড সালাহউদ্দিনের বাবাকে উদ্দেশ্য করেন বলেন, ‘আমি সেদিনের হত্যাকাণ্ড ও ঘটনার জন্য দুঃখিত। এ সময় সে তার পোশাক দিয়ে চোখের পানি মুছার এবং নিবারণের চেষ্টা করে।
এ সময় সে আরো বলে, ‘আপনি শক্তিশালী মানসিকতা সম্পন্ন উদার মানুষ। আপনার এ ক্ষমা আমার কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। আমাকে ক্ষমা করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানানো ছাড়া আমার আর কোনো ভাষা নেই, শক্তি নেই।’
এ সময় আদালতে রেলফোর্ডের মা-ও উপস্থিত ছিল। তিনিও এ ঘটনায় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
উল্লেখ্য ডে, সালাহউদ্দিন জিতমউদের মৃত্যুর আগে তাঁর মা জামিলা লিন্দা কে কলোকোটনিস জিতমউদ ২০১৩ সালে মারা যায়।
উল্লেখিত এ ঘটনা ইসলাম ও মুসলমানের উদারতা ও ক্ষমার এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার এক অনন্য নজির।
এমএমএস/আইআই